ভালোবাসায় সাজুক নব দম্পতির ঘর
বিয়ে! একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই যে কতগুলো নতুন সম্পর্কের আলোড়ন ঘটে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভালোবাসা, বিদায় আর বরণের এক রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সৃষ্টি হয় এই বিয়ের অনুষ্ঠানে। .
এ রোমাঞ্চকর মুহূর্তের আভাস ধরে রাখতে যে ঘরে থাকবেন নব দম্পতি, সেটি হওয়া চাই পরিপাটি। এ জন্য আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতে হয় সবকিছু।
তাই সব হবু বর-কনের উচিত যথাসম্ভব নিজেদের আনুষঙ্গিক কাজগুলো আগে থেকেই করে রাখা।
মেয়েদের কিছু নিজস্ব গোছগাছ তো আছেই, সঙ্গে সঙ্গে ছেলেদের অনেক কিছুই সঙ্গীর সঙ্গে পরামর্শ করে গুছিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে রুমের পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। রুমের বিছানা থেকে শুরু করে পর্দা, আলমারি, বাথরুম, কার্পেট, পাপোশ, ফ্যান যা আছে সব নতুনভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। এখানে নতুনভাবে সাজানো মানে নতুন করে কিনে ফেলার কথা নয়। বরং, পুরনোকেই নতুন করে উপস্থাপন করা যায়। শুধু প্রয়োজন যথাযথ ইচ্ছা আর সঙ্গে হালকা কিছু সংযোজন বা পরিবর্তন।
খুব স্বাভাবিক একা বেড়ে উঠা একটি ছেলের রুম আর বিয়ের পরবর্তী সময়ে দু’জনের একসঙ্গে থাকার রুম অবশ্যই ভিন্ন আমেজের হবে। আর এক্ষেত্রে সহজ কিছু সমাধানের অন্যতম হলো ঘরের দেয়ালের রঙ পরিবর্তন করা, পর্দার কাপড় পরিবর্তন করা আর আসবাবপত্রের অবস্থান সঠিকভাবে রাখা। রঙের ক্ষেত্রে ঘরের একটা দেয়ালে করতে পারেন উজ্জল বা গাঢ় রঙের রঙ। কিংবা নানান নান্দনিক নকশায় রাঙানো ওয়ালপেপার দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন পছন্দের একটি দেয়াল। নতুন বিবাহিত যারা তাদের জীবনে এমনিতেই লেগে থাকবে রঙের ঘনঘটা। পাশাপাশি যদি ঘরের পর্দাগুলো রঙিন আর উজ্জ্বল করা যায় তাহলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে অন্দরের পরিবেশ।
এবার আসা যাক আসবাবের দিকে। এই দিকটাতেই সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন দরকার হয়ে পড়ে। ড্রেসিং টেবিল থেকে শুরু করে কাপড় রাখার আলমারি বা ক্যাবিনেট সব কিছুতেই প্রচুর স্টোরেজ ইউনিট খুব জরুরি হয়ে পড়ে। যদি হাতে সময় থাকে তবে ঘরে আসা নতুন অতিথির জন্য বানিয়ে নিতে পারেন বড় একটা অ্যাডজাস্টেবল ক্যাবিনেট, যাতে আলমারি ড্রেসিং ইউনিট আর সাথে জরুরি স্টোরেজ একসঙ্গে কাভার করা যাবে। যেহেতু এখন আপনি আর একা নন তাই আপনার আসবাবপত্রের সংখ্যাও একটু বাড়াতে হবে। তবে আসবাবপত্র নির্বাচনের সময় অন্দরের জায়গার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
