• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সবাই কী ব্যবহার করবে চীনের এই ডিজিটাল মুদ্রা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩১
One day everyone will use Chinese digital currency
বিটকয়েন সুপরিচিত একটি ক্রিপটোকারেন্সি

চীন রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি এমন এক ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে যার নাম ডিসিইপি এবং যাকে বলা হচ্ছে ক্রিপটোকারেন্সির জগতে নতুন শক্তির আবির্ভাব। অনেকে বলছেন, একদিন পৃথিবীর সবাই ব্যবহার করবে এই ডিসিইপি।

ক্রিপটোকারেন্সি হচ্ছে এমন এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যা কেন দেশের সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকেই তৈরি করা যায়, ব্যবহারও করা যায়। বিটকয়েন নামের ডিজিটাল মুদ্রার কথা অনেকেই জানেন।

এর সূচনা হয়েছিল ২০১৪ সালে পশ্চিম চীনের এক গোপন স্থান থেকে। তৈরি করেছিলেন শ্যান্ডলার গুও নামে চীনের এক উদ্যোক্তা। তার মনে হয়েছিল, বিটকয়েন একদিন পৃথিবীকে বদলে দেবে, ডলারকে হটিয়ে দিয়ে পরিণত হবে পৃথিবীর প্রধান মুদ্রায়।

কীভাবে তৈরি হয় ডিজিটাল মুদ্রা?

বিটকয়েন তৈরির জন্য লাগে বহু কম্পিউটার, তাই এতে বিদ্যুৎও খরচ হয় প্রচুর। শ্যান্ডলার গুও এজন্য ব্যবহার করেছিলেন একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, আর এতে তার অংশীদার ছিলেন চীনা সরকারের এক স্থানীয় কর্মকর্তা।

মেশিনগুলোর ক্ষমতা ছিল পৃথিবীর সব বিটকয়েনের ৩০ শতাংশ উৎপাদন করার- যাকে বলে মাইনিং। তবে বিটকয়েন প্রস্তুতকারক শ্যান্ডলার গুও এখন নতুন এক শক্তির উত্থান দেখতে পাচ্ছেন। সেটা হচ্ছে চীনা রাষ্ট্রের তৈরি একটি ডিজিটাল মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা।

এর নাম ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বা ডিসিইপি। বলা যায়, এটা হচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের একটি ডিজিটাল সংস্করণ। গুও বলছেন, এই ডিসিইপি একদিন পৃথিবীর সর্বপ্রধান মুদ্রা হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, একদিন পৃথিবীর সবাই ডিসিইপি ব্যবহার করবে।

কেন, কীভাবে সফল হবে ডিসিইপি?

গুও বলছেন, এটা সফল হবে কারণ চীনের বহু লোক এখন থাকেন চীনের বাইরে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয় ৩ কোটি ৯০ লাখ চীনা এখন বিদেশে বাস করেন। তিনি বলেন, এই লোকদের যদি চীনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে তাহলে তারা এই ডিসিইপি ব্যবহার করবে এবং তা এই কারেন্সিকে এক আন্তর্জাতিক কারেন্সিতে পরিণত করবে।

কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে এটা আসলে কতটা সফল হবে এবং আরও একটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে চীন হয়তো দেশের নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে ব্যবহার করতে পারে।

কীভাবে কাজ করে এই ডিসিইপি?

বিটকয়েনের মতোই একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিসিইপি, যাকে বলে ব্লকচেইন। এটা হচ্ছে এক ধরনের ডিজিটাল হিসাবের খাতা যা লেনদেন যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। ব্লকচেইনে সেই নেটওয়ার্কে করা সব লেনদেনের রেকর্ড রাখা থাকে, আর নতুন লেনদেন যাচাই করার কাজে ব্যবহারকারীরাও ভূমিকা রাখেন।

এর অর্থ হলো, ব্যবহারকারীরা যদি একে অপরকে তাদের ফোনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে চান- তাহলে তাদের ব্যাংকের কাছে যাবার দরকার হচ্ছে না।

এ বছরেরই শেষ দিকে চালু হচ্ছে ডিসিইপি?

চীন পরিকল্পনা করছে, এ বছরের শেষ দিকেই তারা ডিসিইপি চালু করবে। কিন্তু চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও এর কোনও নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। এ বছরের প্রথম দিকে চীনের বাছাই করা কিছু শহরে ডিজিটাল কারেন্সি ট্রায়াল শুরু হয়।

পুরোপুরি চালু হলে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যাংক কার্ডের সঙ্গে একটা ডাউনলোড করা ইলেকট্রনিক ওয়ালেট সংযুক্ত করতে পারবেন, যা দিয়ে অর্থ লেনদেন এবং স্থানান্তর করা যাবে।

বেইজিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রিভিয়ামের বিশ্লেষক লিংহাও বাও বলেছেন, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন চাপের মধ্যে আছে যাতে এই ডিজিটাল কারেন্সি চালুর প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়। কারণ তারা চায় না ফেসবুকের লিব্রা বিশ্বের প্রধান ডিজিটাল কারেন্সি হয়ে উঠুক ।

বাও বলেন, তারা মনে করে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত অর্থব্যবস্থার চাইতেও খারাপ কিছু হবে।

চীন চাইছে ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিতে

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীন চাইছে ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় পরিণত করতে, যাতে তা ডলারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা এবং তা চালানোর যন্ত্রগুলো গড়ে তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন মনে করছে, অন্য কিছু দেশ যদি চীনা মুদ্রা ব্যবহার করে তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্ব ভাঙতে পারবে, বলেন ‘বিটফুল’ নামধারী (তিনি আসল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন চীনা ক্রিপটোকারেন্সি পর্যবেক্ষক। তিনি মনে করেন, ক্রিপটোকারেন্সিই টাকার ভবিষ্যৎ।

এবং তার মতোই আরও কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, এই ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে চীন এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। চীনের ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অগ্রসর বলে মনে করা হয়। দেশটি এখন 'ক্যাশলেস সোসাইটি' অর্থাৎ নগদ অর্থের ব্যবহারবিহীন সমাজে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে।

গত বছর ২০১৯ সালে চীনে প্রতি পাঁচটি লেনদেনের চারটিই হয়েছে উইচ্যাট-পে বা আলিবাবার আলিপে ইত্যাদির মাধ্যমে।

ফেসবুক কি করছে?

ফেসবুক এখন তাদের ডিজিটাল কারেন্সি লিব্রার পরিকল্পনায় অনেক কাটছাঁট করেছে। তবে তারা নোভি নামে একটি ই-ওয়ালেট চালু করার পরিকল্পনা করছে এ বছরের শেষ নাগাদ যা হয়তো মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপেও পাওয়া যাবে।

লিব্রাকে নিয়ে চীন ও ফেসবুকের একটা চাপা রেষারেষি আছে, মনে করেন লিনহাও বাও। তবে একটা তফাৎ হলো ডিসিইপি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত, আর বিটকয়েন বা ইথারিয়াম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত - এটা কেন্দ্রীভূত নয় এবং অর্থব্যবস্থারও বাইরে।

সে কারণেই হংকংয়ের ক্রিপটোকারেন্সি বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট ম্যাকেঞ্জি বলেন, ডিসিইপি হচ্ছে বিটকয়েনের উল্টোটা। কারণ ক্রিপটোকারেন্সির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো অর্থকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা। বিটফুল বলেন, একারণে আমি বিটকয়েনকেই বেশি বিশ্বাস করি। কারণ এটা আমারই।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিটকয়েনের বড় দরপতন
X
Fresh