ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাশ্মীরী নেতা আলী শাহ গিলানির চিঠি
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরায় এবং এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন কাশ্মীরের হুররিয়াত কনফারেন্সের নেতা সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখা এক চিঠিতে আলী শাহ গিলানি বলেন, এটি হয়তো ইমরান খানের সঙ্গে তার শেষ যোগাযোগ হতে পারে; বয়স তাকে হয়তো আর যোগাযোগের সুযোগ দেবে না।
আলী শাহ গিলানির এই চিঠির একটি কপি পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন হাতে পেয়েছে।
চিঠিতে ইমরান খানকে উদ্দেশ করে গিলানি বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ব্যাপারে ভারত সরকারের অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং জম্মু-কাশ্মীরের নির্যাতিত নিপীড়িত জনগণের পক্ষে আপনি যেভাবে কথা বলেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারতীয় দখলদারিত্ব ও অন্যায় আচরণ হতে মুক্তি লাভের জন্য রাজ্যের জনগণ বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রাম করে এসেছেন। সেই থেকে কাশ্মীরের নারী, পুরুষ এবং শিশুরা সংগ্রামকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮, ২০১৮, ২০১০ ও ২০১৬ সাল মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দিন দিন স্বাধীনতার এ সংগ্রাম জোরদার হয়েছে যা ভারত নস্যাৎ করতে ব্যর্থ। ভারতের অবৈধ ইচ্ছা কাশ্মীরের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে তারা ব্যাপকভাবে এ অঞ্চলে কারফিউ জারি করেছে। এজন্য তারা টেলিফোন ও ইন্টারনেটসহ সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমকে বন্ধ করে দিয়েছে। হাজার হাজার শিশু, বৃদ্ধ, কিশোর, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ছাত্র, ডাক্তার, হুররিয়াতের নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনকে আটক করা হয়েছে এবং ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। শত শত তরুণের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে।
আলী শাহ গিলানি চিঠিতে আরও বলেছেন, ভারতীয় সেনারা পিলেট গান ব্যবহার করছে এবং কাশ্মীরী তরুণদেরকে অন্ধ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতির আওতায় কাশ্মীরের জনগণের ওপর নিগ্রহ করা হচ্ছে, যৌন হয়রানি এবং এমনকি পুরুষদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ভারতের দখলদার বাহিনী বাড়ি বাড়ি ঢুকে তর্ক-বিতর্ক করছে এবং নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে। মা-বাবার কাছে তাদের তরুণী মেয়েদের বয়স জানতে চাওয়া হচ্ছে এবং দখলদার বাহিনী জনগণের কাছে বলছে যে, তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে কাশ্মীরের মুসলিম নারীদের অসম্মান করা। বহু মানুষকে হুমকি দেয়া হয়েছে যে, তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হবে এবং বহু মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়ার জন্য তাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: কাশ্মীরে বাস খাদে পড়ে নিহত ১৬
---------------------------------------------------------------
সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি বলেন, লাদাখের মুসলমানেরাও বর্বর ভারতীয় বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ ওই অঞ্চলের জনগণও ভারতের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছেন।
গিলানি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাবে কাশ্মীরের জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া হয়েছে ৫ আগস্টের সিদ্ধান্ত তার বিরোধী। যেভাবে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনারা ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাদের ভূমি জবর দখল করে নিচ্ছে এবং অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে, ঠিক একইভাবে ভারতের সেনারাও এই কাজ করছে। উন্নয়নের নামে কাশ্মীরের জমি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভূমিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত করার জন্য। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের নামে আমাদের সম্পদকে প্রতারণার মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হচ্ছে এবং দখলদারিত্বের মাধ্যমে কাশ্মীরী জনগণকে সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে।
চিঠির শেষ পর্যায়ে আলী শাহ গিলানি বলেছেন, ভারতের এসব পদক্ষেপের আরেকটি অর্থ হচ্ছে পাকিস্তানের সংহতি ও নিরাপত্তাকে ধ্বংস করা। ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের অর্থনীতি, দেশটির পানিসম্পদ এবং প্রায় সব ধরনের জীবন পদ্ধতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
এ অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান এবং বিভিন্ন দেশের সরকারি পর্যায়ে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।
এ/পি
মন্তব্য করুন