• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধননামা-৩

১১ দলের আবেদনে ধর্মীয় রাজনীতির বীজ

সিয়াম সারোয়ার জামিল, আরটিভি অনলাইন

  ১৭ মার্চ ২০১৮, ১৫:৩৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মভিত্তিক দলের নাম আছে। সাম্প্রদায়িক নামেই দলগুলো কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তবে বেশিরভাগেরই কমিশন ঘোষিত শর্ত প্রতিপালনের সুযোগ নেই।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গেলো বছরের ৩১ ডিসেম্বর ছিল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করতে আবেদনের শেষ দিন। এ দিন পর্যন্ত ৭৬টি রাজনৈতিক দল কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। মার্চের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন দেয়া হতে পারে। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে ঠিক কী সিদ্ধান্ত হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা ৭৬টি রাজনৈতিক দলের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১১টি দল সরাসরি ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এগুলো হলো, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গাজী, জালালী পার্টি, ইনসানিয়া বিপ্লব, ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ফরায়েজি আন্দোলন, বাংলাদেশ রামকৃষ্ণ পার্টি, বাংলাদেশ হিন্দুলীগ, মাইনরিটি জনতা পার্টি।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: ট্রাম্পকার্ড নয়, রেটকার্ড হতে চায় ওরা
--------------------------------------------------------

এদের মধ্যে ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি ২০১৪ সালের পহেলা মার্চ আত্মপ্রকাশ করে। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসমাইল হোসোইন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ৪২/১ সেগুন বাগিচায় আমার কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া ২৪টি জেলা ও ১১১টি উপজেলা/থানায় দলের কমিটি রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইসলামি রাজনীতি করলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আছি। আমি মনে করি, নিবন্ধন শর্ত পূরণ করেছি। ইসি আমার নিবন্ধন দেবে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’ (বিএমজেপি)। এ দলটি আত্মপ্রকাশের সময়ে সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেছিলেন, হিন্দু মহাজোটের ৫২টি জেলার প্রতিনিধি নিয়ে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার। দেশে হিন্দু বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের অধিকার রক্ষার জন্যই এই পার্টি বলে জানান তিনি।

এদের বাইরে আছে বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি) নামে আরেকটি রাজনৈতিক দল, যারা সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে। এই দলটি ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান আদিবাসী পার্টি’ এবং সমমনা অর্ধশতাধিক সংগঠনের উদ্যোগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গঠিত হয়। এটি ধর্মীয় কোনো জোট কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি ও মুখপাত্র মিঠুন চৌধুরী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এটি বিশেষ কোনো ধর্মীয় মঞ্চ নয়, রাজনৈতিক দল। তবে তিনি প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য ধর্মের উপাসনালয় তৈরি করা এবং দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটির গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের শর্তানুযায়ী, নতুন কোনো রাজনৈতিক দলকে ইসির নিবন্ধন পেতে হলে ওই দলের সারাদেশের ৬৪ জেলার ২২টিতে অফিস, ৪৯১ উপজেলার মধ্যে ১০০টি অফিস এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি কমিটিতে ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক। সেইসঙ্গে দলের পক্ষে কম হলেও একজন এক সংসদে এমপি হিসেবে থাকতে হবে।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামিক রাজনৈতিক দল আছে ১০টি৷ এগুলো হলো- বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস৷ জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে আদালতের নির্দেশে৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দলই বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোট করেছে। শুধু তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে সক্রিয়। তবে কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সরাসরি জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ আছে৷

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আরটিভি অনলাইনে বলেন, অতীতেও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এতে আইনত বাধা নেই। তারা যদি ইসি শর্ত পূর্ণ করে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করে, মাঠ পর্যায়ের তদন্তে যদি কোনো অভিযোগ না পাওয়া যায়, তবে নিবন্ধন দেয়া হবে।

তবে ভিন্নমত ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড এম এম আকাশ। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চলছে। রাজনীতির ধর্মীয়করণ করা হয়েছে। এটা বন্ধ করা না গেলে এদেশে যারা গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি করেন তাদের বিপদের মুখে পড়তে হবে।

দেশে ক্রমশ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কেন বাড়ছে এমন প্রশ্নে ড. আকাশ দাবি করেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহের কারণে এসব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হচ্ছে। কিন্তু এর প্রভাব মূল ধারার রাজনীতির জন্য শুভ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবিধান অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন সাবেক আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির সমিতি বা সংঘ করার বা তার সদস্য হবার অধিকার থাকবে না, যদি- (ক) তা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।’

বেশির ভাগ ধর্মভিত্তিক দলের বিরুদ্ধে সমাজে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যে উসকানি দেয়ার অভিযোগ আছে। এ অভিযোগের কারণেই ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। নির্বাচন কমিশনেরও নিবন্ধন দেয়া উচিত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন:

এসজে/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৪০ দিন পর মরদেহ বুঝে পেল ৪ পরিবার
নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচনে নৌকার জয়
উসকানিমূলক ৯৫৯৮ লিংক অপসারিত : পলক
অপু-নিপুণের সঙ্গে লড়বেন মাহিও
X
Fresh