• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আপনি পিছিয়ে পড়ছেন না তো?

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০১ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৩৯

রোজ সকালে অ্যালার্মের টিং টিং শব্দ শুনেও তিথির ঘুম ভাঙে না। এজন্য প্রতিদিনই অফিসে আসতে তার কিছুটা হলেও দেরি হয়। সে চাকরি করে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে, যেখানে এক মিনিট সময়ের গুরুত্বও অনেক বেশি।

এই দেরি হওয়া নিয়ে তাকে কর্তৃপক্ষের কাছে মাস শেষে যে জবাবদিহিতা করতে হয় না তা কিন্তু নয়, প্রতিবার সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে এখন থেকে সে সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছে যাবে; এর কোনো ভুল হবে না।

কিন্তু দেখা যায় পরের বার তার আবার সেই ভুল হয়। তিথি তো কোনোদিনই সময় সম্পর্কে অসচেতন মেয়ে না। এত ভালো লেখাপড়া করে সুন্দর একটা চাকরি পেয়েছে, কিন্তু সেটা কেন আজ সে ঠিকঠাক মতো করতে পারছে না এটা ভেবে সে প্রতিদিনই অবাক হয়ে যাচ্ছে।

তার মনে হয় দিন রাত ২৪ ঘণ্টা না হয়ে কেন আরো বেশি হলো না। ছোটবেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করে এখন সাফল্য পেয়ে একাগ্রচিত্তে সুনামের সাথে কাজ করছে এবং শুধুমাত্র একটু টাইম মেইনটেইন করতে পারছে না।

এ কারণে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে তার সুন্দর ভবিষ্যৎ, এটা সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে। কারণ যত ভালো কর্মকর্তাই হোক না কেন অফিস নিয়মের বাইরে কিন্তু কেউ নয়।

আবার একই অফিসের চাকরিজীবী রহিম সাহেব প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অফিসে হাজির হয়ে তার সব কাজ নিয়মিত করার চেষ্টা করে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে সে সময়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে।

সবসময় সেই ইচ্ছাপূরণ গল্পের মতো তার মনে হয় আবার যদি সে তার ছেলেবেলা ফিরে পেত তাহলে সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে লেখাপড়া করে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছাতে পারত। কারণ সে ছাত্রজীবনে বুঝতে পারেনি যে সময় এতটা মূল্যবান।

তাই সময়কে সে যথাযথভাবে কাজে না লাগিয়ে যেনতেনভাবে লেখাপড়া করে আজ ভালো অবস্থানে থাকতে পারেনি। কিন্তু আজ এই সময়ে এসে সময় সম্পর্কে সে অনেক সচেতন হয়েছে। কিন্তু একবার চলে যাওয়া সময়কে তো সে আর ফিরে পাবে না!

এখানে তিথি এবং রহিম সাহেব দুজনেই সময় সম্পর্কে অনেক সচেতন। কিন্তু এখানে সময়টা ঠিক সময় হয়ে ওঠেনি। একজন ছিল ছাত্রজীবনে সচেতন আর একজন চাকরি জীবনে। কিন্তু সময় সম্পর্কে আমাদের একটা নিদিষ্ট সময়ে সচেতন হলে হবে না।

এখানে যদি মনে করেন আমি ভালো লেখাপড়া করে ভালো একটা চাকরি পেয়েছি, এখন আর সময়কে গুরুত্ব না দিলেও কোনো সমস্যা নেই; এটা সবচেয়ে বড় ভুল ভাবনা। যদি সময়কে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো চলতে থাকেন তাহলে সবকিছুই অনর্থ হয়ে যাবে।

ছাত্রজীবনে সময়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। যদি ছাত্রজীবনে ভালো করে সময়ের সদ্ব্যবহার না করেন তাহলে রহিম সাহেবের মতো আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। সময়ের সাথে তাল মেলানো যেমন কষ্টকর তেমনি বিরক্তিকরও বটে।

একদিকে তিথি পারছে না সময়ের সঠিক ব্যবহার করে অর্জনকৃত অবস্থান ধরে রাখতে। আর রহিম সাহেব জীবনের শেষপ্রান্তে এসে সময় সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে পারবে, কিন্তু এর থেকে আর ভালো অবস্থানে যেতে পারবে না।

সবসময় মনে রাখতে হবে সময় একটা দুরন্ত পথিক। সে তার আপন গতিতে ছুটে চলেছে। এক বিন্দু থেমে থাকার তার অবসর নেই। সময়টা মানুষের জীবনে একটা মূল্যবান জিনিস।

আমাদের জীবনে সব জিনিস হারিয়ে গেলে আমরা হয়তোবা অনেক কষ্টে সেটা ফিরে পেলেও পেতে পারি, কিন্তু একবার হারিয়ে যাওয়া সময়কে হাজারো মূল্যবান জিনিসের বিনিময়েও ফিরে পাব না। একে না পারব আমরা ফ্রেমে বাঁধতে, না পারব আটকে রাখতে।

তবে সময়ের সাথে মানুষের জীবনের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। একটা মানুষ যদি ইচ্ছা করে তাহলে সময় নামক পাগলা ঘোড়াকে সে বাঁধতে পারবে না ঠিক আছে, কিন্তু একে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নিজে অনেক ভালো থাকতে পারবে।

এখানে সময় এমন একটা জিনিস যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অর্থাৎ সময়কে কাজে লাগাতে পারে তার জন্য সময়ের অর্থ হয়ে দাঁড়ায় সুসময়। আর যারা জীবনে অনেক সময় নষ্ট করেছে তাদের জন্য সময় এর অর্থ হয়ে দাঁড়াবে দুঃসময়।

সময় কারো বন্ধু নয়, আবার এটা কারো শত্রুও নয়। একে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজে অনেক ভালো থাকা যায়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাকে কোনোভাবেই হেরে গেলে চলবে না। তাই সময়ের যথাযথ বণ্টন করে নিজের কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।

সপ্তাহের সময়কে ভাগ করে নিতে হবে এবং ব্যয়িত সময়ের একটা তালিকা তৈরি করতে হবে। কারণ আমরা অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজে সময়টা নষ্ট করি এবং সপ্তাহ শেষে এই তালিকা থেকে যদি একঘণ্টা সময় বের করা যায় তাহলে সপ্তাহের জমে থাকা কাজগুলো করতে কোনো অসুবিধা হয় না।

বিনোদনমূলক কাজের দরকার আছে সত্য, কিন্তু সেটা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়। বিশেষ করে আমাদের অনেকের অভ্যাস আছে রাত করে টিভি দেখা। এটা অবশ্যই জীবনের জন্য ক্ষতিকর। পেশাগত জীবন এবং পারিবারিক জীবনকে এক করা যাবে না।

এখানে দুটি জীবনকে আলাদা ভাবে সাজালে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা সম্ভব। আমরা অনেক সময় শপিং করে, আড্ডা দিয়ে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলি। এর চেয়ে যদি অনলাইন শপিং করি তাহলে অনেক সময় বাঁচবে।

প্রতিদিন নিজের ভুলগুলো দিন শেষে লিখি রাখি এবং সেটা বারবার চোখ বুলাই এবং এই ভুল থেকে একটা শিক্ষা অবশ্যই আমরা নিতে পারি।

আরকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • লাইফস্টাইল এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh