• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

স্কুলে ব্যঙ্গ-বিরূপ আর উপহাস থেকেই কিশোর-কিশোরীর মৃ’ত্যু

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ০৮ জুলাই ২০২১, ১৯:৩৩
প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকায় অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যুর পর কিশোরের পরিবার থেকে অভিযোগ করেছে- স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের দ্বারা বুলিয়িং-এর শিকার হওয়ায় এমনটা হয়েছে। বুধবার (৭ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হলে তা অনেক মানুষ শেয়ার করেছেন। অনেকে সেখানে বুলিয়িংয়ের মতো ইস্যুতে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

কিশোরের বাবা মো. ফজলুর করিম বলেছেন, ছেলের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হওয়ায় স্কুলে তাকে প্রায়ই বুলিয়িং ও উপহাসের শিকার হতে হতো। এ বিষয়ে স্কুলে কখনো অভিযোগ করেননি তারা। এখনো তারা বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ জানাতে চান না। কিশোরের পরিবার থেকে চায়- স্কুলে বুলিয়িং বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকার যেন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়।

যা হয়েছিল : কিশোরের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৫ জুন রাতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিউমোনিয়া নিয়ে তাদের ছেলেকে ভর্তি করা হয়। পরদিন রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

কিশোরের বাবা মো. ফজলুল করিম বলেছেন, ২০২০ সালের জুন-জুলাইতে ছেলের ওজন ছিল ৯৩ কেজি। জুলাই থেকে সে খাবার নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। ফলে ডিসেম্বরে ওজন দাঁড়ায় ৬০ কেজিতে। তখন মনে হয়েছিল স্বাভাবিকভাবে ওজন কমেছে তার। জানুয়ারির শেষ দিকে শারীরিক কিছু পরিবর্তনও দেখা যায় ছেলের মধ্যে। পায়ের গোড়ালি ফুলে গিয়েছিল, স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য হারায় এবং প্রায়ই সে অসুস্থ হতো।

ফেব্রুয়ারিতে ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। সেখানে ছেলে জানায়, সে ইন্টারনেট থেকে জনপ্রিয় একটি ডায়েট প্রোগ্রাম অনুসরণ করে তার ওজন কমাচ্ছিল। তখনই তার মানসিক পরিবর্তন হচ্ছিল।

কিশোরের বাবা বলেছেন, ছেলে ডাক্তারকে বলেছে কোনো বেলায় সামান্য বেশি খাবার খেলে বাথরুমে বমি করে ফেলতো। তবে বিষয়টি আমরা কেউ খেয়াল করিনি। ছেলে তখন খেতে ভয় পেত, যদি তার ওজন বেড়ে যায়। ওজন বেড়ে গেলে তাকে স্কুলের সবাই আবার খেপাবে এমন ভয় চেপে বসেছিল বলেও ডাক্তারের কাছে জানিয়েছিল ছেলেটি।

পরে চিকিৎসকের পরামর্শে একইসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডায়েটেশিয়ান, সাইেকালজিস্ট এবং সাইক্রিয়াটিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হয় ছেলেকে। তবে ততদিনে ছেলেটির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একদমই কমে যায়। মে মাসের দিকে তার ওজন দাঁড়ায় ২৯ কেজিতে। চিকিৎসকরা বলছিলেন, অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা নামক একটি অসুখে ভুগছে ছেলেটি।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এনএইচএস বলছে, অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা খাবার সংক্রান্ত একটি ব্যাধি। এটি একজন ব্যক্তির মধ্যে মানসিক সমস্যাও তৈরি করে থাকে। যিনি এ রোগে আক্রান্ত হন তিনি না খেয়ে থাকে বা প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়ে ওজন কমাতে চান এবং সবসময় ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে থাকেন।

এদিকে ছেলেটির নিয়মিত চিকিৎসা এবং মনোবিদের সহায়তায় ওজন সামান্য বাড়লেও জুনের শেষ দিকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় সে। সেই প্রেক্ষাপটেই ২৫ জুন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।

স্কুলে ব্যঙ্গ-বিরূপ আর উপহাস : পরিবারের অভিযোগ, বয়ঃসন্ধির সময় (১১-১২ বছর) থেকে ছেলেটিকে স্কুলে বাড়তি ওজনের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন ব্যঙ্গ ও উপহাসের শিকার হতে হতো। মাঝে মধ্যে সে বাড়িতে এসে জানিয়েছে বিষয়টি। ছেলের বাবা বলেছেন, গত বছর দুয়েক ধরে ছেলেটি প্রায়ই স্কুলে যেতে চাইতো না। স্কুলে যাওয়ার আগে বা পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়তো। ভেবেছি স্কুলে যেতে চায় না তাই হয়তো এমন করছে। আবার কখনো স্কুলে গিয়েও অসুস্থ হতো। স্কুল থেকে আমাদের ফোন করে বলা হতো তাকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু ছেলে কোচিংয়ে যাওয়ার আগে এমন করতো না।

ছেলে যে বুলিয়িং-এর জন্য স্কুলে যেতে চায় না- বিষয়টি বুঝতে অনেক সময় লেগেছে পরিবারের।

স্কুল যা বলছে : মারা যাওয়া কিশোর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। স্কুলের ওই শাখার প্রধান সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, বুলিয়িং-এর অভিযোগ সম্পর্কে তারা কখনো কিছু জানতেন না। ছেলেটির ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি ছিল এটা সত্যি। তবে এর জন্য তাকে কেউ খেপাচ্ছে বা কথা শোনাচ্ছে তা আমরা শুনিনি। কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-ছাত্রদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতাম আমরা। সূত্র : বিবিসি বাংলা

এসআর/

মন্তব্য করুন

daraz
  • পরামর্শ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সরকার রোজাদারদের উপহাস করেছে : রিজভী
X
Fresh