• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ফেসবুকের ট্রাম্প নীতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বিরল প্রতিবাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০২ জুন ২০২০, ২১:২৩
With rare candor, employees protest Facebook's Trump policy
এপি থেকে নেয়া

মিনিয়াপোলিসে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার ইঙ্গিত দিয়ে করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি পোস্ট রাখার ব্যাপারে ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করতে টুইটার ও ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ টুল ব্যবহার করছে ফেসবুকের কর্মীরা। খবর বার্তা সংস্থা এপির।

ট্রাম্প তার একটি টুইটে লুটপাট শুরু হলে গুলি শুরু হয় এমন বাক্য ব্যবহার করার পর সেটি ফ্লাগ করে এবং ডিমোট করে টুইটার। কিন্তু ফেসবুক ট্রাম্পের ওই পোস্টের ব্যাপারে কিছু করেনি এবং শুক্রবার ফেসবুকে এক পোস্টে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন জাকারবার্গ।

জাকারবার্গ লিখেন, আমি জানি যে প্রেসিডেন্টের পোস্টটি কিছু না করায় অনেকে বিরক্ত হয়েছে, কিন্তু আমাদের অবস্থান হলো আমরা যতটা সম্ভব অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে দেবো যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সুস্পষ্ট নীতিমালার মধ্যে নির্দিষ্ট ক্ষতি বা আসন্ন ঝুঁকি সৃষ্টি না করে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, যা ১৯৬০ এর দশকের পর ব্যাপকমাত্রায় বর্ণবাদী অস্থিরতা তৈরি করছে। হাতকড়া পরানো অবস্থায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার হাঁটু চেপে ধরার পর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সহিংস সংঘর্ষ হয়েছে।

ট্রাম্পের এই মন্তব্যটি নাগরিক-অধিকার আন্দোলনের সময়ে ব্যবহৃত হওয়া একটি বাক্য, যা ১৯৬৭ সালে মিয়ামির পুলিশ প্রধান ব্যবহার করেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় অস্থিরতার প্রেক্ষিতে পুলিশি আগ্রাসনের ব্যাপারে সতর্ক করতে গিয়ে এমন বাক্য ব্যবহার করেন মিয়ামির তৎকালীন পুলিশ প্রধান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেসবুকের সিনিয়র কর্মীদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের ওই পোস্টে হাত না দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফেসবুকের কয়েক ডজন কর্মী সোমবার ভার্চুয়াল ওয়াকআউট করেন। খবরে বলা হয়, কয়েক ডজন ফেসবুক কর্মী ফেসবুকের সিস্টেমে লগইন করে ডেঅফ নেয় এবং দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের সহায়তা করতে সময় চেয়ে অনুরোধ করে।

কর্মীরা অন্যভাবেও তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ টুইটারে পোস্ট করেছেন। অনেকে আবার ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলছে এবং কেউ কেউ ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্কে লিখছে।

ভার্চুয়াল হলেও ফেসবুকের ইতিহাসে এবারই প্রথম সংস্থাটির কর্মীরা ওয়াকআউট করেছে। অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যেমন গুগল ও টুইটারের কর্মীদের তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টের কর্মীরা বরাবরই কম সরব ছিলেন।

ফেসবুকে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের একজন পরিচালক হিসেবে এক বছর ধরে কাজ করছেন জেসন টফ। তিনি এক টুইটে লিখেছেন, আমি ফেসবুকে কাজ করি এবং যেভাবে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি তাতে আমি গর্বিত। যেসব সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অধিকাংশই একই ধরনের মানসিকতা পোষণ করে। আমরা আওয়াজ তুলেছি।

টফের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এমন টুইট করার পর তাতে এক লাখ ৩১ হাজার ৪০০ লাইক এবং হাজার হাজার রিটুইট হয়েছে। তবে সোমবার টফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকের ডিজাইন ম্যানেজার জেসন স্টিরম্যান এক টুইটে লিখেন, আমি জানি না কী করতে হবে, কিন্তু এটা জানি যে কিছু না করা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি ফেসবুকের একজন কর্মী এবং ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পোস্ট যেগুলো স্পষ্টভাবে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে কিছু না করার মার্কের (মার্ক জাকারবার্গ) সিদ্ধান্ততে আমি পুরোপুরি অসম্মতি জানাচ্ছি। ফেসবুকে কেবল আমিই একা নই। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কোনও নিরপেক্ষ অবস্থান নেই। সোমবার স্টিরম্যানের যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

সংস্থাটির একজন প্রোডাক্ট ডিজাইনার সারা ঝ্যাং এক টুইটে লিখেন, সহিংসতা উসকে দেয় এমন পোস্টের ব্যাপারে কিছু না করার সিদ্ধান্ত আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ রাখার অন্যান্য অপশন এড়িয়ে যাওয়ার মতো। এই নীতির ফলে গ্রাহকের ক্ষতিকারক কন্টেন্ট রাখা বা নামিয়ে ফেলার মতো দুটি উপায়ের সামনে এনে দাঁড় করায়।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এটি স্ব-আরোপিত বাধ্যবাধকতা এবং এটি পুনরায় বিবেচনা করতে নেতৃস্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে কথা বলতে ঝ্যাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে এ অস্বীকৃতি জানান।

ফেসবুকের মুখপাত্র লিজ বুর্জোয়া সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, এই মুহূর্তে আমরা আমাদের অনেক লোকের বিশেষত আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় কষ্ট অনুভব করছে তা আমরা বুঝতে পারছি। আমাদের নেতৃত্বের সঙ্গে একমত না হলেও আমরা আমাদের কর্মীদের প্রকাশ্যে কথা বলতে উৎসাহিত করি। আমরা কন্টেন্ট নিয়ে যে অতিরিক্ত কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হচ্ছি, সে বিষয়ে তাদের সৎ প্রতিক্রিয়া পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবো আমরা।

কর্মীদের উদ্বেগ নিয়ে জবাব দিতে নির্বাহীদের সঙ্গে মঙ্গলবার একটি সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করেছে ফেসবুক।

বর্ণবাদ রোধে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোকে ১০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোববার আবারও ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন জাকারবার্গ। তবে তার এই পোস্টেও তিনি ট্রাম্পের ওই পোস্টের উল্লেখ করেননি। এর পরিবর্তে ফ্লয়েডের মৃত্যুর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকা হাইলাইট করেন তিনি।

জাকারবার্গ লিখেন, আমাদের জর্জ ফ্লয়েডের নাম জানতে হবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে মানুষজনকে নিরাপদ রাখতে এবং আমাদের সিস্টেম যাতে পক্ষপাতিত্বকে ফুটিয়ে না তোলে সেটা নিশ্চিত করতে আরও অনেক কাজ করতে হবে।

নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ঐতিহাসিকভাবে জোরালো অবস্থান নিয়েছে টুইটার। এরই অংশ হিসেবে গত নভেম্বরে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন পুরোপুরি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় টুইটার।

এর আংশিক কারণ ফেসবুক, যেটি ব্যাপক অডিয়েন্সের সমন্বয়ে একটি অনেক বড় কোম্পানি, যারা তাদের আকার ও ক্ষমতার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর টার্গেট হচ্ছে এবং তাদের হারানোরও আছে অনেক। এছাড়া কোম্পানিগুলোর সিইওরা অনেক সময়ই সমাজে তাদের ভূমিকার ব্যাপারে একমত হতে পারেন না।

সপ্তাহান্তে ‍টুইটার তাদের মূল টুইটার অ্যাকাউন্টের ব্যাকগ্রাউন্ড কালো থেকে তাদের স্বাভাবিক রঙ নীল ও লোগো পরিবর্তন করেছে। ব্লাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সমর্থনে করা এই পরিবর্তনের পাশাপাশি তারা ব্লাক লাইভস ম্যাটার হ্যাশট্যাগও যোগ করেছে। ফেসবুকও তাদের সাইটে তাদের লোগোর সঙ্গে একই কাজ করেছে, তবে তারা কোনও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেনি।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন নিকি হ্যালি
এক ঘণ্টায় ফেসবুকের কত ক্ষতি হলো?
আম্বানির ছেলে অনন্তর ঘড়ি দেখে মুগ্ধ জাকারবার্গের স্ত্রী
সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসা বন্ধ ট্রাম্পের
X
Fresh