• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

হোয়াটসঅ্যাপে ছেলেধরা গুজবে ত্রিপুরায় আরও চারজনকে পিটিয়ে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০১ জুলাই ২০১৮, ১১:৫১
মোহিনি দেবি নাথ: গুজব ছড়িয়ে তার বোনকে আহমেদাবাদে পিটিয়ে মারা হয়েছে

ভারতে গত দেড় মাসে অন্তত ১৪ জন ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয়েছে। সবশেষ ঘটনাটি হয়েছে ত্রিপুরায়, সেখানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে গুজব রটানো হচ্ছে যে, বাইরে থেকে ছেলেধরার দল এসেছে। ওই ভিডিওটির উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, সেটি পাকিস্তানের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৈরি শিক্ষামূলক প্রচার ফিল্মের অংশ।

গুজরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যাসহ নানা রাজ্যে গণপিটুনি দেয়া হচ্ছে নিরীহ মানুষকে।

ত্রিপুরার পুলিশ বলছে, ২৭ ও ২৮ জুন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে ৪ জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সুকান্ত চক্রবর্তী নামের এক যুবক, যাকে ছেলেধরার গুজব রোধ করতে গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে পাঠিয়েছিল সরকার।

একজন নারীকেও ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছে। জনতার রোষে পড়ে মারা গেছেন উত্তরপ্রদেশ থেকে ত্রিপুরায় নানা জিনিস ফেরি করতে আসা এক ব্যক্তি। যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন পরে হাসপাতালে মারা যান।

ত্রিপুরা পুলিশের মুখপাত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল ক্ষিতিরঞ্জন দাস বলেন, কয়েকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে এই ছেলেধরার গুজবটা ছড়াচ্ছিল। মানুষ সেই গুজবে বিশ্বাস করে অনেক জায়গাতেই বহিরাগতদের আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছেন। যেখানেই আমরা জানতে পেরেছি এরকম ঘটনা, সেখানেই উদ্ধার করে আনা হয়েছে। কিন্তু তারমধ্যেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরকম কয়েকটা ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। সব কয়েকটি ঘটনা একই ধরনের। কোনও বিশেষ ডিজাইন রয়েছে কিনা এর পেছনে, সেটাও আমাদের তদন্তের অন্যতম দিক।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: ভারতের গুরুগাঁওয়ে ফের প্রকাশ্যে জুমার নামাজে বাধা
--------------------------------------------------------

ত্রিপুরা দক্ষিণাঞ্চলের ইন্সপেক্টর জেনারেল অরিন্দম নাথ জানাচ্ছিলেন, ঘটনাগুলোর তদন্ত যদিও এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জেরা করা হচ্ছে। সন্দেহ করা হচ্ছে যে, গাঁজা ও ফেনসিডিলের মতো মাদকবিরোধী অভিযান যেসব এলাকায় চালাতে শুরু করেছে পুলিশ, সেইসব এলাকাতেই ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গুজব ছড়ানো আটকাতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যে মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্তও তা চালু হয়নি।

তবে শুধু ত্রিপুরা নয়, এই একই গুজব গত মাস দেড়েকে ভারতের নানা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে।

মেসেজগুলোর ভাষ্য মোটামুটি একই রকম, কিন্তু একেকটি এলাকায় সেগুলোকে অনুবাদ করে দেয়া হচ্ছে। একটি ছোট ভিডিও জুড়ে দেয়া হচ্ছে মেসেজের সঙ্গে।

ভারতে ভুয়া খবর বা ছবির উৎস খুঁজে বের করে, এমন একটি ওয়েব পোর্টাল, অল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই ভিডিওটির উৎস তারা খুঁজে পেয়েছেন।

সিনহার ভাষায়, যে ভিডিওটি এইসব গুজব রটানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি আসলে পাকিস্তানের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৈরি একটি সচেতনতামূলক ফিল্মের অংশ। সেখান থেকে একটি ছোট ক্লিপ কেটে নিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিছু ছবিও ছড়ানো হচ্ছে- যেগুলো নানা জায়গা থেকে যোগাড় করা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে যেসব মেসেজ ছড়িয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা দেখছি যে, কাছাকাছি কোনও এলাকায় ছেলেধরার ঘটনা হয়েছে, এমনটাই লেখা হচ্ছে।

হোয়াটসঅ্যাপে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও লাগানো হয়েছে ভারতে

মেসেজগুলো আসল কিনা, তা খতিয়ে দেখার তাগিদও কেউ অনুভব করছে না। পরিচিত মানুষের কাছ থেকে একাধিকবার আসছে, তাই বিশ্বাস করে ফেলছে মানুষ, বলছিলেন প্রতীক সিনহা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনোরকম বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাই নেই। ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে তারা অশিক্ষিতই থেকে গেছেন। তারা যা দেখছেন, তাতেই বিশ্বাস করে ফেলছেন। আর এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ওপরে নজরদারি কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে এ ধরনের ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রেও রয়েছে বহু রকমের জটিলতা। যেমনটা বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গে সাইবার অপরাধের জন্য নিযুক্ত স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর বিভাস চ্যাটার্জি।

তিনি বলেন, গুজব ছড়ানোর মতো ঘটনার জন্য শাস্তির বিধান আইনে আছে ঠিকই কিন্তু সমস্যাটা হয়ে যায় এরকম ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রেই। এগুলো পুরোপুরি ইলেকট্রনিক তথ্য-প্রমাণ নির্ভর তদন্ত। কোনও ছবি বা কোনও টেক্সট কে ছড়াচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা ফেসবুক প্রভৃতির ক্ষেত্রে সহজ। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রামের মতো অ্যাপ, যেগুলো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে, সেগুলো অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। আবার যখন সার্ভিস প্রোভাইডারদের ওপরে তথ্যের জন্য নির্ভর করতে হয়, সেই প্রক্রিয়াটাও খুব জটিল। কারণ এইসব কোম্পানিগুলো অধিকাংশই বিদেশি এবং তারা তদন্তকারীদের প্রাইভেসি ক্লজ দেখিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য দিতে চায় না সব সময়।

ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনির একের পর এক ঘটনা এখন সামনে এলেও অতীতেও এই ঘটনা হয়েছে কলকাতাতেও। ১৯৮২ সালে কলকাতার বালিগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে ১৭ জন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। আর ১৯৯০ সালে কলকাতার কাছেই বানতলাতে ছেলেধরা সন্দেহে গণধর্ষণ করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক নারী কর্মকর্তাসহ তিনজন সরকারি স্বাস্থ্য অফিসারকে। তাদের মধ্যে একজন মারা যান।

আরও পড়ুন:

এ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির গুজব ছড়াচ্ছে বিএনপি : রেলমন্ত্রী
‘শেখ মুজিব কেবল বাংলাদেশের বন্ধু নন, তিনি ভারতেরও বন্ধু’
নতুন কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণা, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন 
আপনারা কোনো গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না : শাবনূর
X
Fresh