ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যার মূলে শতবছর আগের যে ঘোষণা
প্রায় ১০০ বছর আগের একটি ঘোষণার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়। ফিলিস্তিনের ভুখণ্ডে জন্ম হয় ইসরায়েল রাষ্ট্রে। আর এর সূচনা হয়েছিল ‘ব্যালফুর ডিক্লারেশন’ নামের ওই ঘোষণার মাধ্যমে।
নাম প্রায় উল্লেখ নেই বললেই চলে । কিন্তু ইসরায়েলী বা ফিলিস্তিনী ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলে তাদের অনেকেই দু-চার কথা বলতে পারবে তার সম্পর্কে।
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ব্যালফুরের দেয়ার দিয়েছিলেন, তা মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলটির ইতিহাসের মোড় বদলে দেয়।
এরপর থেকেই আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সূচনা হয়।
এই ব্যালফুর ঘোষণার মধ্যে দিয়েই প্রথম ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল একটি চিঠিতে - যা তিনি দিয়েছিলেন জায়নবাদের একজন বড় প্রবক্তা লর্ড ওয়াল্টার রথসচাইল্ডকে। জায়নবাদীদের দাবি ছিল ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত জায়গাটি ইহুদিদের ঐতিহাসিক বাসভূমি, এবং এখানে ইহুদিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দিতে হবে।
ব্যালফুরের চিঠিতে মাত্র ৬৭ শব্দের একটি অংশে বলা হয়, ব্রিটিশ সরকার ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র গঠন সমর্থন করে। তবে একই সাথে বলা হয়: সেখানে অ-ইহুদি যে জনগোষ্ঠী এখন আছে তাদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।
ব্যালফুরের ঘোষণার ভাষা ইচ্ছাকৃত ভাবেই অস্পষ্ট রাখা হয়েছিল।
তবে ফিলিস্তিনিরা মনে করেন এর মধ্যে দিয়েই ইসরায়েলের সাথে তাদের সংঘাতের সূচনা। এর মধ্যে দিয়েই ইহুদি অভিবাসীদের ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের পথ তৈরি হয়।
ফিলিস্তিনিরা মনে করেন, এটা ছিল এক বিরাট প্রতারণা, বিশেষ করে যখন ব্রিটেনের অন্য আরেকটি প্রতিশ্রুতিতে অটোমান শাসনাধীন আরবদের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থনের কথাও বলা হয়েছিল।
আরবরা মনে করেছিল এই এলাকার মধ্যে ফিলিস্তিও থাকবে কিন্তু এতে সুনির্দিষ্টভাবে এরকম কিছু বলা হয় নি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে এবং ফিলিস্তিন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রিটেন। এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই ছিল আরব, তবে ইহুদিদের সংখ্যাও বাড়ছিল।
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে। ব্যালফুর ঘোষণাকে তার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবেই দেখা হয়, কারণ এটা ছিল ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অংশ যা তখন লিগ অব নেশন্সে অনুমোদিত হয়েছিল।
আর্থার ব্যালফুর ১৯২৫ সালে ফিলিস্তিন সফর করেছিলেন। তখন ইহুদিরা অধিবাসীরা তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দিয়েছিল।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরের রামাল্লায় একটি ফিলিস্তিনি স্কুলে এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা মনে করো যে ব্রিটেন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে?’
সবাই হাত তুললো। একটি ছাত্রী বললো, ‘হ্যাঁ, ঘোষণাটি অবৈধ ছিল কারণ ফিলিস্তিন তখনও অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। আরবরা ৯০ শতাংশ হলেও ব্রিটেন মনে করে তারা সংখ্যালঘু ‘
অন্যদিকে ইসরায়েলীরা ব্যালফুর ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবেই দেখে আসছে। উত্তর ইসরায়েলের একটি গ্রামের নামও দেয়া হয়েছে ব্যালফুরিয়া।
ওয়াই
মন্তব্য করুন