• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সম্মেলনের টুকিটাকি

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ২১:০৭

নেতা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। আয়োজক কমিটির প্রতিটি উপ-কমিটি নিজ নিজ অবস্থানে সফল বলেই মনে করা হচ্ছে। সম্মেলনের কোথাও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। এতো বড় একটি আয়োজনের পুরো খরচ ব্যয় হয় দলীয় ফান্ড থেকেই। দলীয় প্রধানের কড়া নির্দেশ ছিল কোনো চাঁদাবাজি হবে না, দলের বাজেট থেকেই সব খরচ শেষ করতে হবে। আয়োজক কমিটিও সে সক্ষমতা দেখিয়েছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা মেনে বড় রাজনৈতিক দলের এ সম্মেলন অনুকরণীয় হয়ে রইলো।

স্মরণকালের সেরা আয়োজন
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ এ স্লোগান নিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হয়ে গেলো দু’দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। বাপ্পা মজুমদারের সুরে সম্মেলনের থিম সং পরিবেশন করেন শিল্পীরা। দলীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গানের পর মূল আলোচনা শুরু হয়।

সড়কে সড়কে লাল-সবুজ
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুরো ঢাকাকে সাজানো হয় নতুন রূপে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে লাগানো হয় রঙিন বাতি। কয়েকটি স্থানে ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ বাজানো হয়। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ।

সম্মেলন ব্যয় কয়েক কোটি
সম্মেলন সফল করতে ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। তবে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সাজসজ্জা, আপ্যায়ন, শৃঙ্খলা, বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থাসহ সব ব্যয় এ বাজেটের মধ্যে ছিল। যদিও জানা যায়, এ খরচ হয়েছে ১০ কোটি টাকা।

নিরাপত্তায় ১০ হাজার পুলিশ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের নিরাপত্তায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তার নির্দেশনায় ছিল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। বসানো হয় প্রায় ২ হাজার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

১৬৫ ফুটের নৌকায় মঞ্চ
সম্মেলনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল নৌকার তৈরি বিশাল মঞ্চ। যার আয়তন ১৬৫ ফুট। উদ্বোধনী ওই মঞ্চে ছিল ১৫০ আসন। বিশাল প্যান্ডেলের ভেতরে ও বাইরে ছিল ৪০ হাজার আসন। প্যান্ডেল ও এর আশেপাশে সুশৃঙ্খলভাবে সম্মেলন উপভোগের জন্য ১৬টি বড় পর্দার ব্যবস্থা ছিল।

১১ দেশের ৫৫ রাজনীতিবিদের অংশগ্রহণ
প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও বিশ্বের মোট ১১ দেশের ৫৫ জন রাজনীতিবিদ এতে অংশ নেন। রাশিয়া, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, অস্ট্রিয়া, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কাউন্সিলর ৬ হাজার ৫৭০
৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর সারাদেশে কাউন্সিলে যোগ দেন। সমসংখ্যক ডেলিগেট অংশ নেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে সম্মেলনে।

ফেসবুক লাইভ
সম্মেলনে এবার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ফেসবুক লাইভ। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দিনব্যাপী সম্মেলন লাইভ করা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেন খুব সহজে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সম্মেলন দেখেছেন। এছাড়া ফেসবুকে দেশ বিদেশের অতিথিদের বক্তব্য ও গুরুত্বপূর্ণ ছবি দেয়া হয়েছে। সেখানে অতিথিদের পরিচিতিও তুলে ধরা হয়। যা আয়োজনটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

ঘোষণাপত্রই আসছে নির্বাচনের ইশতেহার
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটিই পরবর্তী নির্বাচনে ছায়া ইশতেহার হিসেবে কাজ করবে। সদ্য ঘোষিত ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দারিদ্র্য বিমোচন, যুদ্ধাপরাধী ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার, সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।

চাঁদা বেড়েছে ১০০ টাকা, বেড়েছে পদও
আওয়ামী লীগের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছেন কাউন্সিলররা। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে দলীয় পদ ও চাঁদার পরিমাণ। অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে কার্যকরী কমিটির সদস্য ৭৩ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮১ জন। জাতীয় কমিটি ১৭৮ থেকে ১৮০ জনে বাড়ানো হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আরো ৪ জন বাড়িয়ে ১৯ জন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও। যুগ্ম-সম্পাদক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ জনে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে ৮ জন করা হয়েছে। এছাড়া দলীয় সদস্যদের চাঁদা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০০ টাকা।

দলীয় তহবিল ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তহবিলে রয়েছে ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কাউন্সিলে দলীয় বাজেট পাসের সময় এ কথা জানানো হয়। তবে গেলো আগস্টে নির্বাচন কমিশনে দেয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, গেলো বছর শেষে আওয়ামী লীগের তহবিলে ছির ২৩ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টাকা। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

শেখ হাসিনার সভাপতি না থাকার ঘোষণা
রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় ২০তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই পর্বে শেখ হাসিনা নিজেই সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি চান। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৭০ বছর। ৩৫ বছর দলের নেতৃত্বে ছিলাম। এখন আমার বিদায় নেবার পালা। আশা করি আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করবেন।’ যদিও কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেবার জন্য শেখ হাসিনাকেই ফের সভানেত্রী নির্বাচিত করেন।

নতুন চমক, নতুন চাঁদ
অষ্টমবারের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেও চমক দেখিয়ে তার রানিংমেট হয়েছেন গেলোবারের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর ওই পদ থেকে বাদ পড়লেন দু’বারের সফল সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যদিও তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

বাদ পড়লেন সতীশ-লেনিন
২০তম কাউন্সিলের মাধ্যমে আগের কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রবীণ নেতা সতীশ চন্দ্র রায় এবং নূহ-উল-আলম লেনিন।

সভাপতিমণ্ডলীর নতুন সদস্য
প্রথমবারের মতো দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, রমেশ চন্দ্র সেন, আব্দুল মান্নান খান, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও নুরুল ইসলাম নাহিদ।

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকে আরো একজন
নতুন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুর রহমান। এছাড়া গেলো বছরের তিন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবীর নানককেও এ পদে রাখা হয়েছে।

মন খারাপ তোফায়েল-আমুদের
ধারণা করা হয়েছিল আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সভাপতিমণ্ডলীতে ফিরছেন। এমনটা ভেবে উজ্জীবিত ছিলেন তারাও। কিন্তু দিন শেষে মন খারাপ নিয়েই ঘরে ফিরতে হলো প্রবীণ এ রাজনীতিকদের।

কাউন্সিলে যায়নি বিএনপি
আগে ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি দল যোগ দেয়নি। তাদের অবিযোগ, বিএনপির কাউন্সিলে সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছে। কাউন্সিলের অনুমতি দিয়েছে ২-৩ দিন আগে। ব্যানার-পোস্টারও লাগাতে দেয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ গোটা রাজধানী দখল করে অবৈধভাবে কাউন্সিল করছে। এভাবে রাজনৈতিক কাউন্সিল হতে পারে না।

হাসিনা-কাদেরকে বিএনপির অভিনন্দন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন- বিএনপি আশা করে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাজ করবেন।

জয়কে পদে না পেয়ে হতাশ তৃণমূল
দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পর তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওপরই আস্থা তৃণমূল নেতাদের। এই কাউন্সিলে তারা শেখ হাসিনার পাশে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়কে দেখতে চেয়েছিলেন। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী অধিবেশনে ৮ বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এতে নেতারা জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। কিন্তু তাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না পেয়ে হতাশ হয়েছেন তারা।

বিদেশে থেকে পদে থাকা ঠিক না: জয়
সজীব ওয়াজেদ জয়কে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ার জোর দাবি ছিল কাউন্সিলরদের। এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি জয় নিজেই। প্রধানমন্ত্রী পুত্র জানান, বিদেশে থেকে পদে থাকা উচিত না। আমি দলের জন্য ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই।

আবারও ক্ষমতায় যেতে চায় আওয়ামী লীগ
কাউন্সিলে তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে হবে। এ জন্য নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাদের কাছে যেতে হবে। দুঃখের কথা শুনতে হবে, পাশে দাঁড়াতে হবে।’ এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ও জনগণের কাছে যেতে কাউন্সিলরদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।

এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh