• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

সুয়েজের ওপর নির্ভরতা কমাতে উত্তর মহাসাগরের পথে রাশিয়া

  ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪৩
Russia seeks to create alternative to Suez Canal via Northern Sea Route, RTV
জমাট বরফের মাঝ দিয়ে চলছে মালবাহী একটি জাহাজ (সংগৃহীত ছবি)

কদিন আগেই সুয়েজ খালে আটকে যায় আড়াই লাখ টনের বিশাল মালবাহী জাহাজ এভার গিভেন। প্রায় সপ্তাহখানেক বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্যিক জলপথ আটকে থাকায় সৃষ্টি হয় জাহাজজট, ক্ষতি হয় হাজার হাজার কোটি টাকা।

যেখানে মিশর বছরে এই সুয়েজ খাল থেকে আয় করে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলার। সেখানে কেবল এক এভার গিভেনের কারণেই বিশ্ব বাণিজ্যে ১০০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে।

এর ফলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দামও বেড়ে যায়। ঘটনার পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পরাশক্তিরা। তাদের মাথায় এখন সুয়েজের বিকল্প জলপথ।

সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ এবং তা সম্ভব না হলে বিকল্প একটি জলপথ তৈরির পরিকল্পনা ইসরায়েল বহুদিন ধরেই করছে। আর তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমেরিকা এবং পশ্চিমা অনেক দেশের। আর বিকল্প কোনো খাল তৈরিতে ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েরের পাশে থাকছে সংযুক্ত আরব-আমিরাত।

আবার খাল তৈরির বিকল্প হিসাবে ইসরায়েল সরকার ২০১২ সালে লোহিত সাগরে এইলাট বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগরে হাইফা বন্দর পর্যন্ত একটি রেললাইন প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরিকল্পনা ছিল, এশিয়া থেকে জাহাজ এসে তাদের পণ্য এইলাটে খালাস করবে, তারপর পণ্য ট্রেনে করে হাইফায় নিয়ে ইউরোপগামী জাহাজে তোলা হবে। কিন্তু জাহাজ ব্যবসায়ীরা দুইবার পণ্য ওঠানামার ঝামেলায় রাজি হবে কি না এবং সেই সঙ্গে এইলাট বন্দর বাড়তি কর্মকাণ্ডের চাপ সহ্য করতে পারবে কি না, সেই সন্দেহ থেকে ওই পরিকল্পনা চাপা পড়ে যায়। লোহিত সাগরে ইসরায়েলের বন্দর এইলাট।

সুয়েজ খালের বিকল্প পথ হিসেবে এই বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত একটি রেলপথের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের। লোহিত সাগরে ইসরায়েলি বন্দর এইলাট-সুয়েজ খালের বিকল্প পথ হিসেবে এই বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত একটি রেলপথের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের।

এমনকি মিশরের সুয়েজ খালের বদলে একটি বিকল্প রুট ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। দেশটির চবাহার বন্দরভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ করিডোর বা আইএনএসটিসি রুটটি ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে তেহরান জানায়, এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহনের জন্য সুয়েজ খালের তুলনায় এই রুটটির ব্যবহারে ঝুঁকি অনেক কম এবং অনেক বেশি লাভজনক।

আবার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ব্যবস্থায় একীভূত হওয়া ইস্তাম্বুল-লন্ডন-বেইজিং রেলপথ নিয়েও সরব হয়ে ওঠে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি সুয়েজের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়েছে পানামা খাল খনন করে।

রাশিয়াও সুয়েজ খালের বিকল্প হিসেবে আর্কটিক সাগরের মধ্য দিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের বাণিজ্য পথ তৈরির পরিকল্পনা করছে। রাশিয়ার জন্য, উত্তর মহাসাগরীয় পথ শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবেই নয়, সামরিক ও কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।

আর্কটিক ওশ্যান বা উত্তর মহাসাগর

তবে এই সামুদ্রিক পথেও বাঁধা ছিল রাশিয়ার। সেখানে জমতো বরফ। সেই বরফ কেটে মালবাহী জাহাজ যাতায়াতের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসব্রেকার নৌবহরকে সমুদ্রে নামায় রাশিয়া। তবে বৈশ্বিক উষ্ণয়নের ফলে জমাট বরফের বন্ধুর ওই সমুদ্রপথ দিনে দিনে রাশিয়াবান্ধব হয়ে উঠছে।

গত বছরের ২৭ জানুয়ারি রাশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র ইয়ামাল থেকে এলএনজি বোঝাই একটি জাহাজ উত্তর সমুদ্র উপকূল থেকে চীনে যেয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় ফিরে আসে। সে যাত্রায় কোনো বরফকাটা জাহাজের সহায়তার প্রয়োজন হয়নি।

এই সামুদ্রিক পথটি এখন আর আগের মতো বিপজ্জনক এবং দুর্গম নয়। ফলে প্রতিবছরই সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহণে জড়িত সংস্থাগুলোর কাছে এই সামুদ্রিক পথের কদর বাড়ছে।

২০১৮ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাতিমির পুতিন এই সমুদ্রপথের ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দেন। তিনি ২০২৪ সালের মধ্যে এই পথ দিয়ে ৩ কোটি টন থেকে বাড়িয়ে ৮ কোটি টন মালামাল পরিবহনের নির্দেশ দেন।

শুধু রাশিয়াই নয়, এই পথ ব্যবহারের দিক দিয়ে প্রথম সারিতে রয়েছে চীনও। ২০১৩ সাল থেকে চীনও এই সামুদ্রিক পথ দিয়ে ইউরোপে একের পর এক মালবাহী জাহাজ পাঠাচ্ছে। আর্কটিক কাউন্সিলের পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে ২০১৩ সালের চীনা ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড উদ্যোগ বাস্তবায়নের অন্যতম একটি পদক্ষেপ হিসেবে এই পথ ব্যবহার করছে চীন।

হিসেব অনুযায়ী সুয়েজ খাল হয়ে জাপানের টোকিও থেকে জার্মানির হামবুর্গে মালামাল পরিবহনে সময় লাগে ৪৮ দিন। যেখানে উত্তর সামুদ্রিক পথ দিয়ে ৩৫ দিনেই পৌঁছানো যায়।

এই সমুদ্র পথে চীনের ক্রমবর্ধমান চলাফেরার ফলে রাশিয়া এই রুটকে সক্রিয় করার প্রয়াসে আর একা নেই। ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড উদ্যোগ নিয়েও ইউরোপীয় বাজারগুলিতে সহজে পৌঁছতে পারছিল না চীন। কয়েক শতাব্দী ধরে রাশিয়ার মতই চীনও ইউরোপীয় বাজারে পৌঁছানোর জন্য দ্রুততর পথের সন্ধান করেছিল।

এক পর্যায়ে উত্তর সমুদ্র পথ খুঁজে পেয়ে দেশ দুটির বহুদিনের অনুসন্ধান সার্থক হয়। সমুদ্রপথটি আরও বাণিজ্যিক করার চেষ্টা করছে রাশিয়া ও চীন। বোঝাই যাচ্ছে সুয়েজ খালের প্রতি নির্ভরতা কমাতে এই সামুদ্রিক পথটি অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠছে।

সূত্র : আনাদুলু এজেন্সি

টিএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh