চীনা কর্মকর্তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে টার্গেট করে মার্কিন সিনেটে বিল পাস
এবার চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহে একটি বিল পাস করছে। এর ফলে জিনজিয়াংয়ে জাতিগত মুসলিমদের টার্গেট করে যে বিস্তৃত কারা নেটওয়ার্ক ও জোরপূর্বক লেবার ক্যাম্প আছে, তার সঙ্গে জড়িত চীনা কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্ট, ২০২০ এ চীনে মানবাধিকার অপব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্র যাতে কঠোর সাজার অ্যাপ্রোচ নেয়, সেই সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিল কংগ্রেসে পাস হলে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করার পর আইনে পরিণত হলে, এ ধরনের অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত চীনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে তালিকা তৈরি করতে পারবে হোয়াইট হাউজ।
ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও, নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর বব মেন্ডেজ ও ইদাহোর রিপাবলিকান সিনেটর জেমস রিশ এই বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস করেন আইনপ্রণেতারা। এর মধ্য দিয়ে চীনের মানবাধিকার ইস্যুতে কঠোর অবস্থানের ব্যাপারে সব দলের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটির সদস্য রুবিও এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, জিনজিয়াংয়ের উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলার জন্য চীন সরকার এবং কমিউনিস্ট পার্টির নিয়মতান্ত্রিক এই চলমান প্রচেষ্টা ভয়াবহ এবং আমরা যদি নিশ্চুপ থাকি তবে মানবতার জন্য এটি এক দাগ হবে।
ওই যৌথ বিবৃতিতে কমিটির চেয়ারম্যান রিশ বলেন, জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আজ সিনেটে যে উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্ট পাস করা হলো, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, চীন অবৈধভাবে বন্দিশিবিরে যে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের আটকে রেখেছে তা নিন্দনীয় এবং অমার্জনীয়।
কমিটির র্যাঙ্কিং সদস্য মেনান্দেজ যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, উইঘুর জনগণ ও অন্যান্যরা যারা চীনের মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছে, তাদের ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য এই আইন দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত। এটিকে দ্রুত আইনে পরিণত করতেও আহ্বান জানিয়েছেন সিনেটররা।
গত সেপ্টেম্বরে উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্টের অরিজিনাল ভার্সন করে সিনেট। ডিসেম্বরে নিজেদের ভার্সন পাস করে হাউজ, যেখানে বলা হয়- উইঘুর ও অন্যান্য চীনা নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ বা চলাচল নজরদারি করতে চীনের সরকার যেসব ডিভাইস ব্যবহার করে, সেগুলো রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হবে। পরে এটি বিবেচনার জন্য সিনেটে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার সিনেটে পাস হওয়া এই বিলে হাউজের প্রায় সবগুলোই মেনে নেয়া হয়েছে, শুধু রপ্তানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, তা বাদ দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রেসিডেন্ট সই করার আগে এই বিলটি আবারো হাউসের অনুমোদন পেতে হবে।
গত সপ্তাহে সিনেটে নিজের বক্তব্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল আশা প্রকাশ করে বলেন যে, উইঘুর অধিকার বিল পাস হলে ‘নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির দুর্দশার চিত্র আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্ট অনুযায়ী, গ্লোবাল ম্যাগনেটস্কি মানবাধিকার দায়বদ্ধতা আইনের আওতায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করা এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভিসা প্রত্যাহারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান করা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে হাউজের অনেক সদস্য তাদের ওয়াশিংটন অফিসে কাজ করছেন না। তাই উইঘুর বিষয়ক এই আইন ভোটাভুটির জন্য কবে ফ্লোরে আসবে না এখনও জানা যায়নি।
এদিকে সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলটি পাস হওয়ার পর বেইজিংয়ের দিক থেকে আরেক দফা প্রতিবাদ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছরের শেষদিকে বিলটি যখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে পাস হয় তখন চীনা কর্মকর্তারা এটিকে আন্তর্জাতিক আইন মারাত্মক লঙ্ঘন এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এ
মন্তব্য করুন