করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বন্যপ্রাণী বিক্রি ও খাওয়া নিষিদ্ধ করলো চীন
চীন বলছে যে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে তারা বন্যপ্রাণীদের বাণিজ্য ও খাওয়া নিষিদ্ধ করবে। কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের এই বাণিজ্যের সঙ্গে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত রয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারীতে চীনে ২,৭০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস বহনকারী বন্যপ্রাণীর শরীর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে, যা খাবারের জন্য বাজারে বিক্রি করা হয়েছিল। অধিকাংশ গবেষকের বিশ্বাস, এই ভাইরাসটি প্রাণীদের একটি বাজার থেকে একটি মানব হোস্টের শরীরে প্রবেশ করে, পরিবর্তিত হয় এবং অন্যদের সংক্রমিত করে।
ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) স্থায়ী কমিটির বরাত দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম জানায়, কভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর, বন্যপ্রাণী খাওয়া এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য এর সুপ্ত হুমকি ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
ওই নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিক কার্যকর হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যপ্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বিক্রির ওপর অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বন্য প্রাণীর মাংসের চাহিদার জন্য চীনে সিভেট ক্যাটের মতো প্রাণীর প্রজনন শিল্প গড়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, চীনে ১৭ বছর আগে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা সার্স মহামারী, যেটিতে বিশ্বজুড়ে ৮০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তার সঙ্গে সিভেট ক্যাট খাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলছে যে, গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী রোগসৃষ্টিকারী যে জীবাণু আবিষ্কার করা হয়েছে, সেগুলোর ৭০ শতাংশই এসেছে প্রাণীর শরীর থেকে।
পরিবেশবিদ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে অন্যরা বলেছেন যেসব প্রতিষ্ঠান এই জাতীয় প্রাণীর জন্য প্রজনন খামার পরিচালনা করছে তাদের সরকারি অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
সিভেট ক্যাট
২০১৭ সালে সরকারি অর্থায়নে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির বন্যপ্রাণী বাণিজ্য ও ভোজন শিল্পের বাজার ৫২০ বিলিয়ন ইউয়ান (৭৪ বিলিয়ন ডলার) এবং এই শিল্পের সঙ্গে এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ জড়িত আছে।
এনপিসি’র স্থায়ী কমিটির সংসদ বিষয়ক কমিশনের অর্থনৈতিক আইন অফিসের উপ-পরিচালক ইয়্যাং হেকিংয়ের বরাত দিয়ে পিপলস ডেইলি জানিয়েছে, স্থল ও খামারে প্রজনন করা বন্যপ্রাণীসহ সব বন্যপ্রাণী এই আইনের দ্বারা সুরক্ষিত। খাওয়ার উদ্দেশ্যে স্থল বন্যপ্রাণী শিকার, বাণিজ্য ও পরিবহনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই আইনে।
ইয়্যাং আরও বলেন, জলজ প্রাণী, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এবং অন্যান্য প্রাণী যেগুলো বহু ধরে দেশে প্রজনন করা হচ্ছে, এগুলো এই নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈজ্ঞানিক ও চিকিত্সা সংক্রান্ত উদ্দেশ্যে বন্যপ্রাণী ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে, তবে এ সংক্রান্ত নিয়মকানুন আরও জোরালো করা হবে।
একটি পরিবেশবাদী সুরক্ষা গোষ্ঠী চায়নিজ ন্যাশনাল কমিটি ফর ম্যান অ্যান্ড বায়োস্পিয়ারের একজন সদস্য ঝৌ হাইজিয়াং বলেছেন, অবশেষে বণ্যপ্রাণী খাওয়া ও বিক্রির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী রক্ষায় এটা একটি বড় পদক্ষেপ।
অবৈধ বন্যপ্রাণী মার্কেট ও বিক্রির ওপর অভিযান চালানো হবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এমন মন্তব্যের পর এনপিসি’র স্থায়ী কমিটি এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলো।
১৯৮৯ সালে প্রণীত হওয়া চীনের বিদ্যমান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বন্যপ্রাণী এবং বন্দি অবস্থায় প্রজনন হওয়া প্রাণী খাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে ওই আইনে।
এ/ এমকে
মন্তব্য করুন