• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

উষ্ণ মৌসুমেও অন্দরে শীতল আমেজ

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০৪ জুন ২০১৭, ১৩:৪২

টানা বৃষ্টি, আবার চোখ ঝাঁঝানো উজ্জ্বল রোদ। প্রকৃতির এমন পরিস্থিতিতে যেমন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তেমনি অন্দরের ভারসাম্য রক্ষা করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতেই এবারের এই ঘন বৃষ্টির পর যখন কটকটে প্রখর রোদ উঠেছিল তখন সবার মনে একটাই আতঙ্ক ছিল বাড়ি ভিজে পানি পানি বা ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া। তবে এতে ভয়ের বা ঘাবড়ে যাওয়ার কিছুই নেই।

এটা প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কয়েক দিনের অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বাতাসে জলীয় কণার পরিমাণ বেড়ে যায়। বাইরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ও ঘরের ভিতরে তাপ কম থাকায় জলীয় কণাগুলো পানিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

এ কারণেই ঘরের মেঝে, দেয়াল, ছাদ, আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র সব স্থানে ঘাম ঘাম ভাব দেখা দেয়। অনেক জায়গায় পানি গড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে মেঝে, দেয়াল, ছাদ, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র কোনো কিছুই ঘামেনি। মূলত এইগুলো জলীয় কণাই হলো রূপান্তরিত পানি। তাই পরবর্তীতে এমন কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই।

আবার এই বৃষ্টিমুখর আবহাওয়ার আরও ভয়াবহ আতঙ্কের নাম পিঁপড়া। বৃষ্টির সময় বা পরে বাজে স্যাঁতসেঁতে ভাব আর পিঁপড়া অন্দরের শান্তি একদম বিনষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে, পেপারমিন্ট তেল অথবা সাবানের সঙ্গে পানির মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। দরজা-জানালার যেখান দিয়ে পিঁপড়া ঢুকতে পারে সেখানে পেপারমিন্ট তেল ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে পিঁপড়া যেমন পালিয়ে যাবে তেমনি বাড়ির স্যাঁতসেঁতে ভাবটাও চলে যাবে অনেক দ্রুত।

এছাড়াও বাড়িতে পিঁপড়া ঢুকতে পারে যেসব জায়গা দিয়ে সেখানে লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। এতে তারা রাস্তা ভুলে যায় এবং একজন আরেকজনকে অনুসরণ করে বাড়িতে ঢুকতে পারে না। অথবা একই ভাবে পিঁপড়া যাওয়া আসার পথে দারুচিনি গুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এর সঙ্গে লবঙ্গ গুঁড়োও মিশিয়ে দিতে পারেন। এই উপকরণগুলো পিঁপড়া তাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

এছাড়াও অন্দরে কিংবা বাইরে নোনা ধরা সমস্যাও খুব বিরক্তিকর হয়। নোনা ধরার ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয় ছোপ ছোপ দাগ প্লাস্টার এমনকি চুনকামেও ঢাকা পড়ে না। নোনার সংস্পর্শে কাগজপত্র, কাপড়-চোপড়, কাঠ ইত্যাদি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় প্লাস্টার নরম হয়ে খসে পড়ে সর্বোপরি দালানের সৌন্দর্যহানি ঘটে। তাই নোনা প্রতিরোধ করার জন্য বাড়ি তৈরির আগে ও বাড়ি তৈরির সময় বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ বাড়ি তৈরির উপকরণ, বাড়ির অবস্থান, গাঠনিক ত্রুটিজনিত কারণ, বাড়ির আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা প্রভৃতির উপর অনেকাংশেই নোনা ধরা নির্ভরশীল। তাই নোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। বাড়ি তৈরি হলে দেখা যায়, কোন কোন দেয়াল বেশী রোদ পাচ্ছে আবার কোন কোন দেয়াল কম রোদ পাচ্ছে। যেসব দেয়াল রোদ কম পাচ্ছে এবং বৃষ্টির পানি বেশি পড়ে, সে জায়গায় স্যাঁতসেঁতে ভাব দেখা দেবার সম্ভাবনা বেশি। তাই নকশা তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, যেসব দিকের দেয়ালের কম রোদ আসে সেসব দিক যেন খোলা বেশি থাকে যাতে বাতাস চলাচলের মাধ্যমে স্যাঁতসেঁতে ভাব দ্রুত দূর হয়ে যায় এবং নোনা ধরার সুযোগ তৈরি না হয়। বাড়িতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখার জন্য জানালা, দরজা মুখোমুখি বানাতে হবে যেন বাতাস প্রবাহের ব্যাঘাত না ঘটে। গরমকালে যাতে সূর্যের তাপ কম পায় এবং শীতকালে সর্বাধিক সূর্যের তাপ আসে সেদিকে খেয়াল রেখেই বাড়ির অবস্থান ঠিক করা উচিত।

