আবুধাবির গ্র্যান্ড মসজিদ, স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম মসজিদ শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। আবুধাবিতে অবস্থিত এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনক শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ানের নামে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পাওয়া আরব আমিরাত এখন ছোট বড় নানান স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শনের দেশ। হাতে গড়া প্রত্যেকটি স্থাপনা চোখ জুড়িয়ে দেয়। তার মধ্যে অন্যতম এই গ্র্যান্ড মসজিদ।
মুসলিম ধর্মালম্বীদের জন্য তো বটেই, মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান নানান ধর্ম-বর্ণের হাজারো মানুষ। এখানে জিজ্ঞেস করা হয় না আপনি কোন ধর্মের। সবার জন্যই এখানে সমান সুযোগ। এক নজর দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। মুসিমদের জন্য বাড়তি পাওয়া নয়নাভিরাম এই মসজিদে নামাজ পড়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সংবাদ সংগ্রহের কাজে এসে দেখা হয়ে গেল বিশ্ববিখ্যাত এই মসজিদটি।
বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯-এর কারণে অনেক নিয়ম-কানুন যোগ হয়েছে মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে। প্রবেশ পথেই দেখাতে হইয়েছে ৭২ ঘন্টার মধ্যে করানো কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সনদ আর ছয় মাসের মধ্যে দেওয়া কোভিড ভ্যাকসিনের সনদ।
এসব আনুষ্ঠানিকতা সারলেই মিলবে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি। ভেতরে প্রবেশ করতেই জুড়িয়ে যাবে শরীর। দেখা মিলবে দেশি-বিদেশি নানান পণ্যের শোরুম। তবে অগ্রাধিকার স্থানীয় স্যুভেনির দোকানের।
যতদূর চোখ যায়, সবখানেই দেখা মিলবে দেশটির ঐতিহ্য আর শেখদের নানান ছবি। মূল মসজিদের দেখা পেতে আপনাকে পেরুতে হবে প্রায় আধ কিলোমিটারের মতো পথ। এই পথটা যেন ক্লান্তিকর না হয় এ জন্যও রয়েছে সব ব্যবস্থা।
আপনি চাইলে স্ক্লেটরে করেও যেতে পারবেন কিংবা গলফ কার্টে করেও যেতে পারবেন মসজিদের দিকে। লম্বা পথ পেরিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেই জুড়িয়ে যাবে চোখ। কতই না নিখুঁত সৃষ্টি!
১৯৯৬ সালে ৩৮টি ঠিকাদার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার নির্মাণকর্মীর নিরলস শ্রমে ২০০৭ সালে এসে শেষ হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। উদ্বোধনের পর থেকেই উন্মুক্ত করা হয় পর্যটকদের জন্য।
মজিদটির চার কোণে চারটি মিনারে রয়েছে পুষ্পশোভিত নকশা। প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ৩৫১ ফুট। এই নকশা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মার্বেল পাথর, মূল্যবান স্ফটিক পাথর ও মৃৎশিল্প। এসবের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আরবের ২০০ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার নমুনা।
মসজিদটিতে রয়েছে শ্বেত মার্বেল দিয়ে মোড়ানো ছোট-বড় সাতটি আকারের ৮২টি গম্বুজ। মসজিদের সর্ববৃহৎ গম্বুজেটি উচ্চতা ২৭৯ ফুট। নামাজ পড়ার জায়গায় রয়েছে ইরানের বিখ্যাত শিল্পী আলী খালিদির ডিজাইনে তৈরি করা বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা। গালিচাটি ৬০ হাজার ৫৭০ বর্গ ফুট এবং এই কার্পেটের ওজন ৩৫ টন; যা তৈরি করতে সময় লেগেছিল দুই বছরের বেশি। এ ছাড়াও রয়েছে স্ফটিক স্বচ্ছ লাখ লাখ পাথরের তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতিটি।
মসজিদটির আঙিনা তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার বর্গমিটার মার্বেল মোজাইক দিয়ে; যা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আয়তনের মার্বেল মোজাইক। যার খোপে খোপে রয়েছে রং-বেরঙের ফুলের বাগান ও পানির ফোয়ারা।
এখানে রয়েছে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা কক্ষ। দুটি প্রধান কক্ষের ধারণক্ষমতা ৭ হাজার ও ১ হাজার ৫০০ জনের হলেও ভেতর বাইরে মোট ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন একত্রে; যা ছাড়িয়ে যায় জুমা ও ঈদে। এ সময় দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লি আদায় করতে পারেন নামাজ।
স্থাপত্যের এই অনন্য নিদর্শন আপনাকে বারবার নিয়ে যেতে চাইবে আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদের আঙিনায়।
এমআর/টিআই
মন্তব্য করুন