• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

একশ বছর আগে প্রাণঘাতী রোগের কারণে খোলা মাঠে যেভাবে শুরু হয়েছিল স্কুল

আরটিভি নিউজ ডেস্ক

  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:০৫
একশ বছর আগে প্রাণঘাতী রোগের কারণে খোলা মাঠে যেভাবে শুরু হয়েছিল স্কুল
ছবি: সংগৃহীত

করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা। প্রতিষেধক টিকা এখনও দুরস্ত। তাহলে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান শিক্ষার সময়টা যাতে নষ্ট না হয়- তার দিকে কি এখন তাকানোর সময় এসেছে?

আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসির সূত্রে জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রতি সাতজনে একজন যক্ষ্মায় ইউরোপ আর আমেরিকায় মারা যেত। ১৯২১ সালে যক্ষ্মার প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হয়। সেই প্রতিষেধক বিশ্বের সব দেশের কাছে পৌঁছতে সময় লেগে যায় আরও বেশ কিছু বছর।

সেসময় সেই পরিস্থিতিতে বাচ্চারা নিরাপদে স্কুলে ফিরতে পারে তার সমাধান হিসাবে জন্ম নেয় খোলা মাঠে স্কুল ব্যবস্থা।

বাগানে নিয়ে যাওয়া হয় হালকা ওজনের টেবিল ও চেয়ার। টিচাররা মাঠে বসে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, ভূগোল বা শিল্পকলা বিষয়ের ক্লাস নিতে শুরু করেন।

১৯০৪ সালে এই আইডিয়া প্রথমে চালু হয় জার্মানি আর বেলজিয়ামে। কিছুদিনের মধ্যেই এটা একটা আন্দোলন হিসাবে ছড়িয়ে পড়ে অন্য দেশে। লিগ ফর ওপেন এয়ার এডুকেশন নামে উন্মুক্ত স্থানে শিক্ষাদান বিষয়ে একটি গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠী ১৯২২ সালে প্যারিসে তাদের প্রথম অধিবেশন ডাকে।

১৯০৭ সালে আমেরিকায় খোলা মাঠে শিক্ষাদান শুরু হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখছে, রোড আইল্যান্ডের দুজন ডাক্তার সে বছর প্রস্তাব দেন শহরের খোলা জায়গাগুলোতে স্কুল বসাতে। এরকম ৬৫টি স্কুল খোলা হয় পরের দুবছরে। খোলা চত্বরে, উঁচু ভবনের ছাদে এবং এমনকি পরিত্যক্ত নৌকায়।

যক্ষ্মার সংক্রমণের ধরন ছিল কোভিড-১৯এর থেকে আলাদা। এটি বায়ুবাহিত রোগ। যক্ষ্মার জীবাণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকলে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। সিডিসি বলছে, যক্ষ্মার জীবাণু বাতাসে মিশে থাকে এবং তা সক্রিয় থাকে অনেক ঘণ্টা ধরে।

সাও পাওলোতে ফেডারেল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আন্দ্রে ডালবেন বলেন, সে সময় রক্তস্বল্পতা এবং অপুষ্টির পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি ছিল যক্ষ্মা। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে যেসব শিশু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হতো তাদের জন্য যক্ষ্মায় আক্রান্ত হবার বড় ঝুঁকি থাকত।

অধ্যাপক ডালবেন বলছেন, খোলা মাঠের স্কুলগুলোর আরেকটা মিশন ছিল পড়ালেখার সুযোগ চালু রেখে শিশুদের মানসিক গঠনের পাশাপাশি বাইরে খোলামেলা পরিবেশে ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের শারীরিক উন্নতি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা।

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ইতিহাস বিষয়ক অধ্যাপক ডায়ানা ভিডাল বলেন, খোলা মাঠে পাঠদানের স্কুলগুলো সেসসয় প্রসার লাভ করেছিল দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে। তখন সমাজ ও শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা হচ্ছিল।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা প্রথাগত শিক্ষার কাঠামো ভেঙে এমন স্কুল গড়ার চিন্তাভাবনা করছিলেন যার লক্ষ্য হবে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চায় উৎসাহ দেয়া, যাতে একটা শান্তিকামী এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করার মানসিকতা নিয়ে একটা প্রজন্ম তৈরি হয়। অধ্যাপক ডালবেন নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছেন ব্রাজিলে ১৯১৬ থেকে ১৯২০ ও ৩০এর দশকে এরকম বহু স্কুল তৈরি হয়েছিল।

অধ্যাপক ডালবেন এবং অন্য গবেষকরা বলছেন, বাইরে খোলা জায়গায় করোনা সংক্রমণের আশংকা যেহেতু কম বলেই এ পর্যন্ত গবেষণায় জানা গেছে, তাই কোভিড যতদিন আমাদের সাথে আছে, ততদিন এধরনের স্কুলে পাঠদানের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

এদিকে ভারত প্রশাসিত কাশ্মীরে উন্মুক্ত স্থানে পাঠদান ইতোমধ্যেই একটা সমাধান হিসাবে চালু হয়েছে। খোলা জায়গায় স্কুলে বাচ্চারা লেখাপড়া করছে। সিঙ্গাপুরে বহু বছর ধরে বাইরে খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া শেখানোর চল রয়েছে।

ফিনল্যান্ডে জঙ্গলে স্কুল বেশ জনপ্রিয়। দেশটিতে বনেজঙ্গলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে লেখাপড়া শেখার সংস্কৃতি বহুদিনের। ডেনমার্কেও উন্মুক্ত স্থানে বিশেষ দিনে ক্লাস করার প্রথা চালু রয়েছে। ডেনমার্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোভিড-১৯এর মধ্যে এই সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

অধ্যাপক ভিডাল বলেন, খোলা মাঠে স্কুল করলে শুধু প্রকৃতির সঙ্গেই যে নিবিড় একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাই নয়, তাতে ছেলেমেয়েরা শেখার ব্যাপারে আরও আগ্রহী হয়, তাদের শারীরিক তৎপরতা বাড়ে এবং মানসিকভাবেও তারা সমৃদ্ধ হয়। খোলা মাঠে পাঠদান বদ্ধ পরিবেশে লেখাপড়া শেখার থেকে অনেক বেশি সুফল বয়ে আনতে পারে।

অধ্যাপক ডালবেন বলেছেন, খোলা মাঠে স্কুল প্রতিষ্ঠার অতীত অভিজ্ঞতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে আমলে নিয়ে এখন কোভিড পরবর্তী যুগে উন্মুক্ত জায়গায় লেখাপড়া শেখানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এমনকি শহরেও এধরনের স্কুলের কথা ভাবা যেতে পারে। এ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য পার্ক ও জনসাধারণের জন্য খোলা জায়গাও কীভাবে বাড়ানো যায় সেটাও ভাবা উচিত। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh