১০ বছর পর সেনার হাতেই আবারও অবরুদ্ধ সু চি
দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দি ছিলেন। বিশ্বে মানবাধিকারের অন্যতম মুখ হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারও দেয়া হয়েছিল মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে। সেই সু চি আবারও ১০ বছর পর গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া সু চি গত ১০ বছরে যা অর্জন করেছেন হারিয়েছেন হয়তো এর চেয়ে বেশি। এখন আর তাকে বিশ্ব মানবাধিকারের প্রতীকও মনে করা হয় না।
মিয়ানমারের ইতিহাসের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে সামরিক শাসন। ওই অর্থে দেশটি তখনও সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খল থেকে বের হতে পারেনি। দীর্ঘদিন দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছেন সু চি। গৃহবন্দি হয়েছেন, নোবেল জিতেছেন। তবে ২০১০ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর পাঁচ বছর পর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২৫ বছর পর প্রথম অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মিয়ানমারে। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয় সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। দেশটিতে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে শুরু করে। যদিও বেসামরিক ওই সরকারের একটা অংশ তখনও নিয়ন্ত্রণ ছিল সামরিক বাহিনীর হাতে।
কিন্তু পাঁচ বছর পর যেন সেই পুরনো হিসাব-নিকাশ আবারও ফিরে এলো। সোমবার যখন সু চি এবং মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলডি’র শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয় তখন দেশটির আকাশে আবারও সামরিক শাসনের ছায়া দেখা দিয়েছে।
গত নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নিরুঙ্কুশভাবে জয় লাভ করে এনএলডি। ভরাডুবি হয় সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি)। সেই পরাজয় মেনে নিতে পারেনি সেনাবাহিনী। শুরু থেকেই তারা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে।
সবশেষ সোমবার সু চিসহ এনএলডির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। এদিন নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। যেই গণতন্ত্রের জন্য সু চি লড়াই করেছেন, সেই গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়েই তাকে ফের গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।
এমতাবস্থায় ক্ষুদ্ধ ও হতাশ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও অন্যান্য দেশ অনেকটাই সতর্ক পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
মিয়ানমারের অন্যতম প্রতিবেশী বাংলাদেশও জানিয়েছে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ দৃঢ়তার সঙ্গে গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করে। আশা করি, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থা বহাল থাকবে। একই সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে আমরা মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চাই।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। তখন রাখাইনে সামরিক অভিযানে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। দেখা দেয় মানবিক সংকট। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা সু চি সরকার এ নিয়ে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়। সেই সেনাবাহিনীই এখন তাকে গ্রেপ্তার করলো।
এ
মন্তব্য করুন