• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ক্লাবহাউজ কি ইরানে গণতন্ত্র ফেরানোর হাতিয়ার হয়ে উঠছে?

  ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০০
Is Clubhouse boosting democracy in Iran
সংগৃহীত

হঠাৎ করে গত সপ্তাহে ক্লাবহাউজে যোগ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। এরপর তা সংবাদের শিরোনাম হয়। ইরানে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে অডিও-চ্যাটভিত্তিক এই মোবাইল অ্যাপটি।

জারিফ দাবি করেন যে, তিনি সময় কাটানোর জন্য এই আলাপচারিতায় যোগ দিয়েছেন। তবে দীর্ঘক্ষণের এই আলাপচারিতায় চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের সহযোগিতা চুক্তি, বিশ্বশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি এবং নিজের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।

তিনি যে ভার্চুয়াল রুমে এই আলাপচারিতায় যোগ দেন সেখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৮ হাজারে পৌঁছায়। এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ ৮ হাজার মানুষ যেকোনো একটি চ্যাট রুমে প্রবেশ করতে পারে। ওই চ্যাট রুমে যোগ দেয়াদের মধ্যে অন্যান্য কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং বিদেশি বসবাসরত ইরানিরাও যোগ দেন।

কয়েকদিন পর ইরানের পরমাণু প্রধান আলি আকবর সালেহি আরেকটি রুমে যোগ দেন। সেখানে তিনি বলেন, পরমাণু আলোচনা নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল ভিয়েনায় সেটা সমাধান হয়েছে। এছাড়া ইরান বা যুক্তরাষ্ট্র যে আগে পুরোপুরি চুক্তিতে ফিরবে এমন ‘শিশুসুলভ’ আলোচনার সমাপ্তি ঘটেছে।

ইরানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজনের কাছে তাদের সমর্থক এবং বিরোধীদের সামনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে ক্লাবহাউজ।

এ ধরনের বা অন্যান্য যেসব রুম ইরানিরা ব্যবহার করছে, সেখানে তারা রাজনীতি, প্রযুক্তি, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা এবং মিউজিক বাজানোর মতো কর্মকাণ্ড করছে। তবে জারিফ ক্লাবহাউজের রুমে যোগ দেয়ার পর সেটা ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে।

অনেকেই বলছেন, এই অ্যাপ দেশটির গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করছে। কেননা ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দেশটিতে ধর্মতান্ত্রিক একটি সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ এই শাসন ব্যবস্থা থেকে বের হতে চাইছে দেশটির মানুষ।

আর তাছাড়া খুব কম দিনই এমন ঘটনা ঘটে, যেখানে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষজন কোনও জায়গায় এক হয়ে আলোচনার সুযোগ পায়। বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ ধরনের খুব একটা সুযোগ পান না। কিন্তু ক্লাবহাউজ সেই পথ তৈরি করে দিয়েছে।

এমতাবস্থায় ক্লাবহাউজকে অনেকেই টুইটারের সঙ্গে তুলনা করছেন। কেননা এক দশকের বেশি সময় আগে টুইটের যখন যাত্রা হয়, তখন এটিকে স্বাধীনতা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার বলে মনে করা হচ্ছিল।

কিন্তু অনেকেই মনে করছে, এসব রুমে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তা সাজানো। কেননা যে রুমে জারিফ ছিলেন, সেখানে মডারেটর ছিলেন একজন স্থানীয় সাংবাদিক। এছাড়া ইরানের বাইরে থাকা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

তবে তারা যে ধরনের প্রশ্ন করেছেন, তা অনেকের কাছে খুব একটা কড়া মনে হয়নি। জারিফ ওই রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মডারেটর সেটা স্বীকারও করে নেন। তিনি জানান যে, আলোচনার শর্তই ছিল যে তারা প্রশ্ন করতে পারবেন না।

আটলান্টিক কাউন্সিলের একজন সিনিয়র ফেলো গিসৌ নিয়া বলেছেন, এসব শর্তের অর্থ হচ্ছে ক্লাবহাউজে যেসব ইরানি কর্মকর্তারা যোগ দিয়ে কথা বলছেন তারা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় যা বলেন তার চেয়ে ভিন্ন কিছু বলছেন না।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ইসলামিক রিপাবলিকের কর্মকর্তারা ক্লাবহাউজে যোগ দিয়ে গণতন্ত্রের প্রসারে কাজ করছেন আমি এমনটা বিশ্বাস করি না। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইরানে গণতন্ত্রের প্রসার সম্ভব নয় বলে মনে করেন মাশা আলিমারদানিও।

ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল১৯ এর একজন ইন্টারনেট গবেষক এবং ইন্টারনেট হিস্ট্রির একজন ছাত্র মাশার ভাসায়, ইরানে ২০০৯ সালে গ্রিন মুভমেন্ট এবং আরব বসন্তের পর সেখানে গনতন্ত্রের বিকাশে প্রযুক্তির ভূমিকা খুবই নগন্য।

তিনি বলছেন, প্রযুক্তি কখনই গণতন্ত্র তৈরি করে না। আর আপাতত ক্লাবহাউজে গণতান্ত্রিক মতবিনিময় হচ্ছে মনে করা হলেও সেটা আসলে অনেকটা নিয়ন্ত্রিত এবং নিজেদের সুবিধা মতো ব্যবহার করছেন রাজনৈতিক কর্মকর্তারা।

আর সেই সুক্ষ্ণ খেলাটা কিন্তু বোঝার জন্য খুব একটা বুদ্ধির দরকার নেই। কারণ আগামী জুন মাসে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই ইরানে ক্লাবহাউজকে ঘিরে এই উত্তেজনা এবং তার পেছনে জুনের নির্বাচনের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রয়েছে, তা মেলানো খুব কঠিন কিছু নয়।

এবারের নির্বাচন অন্যমাত্রা পেয়েছে। কারণ যিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন তার হাত ধরেই বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি সাধিত হবে। এছাড়া অন্যান্য ইস্যু তো রয়েছেই। ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচন খুব একটা সফল বলা যায় না।

কারণ ওই নির্বাচনে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয়েছিল। যেটা বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি। আর তাই ভোটারদের টানতে সম্ভাব্য সবরকম পন্থা ব্যবহার করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। আর দেশটির সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা বেশ পরিলক্ষিত হয়েছে।

২০০৯ সালে ইরানে মতামত জরিপের জন্য ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে এসব অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। এগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় তারা। ২০১৩ সাল নাগাদ ভাইবার হঠাৎ করে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

এরপর একে একে টেলিগ্রাম, ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ইরানজুড়ে বিক্ষোভের সময় টেলিগ্রাম ব্লক করে দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সিগন্যাল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই এটিকে ব্লক করে দেয় ইরানের কর্তৃপক্ষ।

এদিকে একজন পর্যবেক্ষক বলছেন, এতকিছুর পরও এই প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা একজন ব্যবহারকারী তার নাম প্রকাশ করতে না চাইলেও কখন এই অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে তা ইউজার কন্টাক্ট লিস্টে তা জানিয়ে দেয়া হয়।

আর্টিকেল১৯-র মাশা বলছেন, এটা বিশ্বের যেকোনো দেশেই প্রাইভেসির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে ইরানের ক্ষেত্রে এটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ সেখানে ফোন নম্বর জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করে নিতে হয়। তাই কেউ নাম গোপন করলেও সরকার চাইলে তাকে শনাক্ত এবং মনিটর করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ক্লাবহাউজ কোনও মন্তব্য করেনি। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, কেবলমাত্র আইওএস ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছে। ফলে অনেকেই এর আত্ততামুক্ত থেকে যাচ্ছে।

বিভিন্ন ধরনের সম্ভাব্য ও ঝুঁকির মধ্যেই ভবিষ্যতে ইরানি কর্তৃপক্ষের সেন্সরশিপের মধ্যে পড়তে পারে এই অ্যাপ। ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মন্তাজেরি বলেন, ক্লাবহাউজ ব্লক করে দেয়ার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু এমন সম্ভাবনা উড়িয়েও দেননি তিনি।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে : সিইসি
পার্টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে : রওশন এরশাদ
ইরানে ফের হামলা হলে ইসরায়েল বলে কিছু থাকবে না : রাইসি
তিন দিনের সফরে ইরানের প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানে 
X
Fresh