• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

দৃশ্যম চলচ্চিত্র দেখে কৌশলে খুন, গ্রেপ্তার বিজেপি নেতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫১
ছবি: আনন্দবাজার

দৃশ্যম চলচ্চিত্রে অজয় দেবগণ ওরফে বিজয় সালগাওকর একটি খুনের ঘটনা চাপা দিতে তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘোরাতে কুকুর মেরে মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন। সিনেমায় নিহত যুবক ছিলেন গোয়া পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের (আইজি) ছেলে। আইজি এবং গোয়া পুলিশের গোয়েন্দারা অনেকদিন ধরে তদন্ত চালিয়েও এই খুনের কিনারা করতে পারেননি। উদ্ধার হয়নি মরদেহ। বিজয় সালগাওকরকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এই দৃশ্য প্রায় হুবহু নকল করে ২০১৬ সালে মধ্যপ্রদেশের ইনদোর শহরে টুইঙ্কল দরগে নামের ২২ বছরের এক তরুণীকে খুন করা হয়। কিন্তু বিজয় সালগাওকরের মতো বাস্তবের ইনদোরের বিজেপি নেতা জগদীশ কারোতিয়া ওরফে কাল্লু পেহলওয়ানের(৬৫) সৌভাগ্য হয়নি বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।

রোববার গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, শুধু একই কৌশল নয়, দৃশ্যম সিনেমা দেখেই অভিযুক্ত জগদীশ খুন করেন এই তরুণীকে। শেষপর্যন্ত দুই বছর তিন মাস পর জগদীশকে আটক করে পুলিশ। তার তিন ছেলে অজয় (৩৬), বিজয় (৩৮) ও বিনয় (৩১) এবং এক সহযোগী নীলেশ কাশ্যপকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইনদোরের বনগঙ্গা এলাকার বাসিন্দা টুইঙ্কলের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বিজেপি নেতা জগদীশ। কিছুদিন সম্পর্ক চলার পর বিবাদ শুরু হয় ২০১৬ সালের মাঝামাঝি। তখন জগদীশকে বিয়ে করতে বলেন টুইঙ্কল। কিন্তু তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার করা জগদীশ এতে রাজি হননি। টুইঙ্কলও নিজের দাবিতে অনড় ছিলেন।

পুলিশের দাবি, সম্পর্কের এই টানাপড়েনের জেরে নিজের পরিবারে অশান্তি এড়াতে টুইঙ্কলকে খুনের পরিকল্পনা করেন জগদীশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, হত্যার আগে তারা দৃশ্যম ছবিটি দেখেন। অবশেষে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর টুইঙ্কলকে প্রথমে গলা টিপে খুন করেন। দেহ পুড়িয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেন অভিযুক্তরা। এরপর তদন্তের মোড় ঘোরাতে একটি কুকুর মেরে কাছাকাছি একটি জায়গায় মাটিতে পুঁতে রাখেন তারা।

ইনদোরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) হরিনারায়ণচারী মিশ্র বলেন, যে এলাকায় কুকুরটি পুঁতে রাখা হয়, সেই এলাকাতে অভিযুক্তরা রটিয়ে দেন খুনের বিষয়টি। সেই সূত্রে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে পুলিশ কুকুরটির দেহাবশেষ ছাড়া কিছুই পায়নি।

কিন্তু তদন্ত থামেনি। টুইঙ্কলের পরিবারের লোকজন জগদীশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। স্থানীয় এক বিজেপি নেতার প্রভাবে পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওঠে। ইতোমধ্যে টুইঙ্কলকে যেখানে খুন করা হয়, সেখান থেকে তার চুড়ি এবং অন্যান্য অলঙ্কারের পোড়া অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করেও কোনও সূত্র মেলেনি। এদিকে কুকুরের দেহাবশেষ উদ্ধারের ঘটনায় রীতিমত বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন গোয়েন্দারা।

এরপর জগদীশ ও তার এক ছেলেকে গুজরাটের একটি ল্যাবরেটরিতে ব্রেন ইলেক্ট্রিক্যাল অসিলেশন সিগনেচার(বিইওএস) টেস্ট করায় পুলিশ। এটা একধরনের নিউরো সাইকোলজিক্যাল প্রযুক্তি, যাতে জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধী সাধারণত সত্যি কথা বলেন বলেই ধরে নেয়া হয়। এই কারণে এটা ব্রেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বলেও পরিচিত।

ডিআইজি মিশ্র বলেন, ইনদোরের কোনও খুনের ঘটনায় প্রথমবারের মতো এই ধরনের পরীক্ষা করা হলো। এই পরীক্ষাতে জগদীশ ও তার ছেলে খুনের কথা স্বীকার করেন। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে তারা দৃশ্যম চলচ্চিত্রের বিষয়টিও জানান।

তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি খুনের আগে অভিযুক্তরা একসঙ্গে দৃশ্যম সিনেমা দেখেছিলেন। সেখান থেকেই ‘অনুপ্রাণিত’হয়ে জগদীশ ও তার ছেলেরা টুইঙ্কলকে খুন এবং কুকুর মেরে পুঁতে দেয়ার পরিকল্পনা করেন।

প্রসঙ্গত, মালয়ালম চলচ্চিত্র দৃশ্যমের অনুকরণে বলিউডেও একই নামে ছবি মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্র বিজয় সালগাওকরের ভূমিকায় অভিনয় করেন অজয় দেবগণ। সিনেমার গল্পে একটি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পে বিজয়ের ১২ বছরের পালিতা মেয়ে অঞ্জুর গোসল করার দৃশ্য ধারণ করে সমীর দেশমুখ ওরফে ‘স্যাম’ নামে এক যুবক। এনিয়ে চলতে থাকে ব্ল্যাকমেল। ঘটনাচক্রে এই স্যাম গোয়ার আইজি মীরা দেশমুখের (টাবু) ছেলে। একসময় দেখা করার কথা বলে স্যামকে খুন করে অঞ্জু। বিজয়কে ঘটনাটি জানানোর পর মরদেহটি একটি নির্মীয়মাণ ভবনের নীচে পুঁতে দেন তিনি। অন্যদিকে একটি কুকুর মেরে পুঁতে দিয়ে সেই ঘটনা রটিয়ে দেয়া হয়।

কে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার পরও কমেছে দাম
বিদেশি কোনো প্রভুর ইন্ধনে ভারত বিরোধিতা করছে বিএনপি : শেখ পরশ
বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত : প্রধানমন্ত্রী
ভারত থেকে এলো ১ হাজার টন আলু
X
Fresh