আরজ আফতাব : পাকিস্তান থেকে উঠে আসা এক শিল্পীর গল্প
আজ আপনাদের এক মিউজিক অ্যালবাম ও তার শিল্পীর গল্প শোনাবো। বিশ্বের এই দুর্যোগকালে অ্যালবামটি সম্প্রতিই প্রকাশ পেয়েছে। শিল্পী কেবল মহামারির এই কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জই নয় নিজের ভাইয়ের মৃত্যুর দুঃসহ বেদনা বুকে নিয়ে অ্যালবামটি প্রকাশ করেছেন।
শিল্পীর নাম আরজ আফতাব। পাকিস্তানি বংশোদ্ভুদ মার্কিন নাগরিক। গত শুক্রবার ‘ভালচার প্রিন্স’ নামে নিজের তৃতীয় অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই অ্যালবামের গানে আফতাব ফুঁটিয়ে তুলেছেন বুকচাপা কষ্ট। দেখিয়ে দিয়েছেন গানের মাধ্যমে সুনিপুণভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষমতা।
তার সেই ক্ষমতা দিন ফুরোতে না ফুরোতেই পেয়েছে স্বীকৃতিও। নামকরা অনলাইন মিউজিক ম্যাগাজিন পিচফোর্ক বিখ্যাত এই শিল্পীর সম্প্রতি প্রকাশিত অ্যালবামে প্রথমবারের মতো গাওয়া একক গান ‘মোহাব্বত’-কে বেস্ট নিউ ট্রাক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
৩৬ বছর বয়সী এই নারী শিল্পীর এই সুখ্যাতি একদিনে আসেনি। নিজেকে যোগ্য করে গড়েছেন। তারপর ২০১৮ সালে প্রথম আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। সেসময় আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) নেটওয়ার্ক তার একটি গানকে লুলাবাই বলে সম্মোধন করে। যা কিনা ঘরে ঘরে মায়েরা বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে গাইতো। এনপিআর তার সেই গানকে ২১ শতকের অন্যতম সেরা গান বলেও স্বীকৃতি দেয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস তার গানকে বছর সেরা ২৫টি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের তালিকায় স্থান দেয়।
এবার আসা যাক তার গানের কথায়। পাকিস্তানে জন্ম নেয়া নিউইয়র্কের ব্রুকলিন কাউন্টির এই শিল্পীর গানের ধরণই তাকে এত সুখ্যাতি এনে দিয়েছে। তার গানে পাওয়া যায় ইলা ফিজগার্লড, রেশমা কিংবা সুফি সঙ্গীতের রাণী আদিবা পারভিনের রেশ। সুর, সঙ্গীতে মিশে থাকে গ্রীক, মিশরীয় এবং স্প্যানিশ বুলি।
তার গানের ধরণ প্রকৃতরূপে সংজ্ঞায়িত করতে হলে বলতে হবে, তা হলো সুফি, পাকিস্তানি লোকগীতি, জাজ ফিউশন আর আধা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক অভুতপূর্ব মিলন। আরজ আফতাব বলেন, আমি ওগুলোর কোনোটাকেই এককভাবে আমার গানের ধরণ বলবো না। ওই ধারারই না আমার গান। প্রথম প্রথম আমি আমার গানকে নুতন-সুফিবাদ বলে উল্লেখ করতাম। কারণ আমাকে কিছু একটা বলতেই হতো।
তিনি আরও বলেন, একদিন আদিবা পারভীনের গান শুনতে শুনতে রুমি’র কবিতা পড়ছিলাম। তখনই বিশেষ এই গানের ধরণ আমার মাথায় আসে। যদিও আমার গানগুলোকে আমি এখনও ‘নিও-সুফিজম’ বলেই চালাচ্ছি, তারপরো আমি এসব গানকে আরও আলাদা কোনো নাম দিতে চাই।
চলুন জানা যাক কিভাবে উত্থান এই পাকিস্তানি শিল্পীর। যুবতী বয়সে তাকে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে একজন গায়ক হতে। তিনি বলেন, নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাকে অনেক কিছু আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। পরিবার-বন্ধুদের অমতের বাইরে তাদের থেকে আলাদা হয়েই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে।
আমেরিকায়ও তাকে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে। নিজের অ্যালবামে সঙ্গীতশিল্পী খুঁজতেও সমর্থক জোগাড় করতে হয়েছে তাকে। আবার বোস্টনের বার্কলে কলেজ অব মিউজিক কলেজে পড়ার জন্যও সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এই কলেজে সঙ্গীতবিদ্যা শিখতে নিজেকেই খরচ জোগাড় করতে হয়েছে তাকে।
এমনও দিন গেছে যে তার অ্যাকাউন্টে কেবল ২০ ডলারই অবশিষ্ট ছিল। টাইমস স্কয়ারে পারফর্ম্যান্সের সময় দর্শকদের রোষাণলেও পড়তে হয়েছে। তবে সবকিছু জয় করে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। জ্বলে উঠেছেন গায়কী শক্তিতে।
পাকিস্তানের সংস্কৃতি বিষয়ক জনপ্রিয় লেখক আহমার নাকবি জানান, পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে উঠে আসা আরজ আফতাব যেটা করেছে তা সত্যিই একক ও অকৃত্রিম। সে যা করেছে তা পাকিস্তানি সঙ্গীতশিল্পের এক উল্লেখযোগ্য কাহিনী হয়ে থাকবে। আর্থিক প্রতিকূলতা এবং সামাজিক বাধা সত্ত্বেও সে এগিয়ে গিয়েছে এবং করে দেখিয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা
টিএস
মন্তব্য করুন