• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঘর আর বারান্দার এক চিলতে সবুজে মিলবে অক্সিজেন

সাদিয়া কানিজ

  ০১ আগস্ট ২০২১, ১৬:০৪
রকমারি গাছ

ইট-কাঠের এই শহরে মন ভালো রাখার অনুষঙ্গের স্বল্পতা সব সময়ই বিদ্যমান। সেই সঙ্গে ধুলাবালি, যানবাহনের কালো ধোঁয়ার মাঝে শুদ্ধ বায়ুর বড়ই অভাব। আর ঠেসে থাকা দালানের ভিড়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস পাওয়া তো অকল্পনীয়। এদিকে করোনাকালে দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, অবসরে কি করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না। খুব সহজেই বারান্দা আর ঘরে কিছু গাছ লাগিয়ে এসব কিছুর কিছুটা সমাধান পাওয়া সম্ভব। তবে গাছের সঠিক পরিচর্যা ও সজ্জা শৈলীর উপরই নির্ভর করবে আপনার বারান্দা আর ঘর কতটা নান্দনিকতা পাবে।

রাজধানীতে যেহেতু জায়গার স্বল্পতা আর যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তাদের বেশিরভাগ মানুষই ছাদের সুবিধা পান না। গাছ লাগাতে তাদের জন্য বারান্দা আর ঘরই ভরসা। স্বল্প যত্নে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় ইনডোর প্লান্ট। তবে শুধু গাছ লাগালেই চলবে না। জানতে হবে কোন গাছ আপনার ঘরে রাখলে কি সুবিধা পেতে পারেন। কিভাবে নিতে হবে ইনডোর প্লান্টের যত্ন। এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক শখের গাছের উপকারিতা আর যত্ন সম্পর্কে-

স্নেক প্ল্যান্ট : বাতাস পরিশুদ্ধ করতে এই গাছের তুলনা হয় না। স্নেক প্লান্ট রাতে অক্সিজেন ছাড়ে আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। তাই ঘরের মধ্যে এই গাছ থাকলে উপকার পাওয়া যাবে রাতেও। দেখতেও বেশ সুন্দর, তাই বাসস্থানের শোভা বাড়াতেও এর কোনো জুড় নেই।

অ্যালোভেরা : সর্বগুণের অধিকারী অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। অল্প কথায় এর গুণের বর্ণনা করা খুব শক্ত। তবে অনেকেই জানেন না এর গুণ সম্পর্কে। বাতাস সুস্থ রাখতে আমেরিকার নাসার অন্দরেও রাখা রয়েছে এই গাছ। এই গাছ থেকেও রাতে অক্সিজেন পাওয়া যায়। এছাড়া ত্বক ও চুল চর্চায় এর ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এর খুব বেশি পরিচর্যারও দরকার হয় না। সিরামিক্সের টবে রেখে পড়ার টেবিলে রাখলে দেখতে আপনার টেবিলের সৌন্দর্য যেমন বাড়বে ঠিক তেমনই মনও ভালো হবে।

অর্কিড : এর সৌন্দর্যের তুলনা নেই। বেডরুমে বিছানার পাশে অর্কিড রাখলে ঘরের সৌন্দর্যই পালটে যায়। সাধারণত গাছ যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অক্সিজেন তৈরি করে, তাতে সূর্যালোক প্রয়োজন হয়। তাই রাতে তা সেই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। অর্কিডও রাতে অক্সিজেনই ত্যাগ করে। ফলে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে অর্কিড। রাতেও আপনার ঘর থাকে অক্সিজেনে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন রঙের ফুল হওয়ায় সবার কাছে অর্কিডের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। রোজ অল্প করে পানি স্প্রে আর মাঝে মাঝে সার গুলানো পানি স্প্রে করলেই এর থেকে সুন্দর সুন্দর ফুল পেতে পারেন অনায়াসেই।

ব্যাম্বো প্লান্ট : বাতাসের দূষিত কণা টোলুইন, ক্ষতিকারক টক্সিন বেঞ্জিন ও ফর্ম্যালডিহাইডকে শোষণ করে ঘরে অক্সিজেন লেভেল প্রচুরভাবে বাড়ায় ব্যাম্বো বা এই বাঁশ গাছ। নাসার গবেষকদের মতে এই গাছ মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে ঘরের বাতাসের প্রায় ৬০ শতাংশ টক্সিন এবং ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত দুর্গন্ধ শুষে নিতে পারে। ড্রইং রুম বা শোবার ঘর সাজাতে এর তুলনা হয় না। মজার ব্যাপার হলো এই গাছ পানিতেও রাখতে পারেন। কোনো স্বচ্ছ পাত্রে রাখলে এর শিকর পর্যন্ত দেখা যায়।

স্পাইডার প্ল্যান্ট : গাছটির বিশেষত্ব হলো খুব কম আলোতেও এরা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। ফলে অক্সিজেনের জোগান অব্যাহত রাখে। একটা গাছ প্রায় ২০০ বর্গ মিটার এলাকার বাতাস পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারে। সেই সঙ্গে এই গাছ পড়ার টেবিল বা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ।

মানিপ্লান্ট : সবচেয়ে কম যত্নে বেড়ে ওঠা একটি জনপ্রিয় গাছ মানিপ্লান্ট। যারা বাইরে সারাদিন কাজ করেন তাদের পক্ষে গাছকে সময় দেয়া সম্ভব নয়, অথচ ঘর সাজাতে চান গাছ দিয়ে। তাদের জন্য এই গাছ অতুলনীয়। অযত্নেই বেড়ে ওঠে এই গাছ। অতি সহজেই সজীবতা ছড়ায় চারপাশে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গাছ আছে, যা অনায়াসেই ইনডোরে রাখতে পারেন।

টব বাছাই : বারান্দার জন্য মাটি, প্লাস্টিক ও সিরামিক্সের টব ব্যবহার করা যায়। ঘরের গাছের ক্ষেত্রেও তাই। তবে ঘরে মাটি আর সিরামিক্সের টব বেশি সুন্দর দেখায়। গাছের ধরন অনুযায়ী টব নির্বাচন করতে হবে। একেক গাছের জন্য মাটির পরিমাণ একেকরকম হয়। ফলে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে টব কিনতে হবে।

পানি-আলো : ইনডোরপ্লান্টে যেহেতু খুব বেশি রোদ পায় না তাই এতে খুব বেশি পানিরও দরকার হয় না। বৃষ্টি হলে গাছে পানি দেওয়া যাবে না। মনে রাখা ভালো, টবের মাটি যেন খুব শুষ্ক কিংবা একেবারে ভেজা না থাকে। একেবারে ভেজা থাকলে শিকর পচে যেতে পারে। তবে গাছের জন্য প্রাকৃতিক আলো, বাতাস খুবই উপকারী। খোলামেলা জায়গায় থাকলে গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। তাই ঘরের এমন স্থানে গাছ রাখতে হবে যেন ঠিক মতো আলো-বাতাস পায়।

সার : বারান্দার গাছেও মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে সার দিতে হয়। জৈব সার মাসে অন্তত ১ বার দিতে পারেন। ব্যবহৃত টি-ব্যাগ থেকে চা পাতা, ডিমের খোসা গুড়া করে গাছের গোঁড়ায় ব্যবহার করতে পারেন। তা জৈব সারের কাজ করে। কেনার চেয়ে বাসায় বানানো সার গাছের জন্য বেশি উপকারী।

এসকে/এসআর/

মন্তব্য করুন

daraz
  • গৃহসজ্জা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh