• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ছেলে নেতা হবে তাই নাম ঠিক করতে ভোটাভুটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ জুন ২০১৮, ১৪:১৬
কোলের এই শিশুটির নাম কী রাখা হবে সেটা ঠিক করতেই নির্বাচন

সন্তানের নাম কী রাখবেন, তা নিয়ে অনেক বাবা-মাই আজকাল বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। কেউ শরণাপন্ন হন কবি-সাহিত্যিকদের, কেউ খোঁজেন অভিধান, কেউ আবার চিরাচরিতভাবে পরিবারের বড়দের দেয়া নামটাই রেখে দেন।

কিন্তু এসব চেনা-জানা পদ্ধতির ধার ধারেননি ভারতের মহারাষ্ট্রের গোন্ডিয়া জেলার বাসিন্দা মিঠুন আর মানসী বাং। তারা আয়োজন করেছেন এক ভোটাভুটির। কারণ তাদের ছেলে বড় হয়ে নেতা হবে বলে ঠিকুজিতে দেখা গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।

গেলো ৫ এপ্রিল পুত্র সন্তান হয় বাং দম্পতির। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়েও আছে। কাপড় ব্যবসায়ী বাং বলেন, ছেলে হওয়ার পর আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে তার জন্মকুন্ডলি তৈরি করা হয়। শ্বশুরমশাই ঠিকুজি দেখে বলেছেন যে, ছেলে একদিন নেতা হবে বা সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হবে।

---------------------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের পরমাণু বোমা বেশি!
---------------------------------------------------------------------------------

তিনি বলেন, কিন্তু সেই ছেলের নাম কী রাখা হবে, তা নিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী অনেক ভেবেও কুল কিনারা করতে পারছিলাম না। আমার বড় ভাই আর তার স্ত্রী বলেছিলেন, ইয়ক্শ নাম রাখা যেতে পারে। দিদি আর বোনদের ছেলেমেয়েরা বলেছিল মামা, ইয়ুভান নামটা ভাল। আর দিদি-বোনেরা নাম দিতে চেয়েছিল ইয়োভিক।

এই তিনটি নামের মধ্যে কোন নামটি বেছে নেবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কেউই। বাংয়ের মাথায় তখন আইডিয়া আসে ভোট নেয়া যেতে পারে!

ভোট গ্রহণ চলছে

ব্যাস, যেমন কথা তেমন কাজ। সামাজিক কাজকর্মে জড়িত থাকার সুবাদে আর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে একজন সাবেক সংসদ সদস্য থাকার ফলে কীভাবে ভোটের আয়োজন করতে হয় সেটা তার কিছুটা জানাই ছিল।

মিঠুন বাং বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, আমাদের জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছুটা খাতির আছে। তাই তাদের কাছে একটা ইলেক্ট্রনিক ভোট যন্ত্র চেয়েছিলাম। তারা দিয়েও দিতেন হয়তো, কিন্তু আমার কয়েকজন বন্ধুই বারণ করলো। বলল যে, ওটা নির্বাচন কমিশনের সম্পত্তি। সেটা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। তখন ব্যালট পেপার ছাপা হলো। নির্বাচন কমিশনের আদলে ‘শিশুর নাম নির্বাচন কমিশন’ বানানো হল। আমাদের এক আত্মীয় আর একজন শিক্ষক এই কমিশনের সদস্য হলেন।

১৫ জুন ছিল তাদের সন্তানের নামকরণের দিন, মানে ভোটের দিন। ব্যবস্থা তো আগে থেকেই করতে হয়। তাই ব্যালট পেপার ছাপার পরে তৈরি হয়েছিল ব্যালট বাক্স। ভোট দেয়ার জন্য ঘেরা জায়গা, তিনটি নামের প্রস্তাব যারা দিয়েছিলেন, তাদের নামে হোর্ডিং - সবই ছিল একেবারে নির্বাচনের মতো।

বাং যে এলাকায় থাকেন, নাগপুরের কাছে গোন্ডিয়া জেলার সেই এলাকার নাম দেওরী তহশীল। গোন্ডিয়াতে কদিন আগেই ‘আসল’ উপনির্বাচন হয়েছে। বিজেপি’র এক সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আর সেই নির্বাচনে বিজেপি’র পরাস্ত হওয়া নিয়ে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে আলোচনাও হয়েছে অনেক।

তাই আত্মীয়-বন্ধুদের স্মৃতিতে সদ্য সমাপ্ত ‘আসল’ নির্বাচনের মতোই যাতে ভোটের ব্যবস্থাপনা হয়, সব ব্যবস্থাই করেছিলেন বাং।

ভোটের প্রচার চালানো হয়নি? জানতে চাওয়া হলে বাং হেসে বললেন, হ্যাঁ, তাও হয়েছে। আমি নিজে কয়েকটা হোর্ডিং লাগিয়েছিলাম অনুষ্ঠানের জায়গায়। আর যারা যে নাম পছন্দ করেছিল, তারা হোয়াটসঅ্যাপে নিজেদের ডিসপ্লে পিকচারটা প্রচারের জন্য পাল্টে দিয়েছিল। যেমন আমার বড় ভাই আর বৌদি লিখেছিলেন ‘ভোট ফর ইয়ক্শ’। দিদি আর বোনেদের ছেলেমেয়েরা দিয়েছিল ‘ভোট ফর ইয়ুভান’। আর আমরা যেহেতু নামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না, তাই আমি আর আমার স্ত্রী ডি পি বানিয়েছিলাম চিন্তিত মুখের একটা ছবি।

ভোটের আগের দিন সব অতিথি অভ্যাগতদের অনুরোধ করা হয়েছিল ভোট দেয়ার জন্য, যেমন করে থাকে নির্বাচন কমিশন। সন্ধ্যাবেলায় সবাই আসার পর যখন ঘোষণা করা হল ভোট দেয়া শুরু হচ্ছে, মঞ্চে লাইন লেগে গিয়েছিল।

বাং বলেন, অতিথিদের মধ্যে এলাকার সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন। তার অন্য জায়গায় যাওয়ার তাড়া ছিল। তাই ঘণ্টা দেড়েক পরে ভোট নেয়া বন্ধ করতে হয়। ৭০০ জনের মধ্যে ততক্ষণে প্রায় ২০০ জন ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তারপর ভোট গণনা শুরু হয়। আর চূড়ান্ত ফল ঘোষণাটাও নাটকীয় হয়েছিল। তিনটা পর্দা ধীরে ধীরে উঠে যায়, শেষেরটায় লেখা ছিল নির্বাচিত নামটা। পর্দাটা তুলে ভোটের চূড়ান্ত ফল জানিয়েছেন নানা পাটোলে, যিনি বিজেপির সংসদ সদস্য ছিলেন, এখন কংগ্রেসের রাজ্য নেতা।

কোন নামটা জিতল ভোটে?

অবশেষে ভোট গণনা

বাং বলেন, আমার দিদি আর বোনের ছেলেমেয়েরা যেটা দিয়েছিল, সেটাই। ইয়ুভান। এটা ভগবান শিবের আরেকটা নাম। ওরা খুব মজা পেয়েছে ফল ঘোষণার পর। যে দুটো নাম ভোট জিততে পারেনি, তাদেরও মঞ্চে ডাকা হয়েছিল। বৌদি তো গেলই না, বড় ভাই লজ্জা পাওয়া মুখে মঞ্চে উঠলো।

বাং দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের নাম ভূমি। তার নামকরণ অবশ্য এরকম ভোট নিয়ে করা হয়নি। তবে তা নিয়ে মোটেই মন খারাপ নেই মেয়েটির। তবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে নিজের বাবা-মায়ের আর ছোট্ট ভাইয়ের ছবি দেখানো হচ্ছে, তাতেই সে খুশি।

আরও পড়ুন :

লাইফ সাপোর্টে নওয়াজ শরিফের স্ত্রী

পাকিস্তানের নির্বাচনে ইমরান-আব্বাসি-মোশাররফের মনোনয়নপত্র বাতিল

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না : রিজভী
ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব!
বিএনপির ভারত বর্জন কর্মসূচির কারণ জানালেন নাছিম
ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার
X
Fresh