ইবির প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাটি যেন মরণফাঁদ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের রাস্তাটি যেন শিক্ষার্থীদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোনও বিকল্প রাস্তা না থাকায় মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয় শিক্ষার্থীদের।
ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক হতে পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা একদম বেহাল। রাস্তার ভগ্নদশার কারণে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও রাস্তার দুই পাশে থাকা স্পিডব্রেকারের অবস্থাও নাজুক।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে ২৪ ঘণ্টাই ট্রাক, বাস, লেগুনা, সিনএনজিসহ ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করে।
অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক হতে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের জন্য মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ রাস্তায় যশোর বেনাপোল হতে দিনে-রাতে প্রায় কয়েক হাজার মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। এছাড়া যাত্রীবাহী বাসের চাপও কম নয়।ফলে দিন দিন এই সড়কের অবস্থা আরও নাজুক হচ্ছে।
রাস্তার এই ভগ্নদশার পাশাপাশি ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস হতে আধা কিলোমিটার রাস্তা যেতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস ওঠে।
অতিরিক্ত ধুলোবালিতে শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগও দেখা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যাত্রী ও এলাকাবাসীরাও এ দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। এছাড়াও রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা হোটেল ও দোকানগুলোও ধুলোবালিতে নিমজ্জিত। এসব ধুলোবালি খাদ্যের সঙ্গে মিশ্রিত হচ্ছে। তবুও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের এ খাবার খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. এস এম নজরুল ইসলাম আরটিভি সিউজকে বলেন, ‘অতিরিক্ত ধুলোবালির কারণে শ্বাসকষ্টের প্রদাহসহ চর্মরোগ ও চোখের সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও রাস্তার পাশে থাকা ধুলোবালিযুক্ত খাবার খেলে ফুড পয়জন হতে পারে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. সুমন আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, চলতি মাসে ঝিনাইদহ মহাসড়কে পাঁচটি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
চালকের অসর্তকতা আর ভাঙাচুরা রাস্তার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার খবরে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ শুভ আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই মহাসড়কে বাস ও ট্রাক নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করে।তাই দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে সবসময় ক্যাম্পাস ও বাজারে যেতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে যে স্পিডব্রেকার ছিলো সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে গাড়ি চালকরা বেপরোয়াভাবে রাস্তাটি অতিক্রম করে। কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধানোর দাবি করছি।’
এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির আধা কিলোমিটার ভাঙাচোরায় আমরা অতিষ্ঠ। এই আধা কিলোমিটার রাস্তায় কয়েক দিন পর পর দুর্ঘটনা ঘটে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমনই আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এই সড়কে নিয়মিত ট্রাক চালান আব্দুস সাত্তার। তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, রাস্তার এই অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত ট্রাকের টায়ার বিস্ফোরিত হয়।এছাড়াও চাকার স্কেলও ভেঙ্গে যায়। টায়ার বিস্ফোরিত হলে নিজেদের দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পথচারীদেরও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রাস্তা মেরামতের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আমরা নতুন প্রকল্পের পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ বছরেই হয়তো কাজ করব। এখন চলাচল উপযোগী করার জন্য আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে কিছুটা মেরামত করা হবে। যাতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কম হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপদের সাবেক ও বর্তমান প্রকৌশলীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছি।সংস্কারের আশ্বাস দিলেও তারা বিষয়টির সমাধান করেনি। যার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
জেবি
মন্তব্য করুন