• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৮:২৮
ডা: মৌসুমী আফরিন ইভা

শরীরকে সুস্থ রাখতে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি; যার জন্য দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস। তবে আপনার শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন এবং প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাবারের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। সারা দিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল ও পানির সুষম বণ্টন। আপনাকে তিন বেলা খাবারের নিয়মকে পরিবর্তন করে ৫ থেকে ৬ বেলার খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অনেকেই চর্বিযুক্ত খাবারকে মনে করেন ওজন বৃদ্ধির কারণ। এ ধারণাটি ভুল। চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার অবশ্যই খাবেন। কারণ তা আপনার শরীরের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। কিন্তু কোনটি ভালো ফ্যাট আর কোন ফ্যাটটি আপনার সুস্থতাকে বাধাগ্রস্ত করছে সেটা জানা জরুরি। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে শরীরের আরও অন্যান্য চাহিদাকে পূরণ করতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আপনি না বুঝে ইউটিউব থেকে একটি সাধারণ ধারণা পেতে পারেন। কিন্তু আপনার শরীরের জন্য কোন খাবারটি প্রয়োজন, কোন অসুখের জন্য কোন খাবারটি বাদ দিতে হবে, সেটা জানা জরুরি। ওষুধের পাশাপাশি কোন খাবার আপনাকে সুস্থ রাখবে তা জানতে, অবশ্যই একজন নিউট্রিশন কনসালটেন্ট বা অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।

একজন ডায়াবেটিক রোগী জানেন, মিষ্টি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলে ভালো। কারণ এই খাবার রক্তের সুগারের পরিমাণ বাড়ায়। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি। যা খেতে মিষ্টি নয় কিন্তু তা মিষ্টি জাতীয় খাবারের মতো রক্তের গ্লুকোজ বাড়াতে বিশেষভাবে দায়ী।

যার রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি, তাকেও জানতে হবে কোন খাবারগুলো খেতে হবে। গাউট রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য এমন কিছু খাবার নিষিদ্ধ আছে, যা খাওয়ার কারণে শরীরের ব্যথা অজান্তেই বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত পানি নয়, বরং হিসেব করে অল্প মাত্রায় পানি পানের কথা বলা হয়। পিউরিন ও পটাশিয়াম বেশি এমন সব শাকসবজি ও ফলমূলকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, মিষ্টি পেঁপেসহ অন্যান্য খাবার দিয়ে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত।

কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা জানেন প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। এটি মাথায় রেখে কিছু রোগী এমনভাবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বন্ধ করে ফেলেন যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আপনি অবশ্যই প্রতিদিন একটি ম্যাচের বাকশের সমান আমিষ যুক্ত খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম (প্রতি ওজনের জন্য ০.৫–০.৮ গ্রাম আমিষ) অনায়াসেই খেতে পারবেন। সেই সঙ্গে লবণ বা সোডিয়াম বেশি এমন খাবারও নিয়ন্ত্রিতভাবে খেতে হবে।

যিনি উচ্চরক্তচাপের রোগী, তিনি জানেন পাতে লবণ খাওয়া নিষেধ অথচ নিজের অজান্তেই তিনি প্রতিদিন আচার, চানাচুর, চিপস, মুড়ি, সস বা সয়াসসের রান্না করা খাবার খেয়ে যাচ্ছেন। যেখানে রয়েছে লবণের আধিপত্য।

হরমোন ইমব্যালেন্স বিশেষ করে যারা হাইপো থাইরয়েড এর রোগী, তাদের ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে কেক, পাউরুটি, ওটস, পেস্ট্রি ইত্যাদি খাবারগুলো বাদ দিয়ে লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাবারের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা অনেক বেশি তাদের ক্ষেত্রেও প্রাণীজ চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত পোড়া,ডুবো তেলে ভাজা (ট্রান্সফ্যাট) জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।সেই সঙ্গে যুক্ত করতে হবে মৌসুমী ফলমূলও সবুজ শাক-সবজি।

যে সকল ফল কাটলে তারার মতো দেখায় (কামরাঙা, আনারস, পেঁপে বিশেষ করে কাঁচা) গর্ভবতী মহিলাদের সেগুলো না খাওয়াই ভালো। এ সময় খাবারে শর্করা প্রাধান্য না দিয়ে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন-মাছ, মাংস, দুধ) খেতে হবে। সেই সঙ্গে আপনার ও আপনার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং পায়খানা যেন কষা না যায়, তাই প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত শাক–সবজিও ফল খেতে হবে।

এবার আসি যারা ওজন কমানোর মিশনে আছেন, তাদের কথায়। না বুঝেই ক্রাশ ডায়েট, ওয়াটার ফাস্টিং, কিটো ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট জাতীয় অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রতি ঝুঁকে পড়বেন না। শুধু জানতে হবে আপনার শরীরের দৈনন্দিন কিলো ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা এবং তা থেকে ৫০০ কিলোক্যালরি বাদ দিতে পারলেই যথেষ্ট।

১. আপনার কায়িক পরিশ্রম বাড়ান। প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

২. সঠিক সময়ে রাত ১১টার মধ্যে আপনার সকল ডিভাইস বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ুন আর ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। সম্ভব হলে দুপুরের ঘুমকে না বলুন।

৩. ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রোসেস ফুড, আইসক্রিম, পেস্ট্রি, চকলেট জাতীয় খাবারকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন।

৪. দিনে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন। এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন সামান্য লেবুর রস যদি এসিডিটির সমস্যা না থাকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই লেবুর রস আপনার শরীরের ফ্যাট কাটাতে সাহায্য করবে।

৫. যারা ডেস্ক জব করেন, কিছুক্ষণ পর পর আশেপাশে একটু হাঁটাচলা করুন। ধূমপান–মদ্যপান পরিহার করুন। সৎ ও সত্যের পথে চলুন। দেখবেন জীবনটা কত সুন্দর।

লেখক: ডা. মৌসুমী আফরিন ইভা
নিউট্রিশন কনসালটেন্ট, ডায়াবেটলজিস্ট ও ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস, মালিবাগ, ঢাকা।
সিনিয়র রেসিডেন্ট (ইন্টারনাল মেডিসিন), হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল।

মন্তব্য করুন

daraz
  • লাইফস্টাইল এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh