‘স্বামী ছিল আমার কাছে ফেরেশতা, কিন্তু একদিন সে আমাকে...’
বিয়ের দিন সাফার (ছদ্মনাম) পিরিয়ড চলছিল। সেই রাতে স্বামীর সঙ্গে মিলনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু বিয়ের রাতেই ৩৪ বছরের সাফাকে তার স্বামী ধর্ষণ করে। কুচকি, কব্জি এবং মুখে জখম নিয়ে তাকে ফুলশয্যার রাত কাটাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী ভাবলো আমি সহবাস করতে চাইছি না। তাই প্রথমে সে আমাকে পেটালো, হাত বেঁধে ফেললো। মুখ চেপে ধরলো যাতে আমি চিৎকার না করতে পারি। তারপর আমাকে ধর্ষণ করলো।
কিন্তু তারপরও সমাজের ভয়ে পুলিশের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাননি সাফা। কারণ অপরাধের শিকার মানুষদেরই অপরাধী হিসেবে গণ্য করা পুরুষতান্ত্রিক মিশরীয় সমাজের স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
আর নির্যাতিত যদি হয় নারী, তাহলে তো কথাই নেই। মিশরে প্রতিবছর গড়ে কমপক্ষে ৬,৫০০ নারী স্বামীর হাতে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি বা সহবাসের জন্য জবরদস্তির শিকার হন বলে সরকারি এক পরিসখ্যানে বলা হয়েছে।
এই নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছে সেখানকার নারীরা। ফেসবুকে ‘স্পিক আপ’ নামক একটি পেজে সাতশরও বেশি বিবাহিতা নারী নিজের জীবনের তিক্ত যৌন অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। তাদের মধ্যে একজন ২৭-বছরের সানা (ছদ্মনাম)। তিনি ওই ফেসবুক পেজে লেখেন, স্বামী ছিল আমার কাছে ফেরেশতার মত। বিয়ের এক বছর পর আমি তখন অন্তঃসত্ত্বা। সন্তান জন্মের জন্য তখন খুব বেশিদিন বাকি নেই।
তখন একদিন ছোটখাটো একটি ব্যাপারে আমাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হলো। সে আমাকে শাস্তি দিতে চাইলো। সে আমাকে ধর্ষণ করলো। তাতেই আমার গর্ভপাত হয়ে যায়।
এরপর থেকে সানা পরিবারের কোনো সাহায্য ছাড়া এক হাতে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকেন। কিন্তু জন্ম দেওয়ার আগেই পেটের সন্তান হারানোর শোক এখনও তিনি ভুলতে পারছেন না।
যৌন সম্পর্কের জন্য স্ত্রীর ওপর জবরদস্তি - বিশেষ করে বিয়ের রাতে – মিশরের বহু অঞ্চলে অলিখিত একটি সামাজিক রীতি। মিশরের সমাজে পুরুষরা ধরেই নেয় বিয়ের পর স্ত্রী যৌন সম্পর্কের জন্য রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকবে। এই অলিখিত সামাজিক রীতির ফলেই বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর মিশরে দার আল-ইফতা নামে যে প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় নানা বিষয়ে ফতোয়া দেয়, তারা এই বিতর্কের সমাধান করতে গিয়ে বলেছে– কোনো স্বামী যদি তার সাথে সহবাসের জন্য স্ত্রীর সাথে সহিংস আচরণ করে, তাহলে সেই হবে পাপী এবং আদালতে গিয়ে স্বামীর শাস্তি দাবি করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। সূত্র : বিবিসি
টিএস/পি
মন্তব্য করুন