দিদির হাতেই থাকলো বাংলার ক্ষমতা
লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ওঠা গেরুয়া ঝড়কে বিধানসভা নির্বাচনে একার নেতৃত্বে রুখে দিলেন মমতা ব্যানার্জী। প্রমাণ করলেন বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। ম্যাজিক ফিগারের অনেক বেশি আসন নিয়ে আরও একবার দিদির হাতেই থাকলো বাংলা।
-
আরও পড়ুন ... বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হলেন যেসব তারকা
অথচ ভারতে ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থী দল বিজেপি চেয়েছিল দিদিকে বাদ দিতে। কিন্তু সেই মমতা ব্যানার্জীই ২০০’র বেশি আসন নিয়ে ফের রাজ্যমাতা হয়ে বসছেন পশ্চিমবঙ্গের মসনদে। তাও আবার টানা তৃতীয়বারের মতো।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল দলের এই নেত্রী ১০ বছর যাবৎ রাজ্যের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ১৪ বছর আগে নন্দীগ্রামে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে শিল্প কারখানা তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পথ করে নিয়েছিলেন মমতা।
২০১১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় বসে টিকে রয়েছেন এতদিন। সেই আসন আরও ৫ বছরের জন্য নিজের করে নিলেন তৃণমূল নেত্রী।
ভোটগণনার এদিন মমতার নিজ আসন নন্দীগ্রাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলেও শেষমেশ শুভেন্দুকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন। এর আগে মমতা ব্যানার্জী ১২০০ ভোট পেয়ে জিতে গেছেন বলে খবর রটেছিল।
শেষমেশ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ রিটার্নিং অফিসার যে তথ্য প্রকাশ করেন, সেই অনুযায়ী নন্দীগ্রামে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু। তৃমমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৭ ভোট।
এবারের নির্বাচনে ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট হওয়া ২৯২টিতে তৃণমূল জোট পেয়েছে ২১৩টি আসন। অপরদিকে বিজেপি জোট পেয়েছে ৭৮টি আসন। অন্যান্যরা পেয়েছে ১টি আসন। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র দুটি আসন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এবার অনেক আসন নিজেদের দখলে নিল ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থী দলটি।
-
আরও পড়ুন... পদোন্নতি পেলেন হারুন-অর-রশিদ
প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে সর্বকালীন রেকর্ডও তৈরি করল তৃণমূল। ২০১৬ সালে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও ২১১ আসন পেয়েছিল তৃণমূল। এবার বিজেপির প্রবল পরাক্রম সত্ত্বেও তৃণমূল ২১৩টি আসনে জয়ী হলো। এদিকে তৃণমূলের জয়ে মমতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিতে শুরু করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
বিজেপির শীর্ষ নেতা ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং টুইট বার্তায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন। তার পরবর্তী মেয়াদে তার প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।
-
আরও পড়ুন... পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলেন অমিত শাহ
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন। কী অসাধারণ লড়াই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকেও আমার শুভেচ্ছা।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন লিখেছেন, আরও একবার বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য মমতা দিদি এবং তৃণমূলকে শুভেচ্ছা। আপনাকে আপনার সরকারের পরবর্তী মেয়াদের জন্য শুভকামনা জানাই।
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতীয় রাজনীতিক ওমর আবদুল্লা টুইট বার্তায় বলেছেন, মমতা দিদিকে আন্তরিক অভিনন্দন। পশ্চিমবঙ্গের এই অসাধারণ জয়ের জন্য শুভেচ্ছা তৃণমূলের সব সদস্যকে। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি আপনাদের জন্য সবরকম প্রতিকূলতা তৈরি করেছিল। আপনারা যে সেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, মহিলা পরিচালিত এই রাজ্য। টিটকিরি সহ্য করে না, তা প্রমাণ হয়ে গেল।
বাংলার ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর বললেন, কংগ্রেস নয়, এই ভোটে জিতে গোটা দেশের প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে উঠলেন মমতা।
-
আরও পড়ুন ... হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে নন্দীগ্রামে জিতে গেলেন মমতা
গত ২৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছিল। শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। আট দফায় ভোট পড়ার অন্তর্বর্তী গড় ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার মোট আসন ২৯৪টি থাকলেও নির্বাচনের মধ্যে দুই প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় দুটি আসনের নির্বাচন স্থগিত হয়। ফলে আজ ২৯২টি আসনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস নজিরবিহীন জয় পেয়েছিল। সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও হিন্দুস্তান টাইমস
টিএস
মন্তব্য করুন