সাধারণত দেখা যায়, বৃষ্টি আর রোদের এই বিপরীত ভারসাম্যের ফলে অন্দরের প্রায় সব জায়গায় কিন্তু গুমোট একটা ভাব হয়ে যায়। মাঝে মাঝে হালকা একটা অস্বস্তিকর বাজে গন্ধেরও উপদ্রব হয়। তারচেয়ে বড় সমস্যা যেখানে অনেক স্থানেই ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের সৃষ্টি হয়। যাদের একটু পুরনো বাসা তাদের তো এই সমস্যা আছেই, কিন্তু যাদের নতুন বাসা তারাও এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পায় না।

শুধু আসবাব বা সাধারণ জিনিসপত্রেই নয়, বর্ষায় চাল, ডাল ও আটাতেও কিন্তু পোকার উপদ্রব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে এইসব আনাজপাতির মধ্যে কয়েকটা শুকনা নিমপাতা রেখে দিলে পোকার উপদ্রব অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া মশা-মাছির উপদ্রব কমাতে কয়েকটা কর্পূর পানিতে ভিজিয়ে ঘরের কোণে রেখে দিন। নাহলে, ব্যবহৃত চা পাতা ভালো করে শুকিয়ে ধূপের মতো ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যাবে। আবার নিমপাতাও খুব কার্যকরী এবং প্রয়োজনীয় বস্তু। বর্ষায় পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষায় এর বিকল্প নেই। আর প্রতিদিন ঘর মোছার সময় ক্লিনার বা ফিনাইল ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এতে ঘরের মেঝে জীবাণুমুক্ত থাকবে।

ঘরে ইনডোর প্ল্যান্টস থাকলে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে পানি ঝরিয়ে নিন। জমে থাকা পানিতে গাছের গোড়া পচে যাবে আর পোকার জন্ম হবে। তাই ইনডোর প্ল্যান্টসগুলো রাখতে হবে পরম যত্নে। ঘরের ভেতরের ভেজাভাব দূর করার জন্য রুম ফ্রেশনার স্প্রে করুন। তবে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক ফ্রেশনার হলো ফুল। হালকা ঘ্রাণযুক্ত ফুল ঘরে রাখা যেতে পারে। তাতে ঘর থাকবে অনেক সতেজ। এছাড়াও বাজারে পাওয়া যায় নানান ধরনের সুগন্ধিযুক্ত মোম। হালকা ফুলের সুবাস কিংবা মৃদু সুগন্ধিযুক্ত মোম কিন্তু বর্ষায় অন্দরে ভিন্ন আমেজেরও সৃষ্টি করে।

আর অন্দরে নির্মল পরিবেশের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পরিচ্ছন্নতা। যতটুকু সাধ্যের মধ্যে থাকবে অন্দর পরিষ্কার রাখতে হবে। দৈনন্দিন পরিচর্চা আর প্রকৃতির নির্মল আলো বাতাস এমনিতেই আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, মন আর স্বাস্থ্যকে সজীব আর সতেজ করে তোলে। তাই প্রকৃতির সমস্ত বৈরিতাকে আশীর্বাদ ভেবে নিজ অন্দরে সুস্থভাবে থাকাটাই হলো আসল ভারসাম্য রক্ষা করা।

আরকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • লাইফস্টাইল এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh