• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনাভাইরাস: ভারতে লকডাউনের প্রথম কয়েকটা ঘণ্টা যেমন কাটলো

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ২৫ মার্চ ২০২০, ১৬:৪৫
করোনাভাইরাস: ভারতে লকডাউনের প্রথম কয়েকটা ঘণ্টা যেমন কাটলো
ভারতে লকডাউন

টেলিভিশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যখনই বললেন, আগামী তিন সপ্তাহ সারা দেশ 'টোটাল লকডাউনের' আওতায় থাকবে - প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর থেকে পিলপিল করে লোকজনের বেরোনোও শুরু হয়ে গেল!

বাকি ভাষণ শোনার অপেক্ষা না-করে মানুষ ততক্ষণে বাজারের থলে আর ব্যাগ হাতে পাড়ার মুদির দোকান বা কিরানা স্টোরের সামনে লাইন দিতে শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে আবার ছুটেছেন ওষুধের দোকানের দিকে।

দিল্লির উপকণ্ঠে আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানে বেশ কয়েকটি বহুতল আবাসনকে ঘিরে একটি মাঝারি মাপের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় চাল-ডাল-নুন-তেল-শাকসবজি টুকটাক সবই সেখানে মেলে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হয়েছিল ঠিক রাত আটটায়। আটটা বেজে এগারোয় সেই দোকানের সামনে পৌঁছে দেখি, অন্তত পঞ্চাশ জনের লাইন সেই ছোট্ট দোকানের সামনে।

স্টোরের শাটার আধখানা নামানো, একসঙ্গে মাত্র দশজন করে ক্রেতাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। আর বাইরে মোটামুটি পরস্পরের সঙ্গে এক মিটার দূরত্ব রেখে, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের শর্ত মেনে ক্রেতারা লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছেন - ভিড় নেমে এসেছে রাস্তায়।

প্রায় আধঘণ্টা পর যখন দোকানে ঢোকার সুযোগ পাওয়া গেল, সব তাকই প্রায় খালি হওয়ার পথে। কোনোক্রমে কিছু শাকসবজি, পাউরুটি আর গোটাদুয়েক কুকিং অয়েলের শিশি বগলদাবা করে যারা বেরোতে পারছেন, তাদের চোখে-মুখে প্রায় যুদ্ধ জয়ের হাসি!

ততক্ষণে এলাকায় শান্তি রাখার লক্ষ্যে সাইরেন বাজিয়ে হাজির হয়ে গেছে পুলিশের টহলদারি ভ্যানও।


আর দেশের নানা প্রান্তে একই ধরনের ছবি দেখা গেছে মধ্যরাত গড়িয়েও। বহু দোকানপাট খুলে রাখা হয়েছিল রাত দুটো বা তিনটে পর্যন্তও - তাদের সব স্টক ফুরিয়ে না-যাওয়া অবধি!

আসলে প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক ঘোষণা সারা দেশকে এতটাই হতচকিত করে দিয়েছিল যে, ঘরে তিন সপ্তাহর মতো দানাপানি মজুত না-থাকলে তো অনাহারে থাকতে হবে, এই ভয়টাই মানুষের মনে জেঁকে বসেছিল। অগত্যা এই 'প্যানিক বাইয়িং'-এর হিড়িক!

আর এই লকডাউনটাকে যে "একেবারে কারফিউ-র মতোই ধরে নিতে হবে", প্রধানমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিকেও অনেকেই আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন।

মোদি বলেছিলেন, এটা হবে জনতা কারফিউ-র চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে! কিন্তু ঠিক ঠিক কোন অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা চালু থাকবে - কিংবা পাড়ার মুদির দোকান খোলা থাকবে কি না, সেটা অত স্পষ্ট করে বলেননি - কিংবা মানুষও তা শোনার ধৈর্য দেখায়নি।

ফলে ২৫ মার্চ বুধবারের ভোরেও সম্পূর্ণ অন্য রকমের এক দিনের সূচনা দেখল ভারত, বিশেষত আরবান ইন্ডিয়া। খবরের কাগজ বিলি হল না, মিল্কম্যান ডেলিভারি দিতে পারল না দুধের প্যাকেট।

বিগবাস্কেট বা অ্যামাজন ফ্রেশের মতো যে অনলাইন গ্রোসারি-গুলো ইদানীং ভারতে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তাদের সাইটও ক্র্যাশ করে গেছে গতরাত থেকেই। ফলে যথারীতি তাতে আতঙ্ক আরও ছড়িয়েছে।

বেশি রাতের দিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি আবার টুইট করে জানালেন, টোটাল লকডাউনের সময় কোন কোন পরিষেবা চালু থাকবে - আর কোনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। বলা হল, এলাকার গ্রোসারি ও মেডিসিন স্টোর চালু থাকবে - কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে।

দোকানদাররাই এর মধ্যে বলতে শুরু করেছেন, "আমরা দোকান খোলা রেখেই বা কী করব, যদি নিয়মিত মালপত্রের জোগানই না আসে?"

আসলে গোটা ভারতে রেল ও বিমান চলাচল যেখানে স্তব্ধ (যদিও কাগজে কলমে কার্গোর ছাড় রয়েছে), মালবাহী ট্রাক বা টেম্পোগুলোকে থামিয়ে পুলিশ চালক ও খালাসিদের হেনস্থা করছে - সেখানে দোকানে জোগান স্বাভাবিক থাকবে এটা আশা করাটাই বোধহয় ভুল।

ফলে গোটা ভারত জুড়েই এখন এক অজানা আশঙ্কার তিরতিরে স্রোত বইতে শুরু করেছে, লকডাউনের প্রথম দিনেই এই হাল - না জানি তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে।

এর পাশাপাশি ভারতের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ - যাদের অনেকেরই দিন-আনি-দিন-খাই দশা, তারাও আজ দাঁড়িয়ে আছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। এত দীর্ঘ সময় ধরে কখনও তাদের সবার রুটিরুজি বন্ধ হয়ে থাকেনি।

উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের মতো কোনও কোনও রাজ্য গরিব মানুষদের জন্য ভর্তুকিতে খাদ্য ও এককালীন সামান্য কিছু আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে - কিন্তু সেই সব প্রকল্প এখনও চালু হয়নি।


তাছাড়া জরুরি বিভাগগুলো ছাড়া প্রায় সব সরকারি অফিসই যেখানে বন্ধ, সেখানে কোটি কোটি মানুষের কাছে এই সব সরকারি সহায়তা কীভাবে আর কবে পৌঁছবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এ কারণেই ভারতে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলছেন, ভারত যে এই তিন সপ্তাহের টোটাল লকডাউন ঘোষণা করল তার আগে কি পরিস্থিতি সামলানোর মতো আগাম প্রস্তুতি আদৌ নেয়া হয়েছিল?

আম আদমির কাছে দুবেলার খাবারটুকু অন্তত ঠিকমতো না-পৌঁছলে তারা যে এমনিতেই বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নেমে আসতে পারেন কিংবা দাঙ্গা-হাঙ্গামার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সে বিষয়েও অনেকে সতর্ক করে দিচ্ছেন।

অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি কীভাবে সামলানো হবে সেটা পরের কথা, আপাতত এই তিন সপ্তাহে গোটা ভারতে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে পারাটা এবং জরুরি পরিষেবাগুলো মোটামুটি মানুষের নাগালে পৌঁছে দেওয়াই মোদি সরকারের সামনে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।


পাশাপাশি যে কারণে এই টোটাল লকডাউন, সেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর মূল চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই।

গোটা সঙ্কটটাকে এদিন খুব সংক্ষেপে আর চমৎকারভাবে এক কথায় ব্যাখ্যা করলেন শিউ নারায়ণ মাহাতো, নয়ডার একটি কনস্ট্রাকশন প্রকল্পে যার শ্রমিকের কাজ গত দশদিন ধরেই বন্ধ।

ঝাড়খণ্ড-বিহার অঞ্চলের দেহাতি হিন্দিতে তিনি কেটে কেটে যা বললেন তার মর্মার্থ, বাবুজি, এসব ভাইরাস-ফাইরাস থেকে বাঁচব কি না সে তো ওপরওলা জানেন, কিন্তু তার আগে এই 'লোকডাউন'-টা পার হতে পারব কি না সেটাই তো বুঝতে পারছি না!"

ফলে ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের সামনে এখন একটা নয়, বরং দু-দুটো কঠিন যুদ্ধ - কোভিড-19 আর টোটাল লকডাউন!

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh