• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

এবার অ্যামনেস্টির পুরস্কার হারালেন সু চি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১২:১৬

যুক্তরাজ্যভিত্তিক অধিকার গ্রুপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার তারা প্রত্যাহার করেছে। মঙ্গলবার এক ঘোষণায় সংস্থাটি বলেছে, ‘যে মূল্যবোধের জন্য একদিন তিনি লড়েছিলেন সেটির সঙ্গে লজ্জাজনক বিশ্বাসঘাতকতার’ জন্য তার এই পুরস্কার কেড়ে নেয়া হলো। খবর সিএনএনের।

অ্যামনেস্টির মহাসচিব কুমি নাইডু বলেছেন, ২০০৯ সালে দেয়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড বাতিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রোববার তিনি মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী সু চিকে চিঠি লিখেছেন।

নাইডু লিখেছেন, আজ, আমরা গভীরভাবে হতাশ যে আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষায় চিরন্তন প্রতীক নন। অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স গ্রহীতা হিসেবে আপনার বর্তমান অবস্থান সমর্থন করতে পারে না অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং তাই গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা এটি প্রত্যাহার করছি।

জাতিগত অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নির্মমতায় তার ‘দৃশ্যত উদাসীনতা’ এবং ‘বাক স্বাধীনতায় অসহনশীলতা বৃদ্ধিতে’ সু চির নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেখ করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যামনেস্টি বলছে, তিনি তার দেশে মানবাধিকার রক্ষায় ‘রাজনৈতিক এবং নৈতিক কর্তৃত্ব’ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে এক সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিউনিটির আইকন সু চির বেশ কিছু সম্মানজনক পুরস্কার কেড়ে নেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মমতা ঘটার এক বছর পর গত সেপ্টেম্বরে সু চি বলেন, তার সরকার রাখাইন রাজ্যের অবস্থা আরও ভালোভাবে সমাধান করতে পারতো।

‘সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে রক্ষা করেছেন’ সু চি

রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া একটি গ্রাম

গত বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনী নির্মম অভিযান থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘোষণার পর অ্যামনেস্টি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালো।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, ধর্ষণ, হত্যা এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে পদ্ধতিগতভাবে তাদের জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের কারণে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়, যেখানে তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

নাইডু তার চিঠিতে লিখেন, ‘সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নির্মম নিপীড়ন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ এড়িয়ে যাওয়া ও ক্ষমার পথ বেছে নিয়েছেন’ সু চি। তার প্রশাসন ‘আন্তর্জাতিক পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও জবাবদিহিতা থেকে সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে রক্ষা করেছে।’

তবে সু চির প্রশাসন রাখাইন রাজ্যে যেকোনও ধরনের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী।

রোহিঙ্গা পরিবারগুলো কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারের বসবাস করলেও দেশটির সরকার তাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ মুসলিম অভিবাসী এবং ‘বাঙালি’ হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। অনলাইন ঘৃণামূলক বক্তব্য, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিভাজন এবং রক্তপাত উসকে দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে নাইডু লিখেন, আপনার প্রশাসন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো, বৈষম্য এবং শত্রুতা পৃষ্ঠপোষকতার ঘটনায় আমরা ভীত।

রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের ঘটনা ছাড়াও দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন ও শান রাজ্যেও সেনাবাহিনীর অভিযানের বিষয়টি উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি, যেখানে বেশ কয়েক বছরে ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে এক লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের কারাদণ্ড

মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে পার্লামেন্টে রয়েছে। পার্লামেন্টে ২৫ ভাগ আসন রয়েছে সেনাবাহিনীর। স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে সু চির যে ক্ষমতা রয়েছে তা ব্যবহার করেও তিনি মানবাধিকারের জন্য সুফলকারী সংস্কার করছেন না বলেও অভিযোগ অ্যামনেস্টির। অ্যামনেস্টি বলছে, ২০১৫ সালে সু চি ক্ষমতায় বসার পর থেকে উপনিবেশ আমলের নিপীড়নমূলক আইনের অধীনে অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে।

এ বছরের শুরুর দিকে দেশটির অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও রাখাইন রাজ্যে ১০ রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলেকে গণহত্যাসহ সেনাবাহিনীর নৃশংসতা তদন্ত করছিলেন।

এখন আর আইকন নন

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার সু চির বেশ কিছু সম্মানসূচক পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে। গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম সু চিকে দেয়া তাদের একটি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১২ সালে দেয়া সম্মানজনক এলি উইসেল অ্যাওয়ার্ড বাতিলের কারণে হিসেবে সংস্থাটি জানায়, সু চি রাখাইনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ‘বার্মায় সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও শাসনের বিরোধিতার’ কারণে ১৯৯৭ সালে পাওয়া সু চির ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তারও আগে সেপ্টেম্বরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট হিউ’স কলেজের মূল ফটক থেকে সু চির প্রতিকৃতি নামিয়ে ফেলা হয়। এই কলেজে একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট হিসেবে পড়াশোনা করেছিলেন সু চি।

গত মাসে কানাডার হাউজ অব কমন্স তার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পক্ষে সর্বসম্মতভাবে ভোট দেয়। ওইসময় ‘রোহিঙ্গাদের গণহত্যার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে’ বলেও স্বীকৃতি দেয় তারা।

২০০৯ সালে যখন সু চিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স দেয়া হয় তখন তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য তার শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ সু চিকে ওই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

অ্যামনেস্টির নাইডু বলেন, আমরা সু চি বা তাকে ছাড়াই মিয়ানমারের ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করে যাবো।

আরও পড়ুন :

এ/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ১৩ বিজিপি সদস্য
‘এক বন্ধুকে খুশি করতে অন্যের বিরাগভাজন হতে পারি না’
পালিয়ে এলেন মিয়ানমারের আরও ৪৬ সীমান্তরক্ষী
নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে রাতে বাংলাদেশে ঢুকল বিজিপির ৫০ সদস্য
X
Fresh