• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নানামুখী সঙ্কটে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১২ আগস্ট ২০২১, ১৩:১৪
নানামুখী সঙ্কটে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা
ছবি: আরটিভি

কারো পাসপোর্ট নাই, কারো ভিসা, কেউবা ধরপাকড় থেকে বাঁচতে বনে জঙ্গলে পালিয়ে আছেন, কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ অসুস্থ আবার কেউ খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন। এমন নানামুখী সমস্যায় মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সমস্যার সমাধান খুঁজতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপও চান তারা।

কুয়ালালামপুরের সন্নিকটে কাজাং এ ১৫ থেকে ২০ জন বাংলাদেশি খাবারের সঙ্কটে রয়েছেন। তাদের সহযোগীতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পাশে থাকা সহকর্মীরা। যারা আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল তারা সবাই মিলে বাকিদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করছেন।

পুরো মালয়েশিয়া জুড়ে খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। যাদের বেশির ভাগেরই দেখার কেউ নেই। লকডাউনের শর্ত মেনে কর্মস্থল খুলছে ঠিকই কিন্তু ছাঁটাই হচ্ছেন অনেকে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মীদের অনেকেই খাওয়া থাকার সুযোগ বা বেসিক বেতন পেলেও বাকিরা কোনো সুযোগ সুবিধাই পাচ্ছেন না।

এছাড়া পাসপোর্টের সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। করোনার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় মাসে পাসপোর্ট মিললেও এখন তাও মিলছে না। বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, গেলো ৯ মাসে ২ লাখ ৯ হাজার ৫২৬টি নবায়নকৃত পাসপোর্ট প্রবাসীদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন তারা। দেশের সার্ভার জটিলতায় সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে আসতে সময় লাগছে বলেও জানান তারা।

তবে প্রবাসীদের অভিযোগ পাসপোর্ট কুয়ালালামপুরে পৌঁছালেও তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না। শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট কিছু পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট সেবা চলছে যার ফলে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ছে। অনলাইন পদ্ধতিতে পাসপোর্ট ডেলিভারি নেয়ার এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নয় যার ফলে ভোগান্তি বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়ায় ভিসা নবায়ন, রিক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়ায় বৈধতা কিংবা দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়ায়ও অংশ নিতে পারছেন না হাজারো মালয়েশিয়া প্রবাসী।

লকডাউনে ঘরবন্দি সময় পারের মধ্যেও রয়েছে ধরপাকড়ের আতঙ্ক। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে অভিবাসন বিভাগের কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছেন অভিবাসীরা। প্রতিদিনই চলছে অভিযান। আর এসব অভিযানে আটক হচ্ছেন কাগজপত্রবিহীন থাকা প্রবাসীরা। অভিবাসন বিভাগের এসব অভিযান থেকে বাঁচতে অনেকেরই ঠাই নিতে হচ্ছে বনে জঙ্গলে।

মালয়েশিয়া সরকারের সহজ শর্তে দেশে ফিরে যাওয়া প্রবাসীদের জন্যও দুর্ভোগের অন্ত নেই। দেশে ফিরতে তাদেরকে পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্বিগুন বা তিনগুন বিমানভাড়া গুনতে হচ্ছে। দেশে ফিরে হোটেল কোয়ারেন্টাইন বাবদ দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। চাকুরি হারিয়ে, আর্থিক অসচ্ছলতায় পড়ে দেশে ফিরে যাওয়া বা ফেরার অপেক্ষায় থাকা এসব প্রবাসীদের জন্য অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ও হোটেল কোয়ারেন্টাইনের অর্থ যোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

সাধারণ প্রবাসীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মধ্যম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রবাসীরাও রয়েছেন বিপাকে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন কিংবা বিকল্প চিন্তা করছেন। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করা একরকম দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আর যারা পর্যটক নির্ভর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের অবস্থা একেবারেই নাকাল। স্থানীয়রা সরকারিভাবে কিছু সুযোগ-সুবিধা পেলেও অভিবাসীরা তা থেকে বঞ্চিত।

দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় আছেন এমন প্রবাসীরা বলছেন প্রবাসীদের এই দুঃসময়ে সরকারের উচিত ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো। যারা দেশে ফিরে যেতে চায় তাদেরকে সরকারিভাবে ফিরিয়ে নেয়া এবং যারা সমস্যায় রয়েছেন তাদের সহযোগিতা করা। একই সঙ্গে দুদেশে'র উচ্চ পর্যায়ে আলোচনাও প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

তবে আশার বানী হয়ে এসেছে দুটি ভ্যাকসিন দিলে চলাচলে শিথিলতার ঘোষণায়। যদিও প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিনে'র এ ঘোষণার পরিপূর্ণ সুবিধা পেতে দেশটির সংক্রমণের সংখ্যা কমতে হবে। করোনা সংক্রমণের অধিক ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলো প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে উত্তোরণ ঘটলেই কিছুটা স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি। যদিও জনজীবন স্বাভাবিক না হলে চলমান এ সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রবাসীরা।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৬
মালয়েশিয়া প্রবাসীদের জন্য সুসংবাদ
২৪ ঘণ্টায় ১৬ জনের করোনা শনাক্ত
আরও ১৫ জনের করোনা শনাক্ত
X
Fresh