এর বাইরে যদি ভাবা যায় তবে রুমের সঙ্গে যদি বারান্দা থাকে তাহলে কিন্তু নিজস্ব সময় কাটানোর ভালো একটা পরিবেশ তৈরি করা যায়। আসলে কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি বাড়তি আয়োজন বা অনেক বেশি আনুষঙ্গিক জিনিসের সমারোহের দরকার নেই। শুধুমাত্র দু’জনের জন্য বারান্দায় ছোট্ট দু’টি বসার টুল রাখতে পারেন। সবচে’ ভালো হয়, যদি বারান্দায় একটা দোলনা ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। দোলনায় রয়েছে রোমান্টিকতার পরিপূর্ণ এক ভারসাম্য। দোলনাকে চাইলে আপনি নানান ধরনের লেইস বা কাপড় দিয়ে রঙে রঙিন করতে পারেন। আবার নরম গদি আর কুশন দিয়ে করতে পারেন আরামদায়ক বসার জায়গা। পুরো ব্যাপারটাই আসলে নির্ভর করবে দু’জনের স্বাচ্ছন্দ্য এবং পছন্দের উপর। দোলনায় যেমন প্রকাশ পাবে শৌখিন মনোভাব, তেমনি চমৎকার কেটে যাবে দু’জনের একান্ত সময়গুলো। এর মাঝে যদি ঝুলিয়ে দিতে পারেন টুংটাং শব্দের উইন্ড চাইম তাহলে এর চেয়ে রোমান্টিক আবহ আর কোথাও পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বাতাসের ছোঁয়া যেন উইন্ড চাইম পর্যন্ত যায়। কেননা বাতাসের কারসাজিতেই আছে সুরেলা টুংটাং-এর রহস্য। আপনার এক টুকরো ব্যালকনিও হতে পারে উইন্ড চাইম ঝোলানোর উপযুক্ত জায়গা। শোভা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একটা অন্যরকম সুরেলা পরিবেশের সৃষ্টি করে উইন্ড চাইম যা একান্তে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত।
এছাড়া ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিক আলোর পাশাপাশি কৃত্রিম আলোর খেলাটা কিন্তু দারুণ এক আমেজ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে অন্দরে নান্দনিক সিলিঙের কোনো জুড়ি নেই। খুব ভারী সিলিং না করে হালকা কিছু ছোট সিলিং বা অন্দরের চারপাশে বর্ডার করে সিলিং করাতে পারেন। এছাড়াও ঘরের কর্নারে যদি আপনি হালকা আলোর ল্যাম্পশেড রাখেন তাহলে আপনাদের একান্ত সময়ে জ্বালিয়ে দিতে পারেন। হালকা আলো দু’জনকেই করে তুলবে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। আর এই আলোছায়ার খেলাটা বেশ ভালোভাবেই তৈরি করতে পারেন ল্যাম্পশেড ব্যবহার করে। এমনকি রুম কিংবা বারান্দার প্রবেশ পথেও ঝুলিয়ে দিতে পারেন ছোট আকৃতির ল্যাম্পশেড।
এখনকার সময় বাজারে নানান ধরনের সুগন্ধি এবং সুবাসযুক্ত মোম পাওয়া যায়। যার আবেশ সত্যিই মোহনীয়। ঘরে কিন্তু সর্বত্রই ব্যবহার করতে পারেন এই সুগন্ধি এবং সুগন্ধিযুক্ত মোম। তাহলে উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের ভিড় থাকলেও অন্দরে থাকবে সার্বক্ষণিক সতেজতা।
শুধু তাই নয় বাথরুমেও কিন্তু একইভাবে ব্যবহার করা যায় এই সুগন্ধিগুলো। তবে বাথরুমের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য হলো বাথরুমের প্রয়োজনীয় ফিটিংসগুলো ঠিক করে রাখা। যদি কোনো অসুবিধা থাকে তবে দ্রুত সারিয়ে নিতে হবে কিংবা নতুন করে লাগিয়ে নিতে হবে। বাথরুম আর অন্দর দু’জায়গাতেই তাজা প্রাকৃতিক ফুলের আয়োজন বরাবরই আকর্ষণীয় করে তোলে। রুমটা যদি কিছুটা ছোটও হয় তবে সাদা ফুলের কমনীয়তা অন্দরকে করে তুলবে মায়াময়।
মূল কথা হলো, খুব বড় সমারোহ আর আয়োজন নয়, বরং ছোট ছোট কিছু পরিবর্তনই আপনাদের অন্দরকে করে তুলবে পরম আপন। আর আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে অন্দর যেভাবেই সাজান না কেন, তা যেন কোনোভাবেই আপনাদের স্বাচ্ছন্দ্যকে নষ্ট না করে, সেদিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
আরকে/জেএইচ
মন্তব্য করুন