• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘আপনি যাকে ফোন করেছেন তিনি ঋণখেলাপী’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:১৬
ছবি: বিবিসি বাংলা

চীনের নাগরিকদেরকে পয়েন্টের ভিত্তিতে ভালো-মন্দের একটি তালিকায় ওঠানোর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। দেশটির জনগণকে তাদের কাজকর্ম, আচার-আচরণের ভিত্তিতে পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে এবং সেই পয়েন্ট নথিভুক্ত হচ্ছে কম্পিউটারের বিশাল তথ্যভাণ্ডারে।

শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানায় বিবিসি বাংলা। কর্মকর্তারা জানায়, যারা বেশি পয়েন্ট পাবেন, তাদের জন্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভালো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আছে। আর যারা আইন ভাঙবেন, নিয়ম মেনে চলবেন না, তাদেরকে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে।

চীনে যেভাবে উচ্চপ্রযুক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। নাগরিকদের কাছ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ-সমালোচনাও থেমে নেই। বিবিসির সংবাদদাতা জন সাডওয়ার্থ যান দেশটির পূর্বাঞ্চলের রংচাং শহরে।

তিনি জানান, সরকারি ভবনে মানুষ প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত স্কোর জানার জন্য। প্রত্যেক নাগরিক শুরু করছেন এক হাজার পয়েন্ট নিয়ে। আর এটা ‘এ’ রেটিং হিসেবে নথিভুক্ত হচ্ছে। এরপর ভালো কাজ করলে কেউ তার পয়েন্ট দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়িয়ে নিতে পারেন। তখন তার রেটিং হয়ে যাবে ‘ডাবল এ’ বা ‘ট্রিপল এ’। আর মন্দ কাজ করলে পয়েন্ট নামতে নামতে ‘ডি’ রেটিংয়ে গিয়ে পৌঁছাবে।

তিনি আরও জানান, যদি কেউ নিজের পাড়ায় সেবামূলক কাজ করে, গরিবদের সাহায্য করে, বরফ খুঁড়ে অসমর্থ প্রতিবেশীর রাস্তা পরিষ্কার করে অতিরিক্ত ৬৫ পয়েন্ট পায়, তবে তার মোট পয়েন্ট হবে ১০৬৫। এর সুবাদে তিনি এখন বিনাখরচে চিকিৎসা সেবা পেতে পারবেন।

প্রশাসন বলেছে, আইন ভাঙলে নাগরিকরা পয়েন্ট হারাবেন। কিন্তু কোনও কোনও জায়গায় এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। নেতিবাচক স্কোরের পরিণাম বেশ খারাপ হতে পারে। এর ফলে ব্যাংক ঋণ পাওয়া বন্ধ হতে পারে। কোনও কোনও চাকরির জন্য আবেদন করার পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

দং জিয়াওপিং নামের এক গ্রামবাসী তার বাড়ির উঠানে ঝাড়ু দিতে দিতে জানান, ঘরের উঠান পরিষ্কার না রাখার জন্য তার দুই পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়েছে। এটা আমারই দোষ, আমি ভালোভাবে উঠান পরিষ্কার করিনি। এটা খুবই লজ্জার। তিনি ক্ষুব্ধ নন, বরং লজ্জিত।

চীনের অন্যত্র ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষকে লজ্জা দেয়ার প্রক্রিয়াও পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ঋণখেলাপীদের বাধ্য করা হচ্ছে তাদের মোবাইল ফোনে বিশেষ রিংটোন বসানোর জন্য। এই রিংটোনে বলা হচ্ছে, আপনি যাকে ফোন করেছেন, তিনি ঋণখেলাপী। তাকে বলুন আইন মেনে ঋণ শোধ করতে। চীনের নতুন এই সামাজিক পয়েন্ট ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য সামাজিক মূল্যবোধের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং আইন ভাঙা বা নিয়ম অগ্রাহ্য করার পরিণতিকে সামাজিক স্তরে নিয়ে যাওয়া।

রংচাংয়ের একটি মাছের রেস্তোরাঁর ম্যানেজার চাং সিয়া হাও জানান, পর্যবেক্ষকরা যখন তার রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করতে আসেন, তখন তারা দেখতে চান রান্না করা খাবার আর কাঁচা খাবার আলাদাভাবে রাখা হচ্ছে কিনা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালো পয়েন্ট থাকলে ভবিষ্যতে আমি যদি নতুন রেস্তোরাঁ খুলতে চাই, সেটা সহজ হয়ে যাবে।

চীনে একদলীয় শাসনব্যবস্থায় ক্রেতা ও ভোক্তাদের আস্থা খুব কম। সবকিছুই কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণে। সরকারি দপ্তরের বাইরে সাধারণ এক নাগরিক লিও চুনচান জানান, তার রেটিং যে খুব একটা বাড়বে তা তিনি আশা করেন না। সাধারণ নাগরিকের জন্য ‘এ’ রেটিং বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। এটা সম্ভব একমাত্র কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের জন্য।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সামাজিক এই পয়েন্ট ব্যবস্থা চীনের বিভিন্ন শহরে চালু হলেও এখনও তা অনেকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। অনেক সমালোচকের মতে, এই প্রকল্প পরিচালনা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, তার ওপর আছে দেশের প্রতিটি মানুষের আচার-আচরণের সব তথ্য সরকারি ভাণ্ডারে নথিভুক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হবার বড় ধরনের আশঙ্কা আছে।

আরও বলা হয়, এসব মোকাবেলা করে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির ১৩০ কোটি মানুষের জন্য এটা জাতীয় প্রকল্পে রূপ দেয়া কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এই প্রকল্প সফল করতে গেলে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সরকারকে ভাবতে হবে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে এই প্রকল্প ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

কে/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হলো দেশ
ডিএনসিসির সঙ্গে চীনের আনহুই প্রদেশের সমঝোতা স্মারক সই
ঢাকা সফরে আসছে চীনের দুই প্রতিনিধিদল
সামাজিকমাধ্যমে গুজব প্রতিহতে ব্যবস্থার নির্দেশ
X
Fresh