• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

শৈল্পিক হুমায়ূনের গল্প ‘কিরণ’

শৈল্পিক হুমায়ূন

  ২২ মার্চ ২০২২, ১৫:০২

শুভ ভাই, আমি আপনার কাছে একটা দরকারে এসেছি, কিরণ বলল। শুভ ভাই সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বলল, কী দরকার? ভাই, আমার একটা মেশিন (পিস্তল) দরকার। একদিনের জন্য। শুভ ভাই সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, মেশিন দিয়ে কী করবি?
- একজনকে ভয় দেখাব।
- মেশিন ছাড়াও তো মানুষকে ভয় দেখানো যায়, কিরণ?
আসলে আমি দেখতে চাই ও (কিরণের বন্ধু) মেশিন দেখার পর কেমন চমকে ওঠে! ভয় নামক জিনিসটি ওর ভেতরে কেমন ঝড় তোলে। আমি দেখতে চাই, ভয়ে ওর হার্টবিটের গতি কত বেড়ে যায়। শরীরে কেমন কাঁপুনি সৃষ্টি করে। উষ্ণ রক্ত হঠাৎ কেমন করে হীমশিতল হয়ে যায়, তা আমি দেখতে চাই।
- ভালোই বলেছিস। যেদিন লাগবে, সেদিন নিয়ে যাস।
- আচ্ছা ঠিক আছে। থ্যাংক ইউ, ভাই।
- এখন বাড়ি যা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কিরণ একটি গাছের বেদিতে বসে আছে। নূরের এখানে আসার কথা।
নূর কিরণের ছোটবেলার বন্ধু। নূরের সঙ্গে আজ কিরণের বোঝাপড়া হবে। আজ ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকবে, না-হয় শেষ হয়ে যাবে।

কিরণ বলল, নূর তোর মনে আছে আমরা দুজনে ছোটবেলায় একসঙ্গে ন্যাংটো হয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি। কাদায় একসঙ্গে লুটোপুটি খেয়েছি। ফল চুরি করে খেয়েছি।
নূর বলল, হ্যাঁ, মনে আছে। তোর মনে আছে আম চুরি করতে গিয়ে একদিন ধরা খেলাম। বাসায় বিচার এলো। তারপর সেকি পেদানিইটা না খেলাম!
কিরণ বলল, হুম। যখন স্কুলে পড়ি তখন কতদিন একসঙ্গে স্কুল পালিয়েছি।
নূর বলল, হ্যাঁ। স্কুল পালিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছি, ‘বিকল্প’ মাঠে ক্রিকেট খেলেছি। তুরাগ নদীতে গোসল করেছি।
কিরণ বলল, তোর মনে আছে, জুমার নামাজ শেষ করে ফেরার পথে একবার তোর লুঙ্গি খুলে ফেলে ভোঁ দৌড়। তুই তখন আমাকে ধরবি না লুঙ্গি ধরবি, ভেবেই পাচ্ছিলি না। বাকিসব বন্ধুরা তোকে দেখে হেসেই খুন। কিরণ বলতে বলতে হো হো হাসছে।
নূর বলল, হুম। তুই বড়ই ত্যাঁদড় ছিলি। মনে আছে, একবার তুই ক্লাসের মধ্যে হাগু করে দিয়েছিলি। সে কী গন্ধ! আমি এলাকায় এসে সব বন্ধুদের বলে দিয়েছিলাম। তাই তোকে সবাই হাগু কিরণ বলে ক্ষেপাত। হা হা হা। এ জন্য তুই আমার ওপর ভিষণ রেগে ছিলি।
(কিরণ মনে মনে বলল, সেই রাগের ঝাল আমি আজ তোর ওপর ওঠাব)। হ্যাঁ, সব মনে আছে, কিরণ বলল। কলেজে তোর জন্য একবার ছয় মাস জেল খাটলাম। তুই মুন্নাকে মেরে ওর মাথা ফাটিয়ে দিলি। পুলিশ এসে তোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল আমি গিয়ে পুলিশকে বললাম মুন্নাকে ও মারেনি। মুন্নার মাথা আমি ফাটিয়েছি এই দেখেন রক্ত। তখন পুলিশ তোকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে গেল।
নূর বলল- হ্যাঁ, মনে আছে। এ জন্য আমি তোর কাছে চিরঋণি।
(কিরণ মনে মনে বলল আজ সেই ঋন শোধ করবি তুই)। নূর আমি তোকে এখানে এনেছি একটা কথা বলার জন্য। আমি জানি তুই নীলিমাকে পছন্দ করিস। আমিও পছন্দ করি আমরা দুজনেই ওকে পছন্দ করি। আমি চাই না ওর জন্য আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হক। দেখ তুই যদি মনে করিস আমি তোর অনেক উপকার করেছি, তাহলে এবার আমার একটা উপকার কর, নীলিমাকে আমার হতে দে।
নূর বলল, তুই আমাকে এ জন্য এখানে ডেকে এনেছিস? এবার বুঝতে পেরেছি তুই কেন আমাকে এখানে ডেকে এনেছিস। শোন, একটা মেয়েলি বিষয় নিয়ে তোর আর আমার বন্ধুত্ব নষ্ট হোক, এটা আমি চাই না। তুই হয়তো জানিস না নীলিমা আমাকে ভালোবাসে।
কিরণ বলল, ও তোকে ভালোবাসে না। ভালোবাসতে পারে না। ও আমাকে ভালোবাসে।
নূর বলল, তুই কেমন করে বুঝলি ও তোকে ভালবাসে?
(কিরণ রাগ চেপে রেখে মনে মনে ভাবলো নূরকে এভাবে নিলিমার কাছ থেকে দূরে সরান যাবে না। অন্যভাবে বলতে হবে)। কিরণ বলল, আমি নিলিমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছি।
নূর বলল, মিথ্যে কথা।
কিরণ বলল, নীলিমার হাঁটুর ওপরে একটা কাটা দাগ আছে। ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে কেটে গিয়েছিল।
নূর বলল, আমি বিশ্বাস করি না।
কিরণ বলল, তোর বিশ্বাস-অবিশ্বাসে আমার কিছু যায় আসে না।
নূর বলল, তুই আমাকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব কথা বলছিস। যাতে আমি নিলীমার পথ থেকে সরে দাঁড়াই। দেখ তুই যত যা-ই বলিস না কেন, আমি নিলিমাকেই ভালোবাসি।
কিরণ নূরকে আস্তে ঠেলে দিয়ে (একটু রেগে) বলল, দেখ, তুই একটু বেশি করছিস।
নূর কিছুটা রেগে গিয়ে কিরণকে জোরে ঠেলে দিয়ে বলে, তুই বেশি করছিস। নিলিমাকে পাওয়ার জন্য তুই পাগল হয়ে গেছিস।
কিরণ এবার রেগে গিয়ে কোমর থেকে পিস্তল বের করে নূরের কপালে ঠেকিয়ে বলল, হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি। ভালোবাসার পাগল।
নূর কিরণের হাতে পিস্তল দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে শীতল হয়ে যায়। এটা কিরণ কী করছে! আসলেই ও পাগল হয়ে গেছে। নূর কাপা কাপা গলায় বলল, নিলিমা যে তোকে ভালোবাসে, তা কখন বলেছে? আচ্ছা, ঠিক আছে নিলিমা যদি বলে ও তোকে ভালোবাসে তাহলে ও তোর। আর যদি বলে ও আমাকে ভালবাসে তাহলে ও আমার। ঠিক আছে? আমি নিলিমাকে এখানে আসতে বলেছি। তোর সঙ্গে দেখা করার আগে আমার সঙ্গে নিলিমার কথা হয়েছিল। ভেবেছিলাম, তোর সঙ্গে কথা শেষ করে ওর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাব। ও এখনই চলে আসবে। ওই তো নিলিমা চলে এসেছে।
নিলিমা কিরণের হাতে পিস্তল দেখে অবাক হয়ে যায়।
নিলিমা বলল, কিরণ তোমার হাতে পিস্তল কেন?
নিলিমার কথা শেষ না হতে নূর নিলিমাকে বলে, সে অনেক কথা। তার আগে বলো, তুমি কাকে ভালোবাস? আমাকে নাকি কিরণকে?
নিলিমা একবার কিরণের দিকে একবার নূরের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিরণের মতো একজন বন্দুকধারীকে নয়।
এ কথা শোনার পর মাথা খারাপ হয়ে গেল কিরণের। নিলিমা এটা কী বলল! কিরণ কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। কিরণ নূরের মাথা থেকে পিস্তল সরিয়ে নিয়ে নিজের ডান কানের ওপরে মাথায় ঠেকায়। কিরণ আর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না। সে আঙুলের সমস্ত শক্তি দিয়ে পিস্তলের ট্রিগার চেপে দিলো। সমস্ত যন্ত্রণা থেকে সে নিজেকে মুক্তি দিলো।

এ ঘটনার এক সাপ্তাহ যেতে না যেতেই নূর-নিলিমার বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ে হবার সাত-আট মাস পর নীলিমার ফুট ফুটে একটি ছেলে হয়। নাম রাখা হয় কিরণ। নূর কিরণকে নিলিমার কোলে দিতে দিতে বলল এই নাও তোমার কিরণকে। কিরণকে তুমি আজীবন আগলে রেখো, ভালোবেসো।

নূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, কিরণ, মরে গিয়েও হারিয়ে দিলি আমাকে।’

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আক্ষেপের গল্পে লুকিয়ে নারী ক্রীড়াবিদদের প্রাপ্তির ক্ষুধা
জেলখানার গল্পে বেরিয়ে এলো খুনের রহস্য
যেখানে সম্মান নেই, সেখানে যেতে নেই : পরীমণি
ক্যাম্পাসে নির্যাতিতদের গল্প তুলে ধরবে ‘সোচ্চার’
X
Fresh