• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পুরান ঢাকার বেশির ভাগ গোডাউনে নকল প্রসাধনীর কেমিক্যাল

মিথুন চৌধুরী

  ১৯ মার্চ ২০১৯, ১৩:৪৭

পুরান ঢাকার চকবাজার ও মৌলভীবাজারসহ আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নকল প্রসাধনী। দেশি-বিদেশি বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব পণ্য বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি নকল। আসল আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারকের মতো হুবহু স্টিকারও লাগানো রয়েছে এসব পণ্যের প্যাকেটের গায়ে। রয়েছে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ছাপ। এসব পণ্য ও তার কেমিক্যাল মজুদ করা হচ্ছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ চারশ কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারেও বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, মজুদ করা এসব কেমিক্যালের বেশিরভাগই ব্যবহার করা হয় নকল পণ্য তৈরিতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চকমোগলটুলী, মনসুর প্লাজা, মকিম কাটারার ফালু সুপার মার্কেট, মমতাজ মার্কেট, রুই হাট্টা লেন, খান মার্কেট, ফ্রেন্ডশিপ মার্কেট, মৌলভীবাজার, জোহা মার্কেট, শামীম মার্কেট, ফেন্সি মার্কেট, বড়কাটারা ও চক সার্কুলার রোডের চকসুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন অলিগলিতে তৈরি হচ্ছে ক্যামিক্যাল দিয়ে নকল প্রসাধনী।

------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর বেড়েছে পানির দাম
-------------------------------------------------------------

দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি অখ্যাত ব্রান্ডের ক্রিম, স্নো, পাউডার, কাজল, নেইলপলিশ, লিপস্টিক, লোশন, চুলের ক্রিম, শেভিং ক্রিম, শেভিং ফোম, শেভিং লোশন, শ্যাম্পো, সুগন্ধি ও বডি সেপ্র সবই রয়েছে।

নগরীর গুলিস্তান, চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, মহাখালী, গুলশান, মিরপুরসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ও ফুটপাতে মিলছে এসব নকল প্রসাধনসামগ্রী। শুধু তা নয় বিভিন্ন হাত ঘুরে নকল এ প্রসাধনী দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চকবাজার, লালবাগ, ইসলামবাগ, ইমামগঞ্জ ও নবাবপুর মিলে ১১২টি নকল পণ্যের কারখানা বন্ধ করে সিলগালা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ১৭৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। জরিমানা করা হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৪টি প্রতিষ্ঠান ও ৮টি কারখানার সিলগালা করে বিএসটিআই। ২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় সাম্প্রতি ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতের নেতৃত্ব দেয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট সারোয়ার আলমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রসাধনী পণ্যের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই নকল ও ভেজাল। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা এটা খুলে ব্যবহার না করবেন, ততক্ষণ বোঝার উপায় নেই যে এটা নকল পণ্য। আমরা নকল প্রসাধনী ঠেকাতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। অবৈধভাবে রাসায়নিক পদার্থ মজুদেও আমরা জরিমানা করে আসছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি এক সময় নকল প্রসাধনীর পরিমাণ কমে আসবে।

কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৪৫ ভাগ প্রসাধনী পণ্যের বিএসটিআইর সনদ নেই, ৭৫ ভাগ পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ও নকল পণ্য উৎপাদন করলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনে দোষী প্রমাণ হলে পঞ্চাশ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা এবং এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ আছে।

এ আইনের ৬০নং ধারা অনুযায়ী কোনো অভিযোগকারী সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারতে পারে না। আইনের ৭১নং ধারা অনুযায়ী ভোক্তা অধিকার কার্যবিরোধী কাজের অভিযোগে অভিযোগকারী প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোনো মামলা সরাসরি করা যায় না। ফলে অভিযোগের পরিমাণ খুব তেমনটা নেই। তবে আইনটি আরও জোড়ালো করা হলে প্রতারণার পরিমাণ কম আসবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, নকল প্রসাধনী তৈরিতে মাত্রাতিরিক্ত এসিড, পানি, মোম, সুগন্ধি ও পারফিউম ব্যবহার করা হয়। এসব ত্বকের ভেতর ঢুকে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এতে ত্বকে মেছতা, ব্রণ, ফাঙ্গাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে এর ব্যবহারে সহজেই চর্মরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বংশাল থানা এলাকার আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, লালবাগ থানা এলাকার শহীদনগর ও ইসলামবাগ এবং চকবাজার থানা এলাকায় রয়েছে ৪০০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। এসব ভবনে রাখা রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কেটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল ও টলুইনের মতো বিপজ্জনক সব রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ।

দাহ্য পদার্থ বাসাবাড়িতে রাখা কতটুকু আইনসঙ্গত এবং তা জীবনের জন্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ? এ বিষয়ে কথা হয় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধন সাথে।

তিনি বলেন, পুরান ঢাকার এসব রাসায়নিকের গুদামের ৯৮ শতাংশই অনুমোদনহীন। অগ্নি দুর্ঘটনার বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে এসব গুদাম। যে দুই ভাগের অনুমোদন রয়েছে, তা নদীর ওপারে। কিন্তু তারা শর্ত ভঙ্গ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কেমিক্যালের গুদাম তৈরি করেছে। কিন্তু তারা শর্ত ভঙ্গ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কেমিক্যালের গুদাম তৈরি করেছে। শুধু তাই নয় বাসাবাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে প্রসাধনী ও নানান পণ্য। যা পুরোপুরি অবৈধ।

এমসি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh