• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ইসরায়েলকে কী স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সৌদি আরব?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ১১ অক্টোবর ২০২০, ১৭:১১
সৌদি আরব-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি
সৌদি আরব-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি

সৌদি আরবের শাসকরা ঐতিহাসিকভাবেই ছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের যে আচরণ করে তার সমালোচক। কিন্তু তারাই কি শেষ পর্যন্ত দেশটিকে স্বীকৃতি দেবার পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে? দেশটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তেমনটাই মনে হচ্ছে। এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবের টেলিভিশন আল-আরাবিয়াতে সম্প্রতি প্রচারিত হয়েছে একটি সাক্ষাৎকার। ওই সাক্ষাৎকার থেকেই সৌদি আরবের শিথিলতা নিয়ে এমন ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। সাবেক সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান আল-সউদ ওই সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ফিলিস্তিনিদের দাবি অবশ্যই ন্যায়সংগত। কিন্তু তারা যে এত বছরেও একটা শান্তি চুক্তি করতে পারলো না - তার জন্য ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব উভয়কেই সমানভাবে দায় নিতে হবে।

ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এখন বিভক্ত। পশ্চিম তীরে শাসনকাজ চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে গাজার ক্ষমতা দখল করে আছে ইসলামপন্থী আন্দোলন হামাস। প্রিন্স বান্দার এদিকেই ইঙ্গিত করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের নেতারা যখন নিজেদের মধ্যেই একমত হতে পারছেন না, তখন তারা একটা চুক্তিতে পৌঁছাবে কীভাবে?

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলে এ ধরনের বক্তব্য কখনোই প্রচার হতে পারে না - যদি বাদশা সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আগে থেকে এটা অনুমোদন না করেন। সেই বিবেচনায় এটা সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে সৌদি আরব ইসরায়েলের সাথে একসময় একটা চুক্তি করবে, এবং তার জন্য তারা দেশের মানুষকে প্রস্তুত করছে।

তবে সৌদি আরবের মানুষের কিছু অংশের মধ্যে অন্য দেশের লোকদের সম্পর্কে সন্দেহ ও জাতিবিদ্বেষ থাকলেও - এর পরিবর্তন হতে সময় লাগবে। সেকারণে হয়তো সৌদি আরব তার উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের অনুসরণ করে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করার জন্য তাড়াহুড়ো করছে না।

বিবিসির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রিন্স বান্দার ওই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে, ইসরায়েলের দিকে শান্তির বার্তা দেবার ইতিহাস সৌদি আরবের আছে। তিনি বলেন, বৈরুতে ২০০২ সালের মার্চ মাসে যে আরব শীর্ষ সম্মেলন হয় তাতে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে দেখেছিলাম শীর্ণকায়, টাকমাথা এক ভদ্রলোককে - যিনি ঘুরে ঘুরে নিখুঁত ইংরেজিতে ''যুবরাজ আবদুল্লাহ শান্তি পরিকল্পনা'' নামে একটা কিছুকে নানা জনের কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন । ইনি হলেন আদেল জুবায়ের। এখন তিনি সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আর তখন তিনি ছিলেন সৌদি যুবরাজের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা।

সেই বছর সম্মেলনে পরিকল্পনাটি ছিল প্রধান আলোচনার বিষয়, এবং আরব লীগ সর্বসম্মতভাবে তা অনুমোদন করেছিল। সেই পরিকল্পনার মূল কথাগুলো ছিল এই রকম: পশ্চিম তীর, গাজা, গোলান মালভূমি এবং লেবাবন সহ সকল অধিকৃত এলাকা থেকে ইসরায়েলী দখল প্রত্যাহার, এবং তার বিনিময়ে সমগ্র আরব বিশ্বের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্কের পূর্ণ স্বাভাবিকীকরণ। পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনিদের রাজধানী হিসেবে তাদের হাতে তুলে দেয়া। আর, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ব্যাপারে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানে পৌঁছানো - যারা ১৯৪৮-৪৯ এর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় বর্তমান ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত বা বহিষ্কৃত হয়েছিল।এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল। এমনকি তা কিছু সময়ের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এ্যারিয়েল শ্যারনকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছিল।

মনে হয়েছিল, ঐতিহাসিক আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরকালের মত অবসানের একটা সুযোগ এসেছে। কিন্তু এই পরিকল্পনা প্রকাশের ঠিক আগে নেতানিয়া শহরের এক ইসরায়েলী হোটেলে বোমা হামলা চালায় হামাস। নিহত হয় ৩০ জন আহত হয় শতাধিক। শান্তি আলোচনার ইতি ঘটে যায় ওখানেই। এর পর ১৮ বছর পার হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে বহু কিছু ঘটেছে, বহু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র আজও পায়নি। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ চলছেই - যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডন ও মিশর - সবাই ইসরায়েলের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠান করেছে, তাদের পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কও আছে। সত্যি বলতে কি, জর্ডন এবং মিশরের সাথে ইসরায়েলের এক ধরণের "শীতল শান্তি"-র সম্পর্ক বিদ্যমান - কিন্তু উপসাগরীয় দুই দেশ ইসরায়েলের সাথে দ্রুতগতিতে মৈত্রী গড়ে তুলছে।

হোয়াইট হাউসে বাহরাইন ও ইসরায়েল 'আব্রাহাম চুক্তি' স্বাক্ষরের কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা গেল, ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থার প্রধানরা মানামা সফর করছেন, দু'দেশের অভিন্ন প্রতিপক্ষ ইরানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করছেন।

অতীতেও দেখা গেছে, সৌদি আরব কোনো নীতি পরিবর্তন করার ব্যাপারে অত্যন্ত হুঁশিয়ার - এবং তারা পদক্ষেপ নেবার আগে তা যাচাই করে নিয়ে ধীর গতিতে এগোয়। কিন্তু রঙ্গমঞ্চে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আবির্ভূত হবার পর সেই ঐতিহ্য অনেক পাল্টে গেছে। দেশটিতে এখন মেয়েরা গাড়ি চালাচ্ছে, প্রকাশ্য বিনোদনের সূচনা হয়েছে, পর্যটনের দরজাও ধীরে ধীরে খুলছে।তাই সৌদি-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি হয়তো 'অত্যাসন্ন' নয়, কিন্তু এটি যে এখন 'এক বাস্তব সম্ভাবনা'- তাতে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন:
আর্মেনিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করলো আজারবাইজান
ইরান-চীন ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তির বিষয়ে ঐক্যমত
মরক্কোয় বাড়ছে দারিদ্র্য, বাদশাহ কিনলেন বিলাসবহুল প্রসাদ

এসজে/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব শেষ হওয়ার আগে ইরানে হামলা করবে না ইসরায়েল’
রিয়াদে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
গাজায় ইসরায়েলের পৃথক হামলায় নিহত ১৮
৩২ দেশকে ইসরায়েলের চিঠি, কি ছিল সেই চিঠিতে
X
Fresh