বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়ুচালিত জলযান সুইডেনের নতুন কার ক্যারিয়ার
ওশেনবার্ডকে ভবিষ্যতের জাহাজের মতো মনে হলেও প্রাচীন সামুদ্রিক জাহাজের সঙ্গে এর অনেকটা মিল রয়েছে। কারণ এটিও বাতাস দ্বারা চালিত। সুইডিশ সরকার ও কয়েক গবেষণা সংস্থার সহায়তায় ট্রান্সআটলান্টিক এই কার ক্যারিয়ারটি ডিজাইন করেছে সুইডেনের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালেনিয়াস মেরিন।
প্রচলিত কার ক্যারিয়ারের মতো ৬৫০ ফুট দীর্ঘ জাহাজটি ৭ হাজার গাড়ি বহনে সক্ষম। তবে এটার ডিজাইন খুবই ভিন্ন। জাহাজে হালে পাঁচটি ২৬০ ফুট লম্বা টেলিস্কোপিক পাল রয়েছে। এগুলো একটি অপরটিকে স্পর্শ না করেই ৩৬০ ডিগ্রি রোটেট করতে পারে। এছাড়া সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার জন্য বা খারাপ আবহাওয়া মোকাবিলায় পালগুলোকে ১৯৫ ফুট পর্যন্ত নামিয়ে আনা যায়।
স্টিল ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে এই পাল তৈরি করা হবে, যাতে ৩৫ হাজার টন এই শিপকে চালিত করতে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদিত হয়।
ওয়ালেনিয়াস মেরিনের ওশেনবার্ডের নেভাল আর্কিটেক্ট ও গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক মিকাইল রাজোলা বলেছেন, সলিড উইং সেইলের সাধারণ নীতি নতুন না হলেও ওশেনবার্ডের পাল নকশা করা একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
তিনি বলেন, এ যাবতকাল পর্যন্ত তৈরি করা সবচেয়ে লম্বা পাল এগুলো। পালের সর্বোচ্চ অবস্থান পানির পৃষ্ঠ থেকে ১০০ মিটারের (৩২৮ ফুট) বেশি উপরে অবস্থিত। যখন পাল এতটা উঁচুতে থাকে তখন বাতাসের দিক ও গতিবেগ অনেক সময় বদলে যায়।
রাজোলা বলেন, এই উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার সময় ওয়ালেনিয়াস তাদের তার বিদ্যমান জাহাজগুলোর শীর্ষে সেন্সর স্থাপন করেছিল এবং সমুদ্রের ৬৫০ ফুট উচ্চতায় বাতাসের গতিবেগ ও ভিরের (গতি পরিবর্তক) সাহায্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছিল।
তিনি বলেন, এসব তথ্য আমাদের একটি কার্যকর উইং এবং হাল সিস্টেম ডিজাইন করতে সহায়তা করেছে, যার মাধ্যমে বাতাস থেকে সর্বাধিক বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর যে দাবি দিন দিন জোরদার হচ্ছে, সেটির চাপ শিপিং শিল্পের ওপরও পড়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র বিষয়ক সংস্থা (আইএমও) বলছে, ২০১৮ সালে বিশ্বে মনুষ্যসৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে শিপিং শিল্পের ভূমিকা ছিল ২.৮৯ শতাংশ। ওই বছরই বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০৫০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ এবং এই শতাব্দীতেই শূন্যে নিয়ে আসার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করে।
এমন টার্গেট পূরণের লক্ষ্য নিয়েই ওশেনবার্ড ডিজাইন করা হয়েছে। ওয়েনিয়াস বলছে, তাদের শিপ প্রচলিত কার ক্যারিয়ারের চেয়ে ৯০ শতাংশ কম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করবে। কারণ চালনা এবং জরুরি প্রয়োজনের জন্যও ইঞ্জিন নির্ভর হওয়ায় এটা পুরোপুরি দূষণমুক্ত হবে না।
যেহেতু এটা বায়ু নির্ভর তাই এই জাহাজের সর্বোচ্চ গতি প্রায় ১০ নট পর্যন্ত হতে পারে। যা প্রচলিত কার ক্যারিয়ারের চেয়ে অনেক ধীরগতির। প্রচলিত কার ক্যারিয়ার ১৭ নট চলতে পারে। এর ফলে প্রচলিত কার ক্যারিয়ারের আটলান্টিক পাড়ি দিতে যেখানে সাতদিন লাগে, সেখানে ওশেনবার্ডে ১২ দিন লাগবে।
রাজোলা বলছেন, এই দীর্ঘ যাত্রার জন্য শিডিউলে কিছুটা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে; এছাড়া গাড়ি নির্মাতাদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতার বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকবে এবং আমরা যেভাবে চাচ্ছি সেভাবে হয়তো হবে না। তবে নির্মাতাদের কাছ থেকে আমরা খুব ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।
এ/পি
মন্তব্য করুন