• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন’

আরটিভি নিউজ

  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৫২
“শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন”
মো. শাহ জালাল মিশুক

‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’- বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই উক্তিটি কেবল প্রবাদের মধ্যেই বিরাজমান। কারণ এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার-ঘাট, খোলা কিংবা বাণিজ্যমেলা খোলা ছিল সেই স্বাস্থ্যবিধির আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেনও খোলা রাখা যায় না? পাশাপাশি এটাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেই যে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ হয়ে গেল তা কিন্তু না। কারণ, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই একটি পরিবারের সদস্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে হয়তো সেই শিক্ষার্থী বাড়িতে থাকবে, কিন্তু তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ঠিকই বাইরে যাচ্ছেন। সেখান থেকেও অসুস্থ হতে পারে। সুতরাং শিক্ষার্থীরা বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে থেকেও নিরাপদ নয়।

ইতোমধ্যেই ইউনিসেফ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় স্কুল বন্ধ রাখে ১৪টি দেশ এবং যার শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যানের প্রভাব বেশ ভয়াবহ ও বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, প্রায় দেড় বছর পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই এর তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনেক শিক্ষার্থীই ফেরেনি শ্রেণিকক্ষে। দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, বেড়েছে শিশুশ্রম।

বাংলাদেশকে আঘাত করা করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সহজে বলা যায়, আগামী দুই কিংবা তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই আগামী দুই-তিন মাস এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে আবারও একটা বড় সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওমিক্রনের প্রভাবে সরকারি আদেশে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই ছুটি না কাটতেই নতুন করে দেওয়া হলো আরও দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিশ। তবে ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে শুধু ওই প্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকবে। পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে বাইরে চলাফেরা করবে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শুধু যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ রাখা হয় আর সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে তাহলে কি লাভ হবে আমাদের?

অবশ্যই বাংলাদেশের উক্ত বিষয়াবলী সম্পর্কিত পলিসি মেকিং লেভেলে যারা থাকেন, বিশেষত যারা এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকেন তারা অনেক বিজ্ঞ। অনেক ভেবে চিন্তেই হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফায় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে পুনরায় দুই সপ্তাহ বন্ধ করার ক্ষেত্রে ঠিক কোনোদিক থেকে ভেবেছেন সেটা অনেকাংশেই আমার বোধগম্য নয়। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে সবকিছুই এখনও সচল রাখা হয়েছে। যেমন, গণপরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত। বাণিজ্য মেলাও চলছে পুরোদমে। দেশের সব ছোট-বড় শপিং মল বা বিপণি বিতানে নিয়মিত কেনাকাটা চলছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় জনসমাগম কিছুটা কমলেও খোলা রয়েছে সব কিছু। ঢিলেঢালাভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। তারপরও বন্ধ হয়নি বিপণি বিতান বা বিনোদন কেন্দ্র। এখনও দেশের বহু মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়নি।

অন্যদিকে সশরীরে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করে এখন থেকে সব কিছু যদি পূর্বের ন্যায় দীর্ঘদিন অনলাইনেই সম্পন্ন করার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের পেক্ষাপটে এটা আরেকবার ভুল হবে। বর্তমান প্রজন্ম এবং আগামীর প্রজন্মকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। কারণ, গত এক বছরে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অর্থাৎ পাঠদান সম্ভব হলেও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেকেই বলবেন যে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে আমিও বলব হয়েছে কিন্তু সেটা সিকি পরিমাণ, বাকি জায়গা গুলোতে নেওয়া হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট। এটাকে মূলত পরীক্ষা বললে ভুল হবে। গত এক বছরে অনলাইন ক্লাসের স্বাদ শিক্ষার্থীরা খুব ভালোমতোই পেয়েছে। ডিভাইস না থাকা, নেটওয়ার্ক না থাকা, ডাটা না থাকা, পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিবেশ না থাকাসহ নানান প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সব আবাসিক হল। ওমিক্রনের মধ্যেই খোলা আবাসিক হলে অবস্থান করছে বহু শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও শিক্ষাঙ্গনের আশপাশে গড়ে ওঠা ব্যক্তি মালিকানাধীন ছাত্রাবাসে অবস্থান করছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তারা একসাথে এসব আবাসিক ছাত্রাবাসে বসবাস করছে। একই ডাইনিংয়ে দলবেঁধে খাওয়া-দাওয়া করছে। দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করছে। একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে।

এসব ওমিক্রনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে ওমিক্রনের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে অজুহাতে ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া মোটেই বোধগম্য নয়। যারা মনে করেছিলেন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেই শিক্ষার্থীরা বাসায় অবস্থান করবে, তাদের সেই আশা মোটেই পূরণ হয়নি। শিক্ষার্থীরা শপিংয়ে যাচ্ছে, সিনেমা হলে যাচ্ছে, টি-স্টলে আড্ডা দিচ্ছে, সুযোগ মতো বাবা-মায়ের সাথে পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে যাচ্ছে। কোনো কিছুই থেমে নেই। থেমে গেছে শুধু শিক্ষা।

মোদ্দাকথা হলো, করোনা মহামারি পেরিয়ে বিশ্ব যখন নতুন সূর্য দেখবে, এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ হয়তো তখন অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ওমিক্রন মোকাবিলার কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বরং দেশের ৭০-৮০ ভাগ মানুষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হতে পারে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী সমাধান, যা অতীব জরুরি। যেখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভ্যাকসিনের আওতাভুক্ত, সেখানে সেশনজট রোধে ও মাদকাশক্তির ঝুঁকি এবং আত্মহত্যা থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখতে অতিদ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরুর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: মো. শাহ জালাল মিশুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে জিপের ধাক্কা, বিদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস উদযাপনের নির্দেশ
বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন
ইসরায়েলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
X
Fresh