• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নগর সবুজায়নের মুক্তযুদ্ধ

গাছের জন্যও হাসপাতাল!

রুমকি খান, আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০১ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৩৫

শুরুর দিকে আমি একটি ছাত্র পড়াতে যাই। তাকে একটি স্ট্রবেরি গাছ উপহার দেই। তারপর যেটা হলো, সে ছাত্র গাছটির বিষয়ে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলো। গাছটি স্কুলে নিয়ে গেলো এবং বন্ধুদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলো। তার বন্ধুরাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলো। পরে স্কুলের শিক্ষক আমাকে অনুরোধ করলেন, বিষয়টি যেন স্কুলের বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলি। সেখানে গিয়ে দারুণ আনন্দ পরিবেশে আয়োজন করা সেমিনারে আমি তাদের বুঝাই, কীভাবে ফেলনা কিংবা অব্যহৃত জিনিস কাজে লাগিয়ে আমরা বৃক্ষরোপন করতে পারি। কীভাবে খুব সহজেই বাড়ি-অফিসের ছাদ, বারান্দা, ঘর কিংবা বাড়ির সামনে ছোট জায়গাটিতে সবুজের কাজ করতে পারি।

সবুজ নগরায়ন নিয়ে কথা বলার শুরুতে এভাবেই শুরুর কথাগুলো জানাচ্ছিলেন ‘গ্রিন সেভার্স’র উদ্যোক্তা আহসান রনি। ইট-কাঠ-পাথরের ব্যস্ত এবং ক্রমেই পরিবেশ দূষণের করাল গ্রাসে আক্রান্ত রাজধানীর মানুষকে বাঁচাতে, সবুজায়ন বাড়াতে জানালেন ক্রমিক পরিকল্পনাগুলো।

রনি বললেন, অক্সিজেন ব্যাংক এমন একটি প্রকল্প যেখানে আমরা সবুজের কাজ করি। অক্সিজেন ব্যাংক মূলতঃ একটি ছোট বাক্স, এটা আমরা স্কুলে স্থাপন করি। এখানে বাচ্চারা স্কুলের টিফিনের পয়সা থেকে একটি অংশ জমায় গাছ লাগানোর জন্য। এটা মূলতঃ করা হয় যাতে শিক্ষার্থীরা অনুভব করে যে, গাছটি স্কুল ক্যাম্পাসে শোভা বাড়ানোই শুধু নয় মানুষের জন্য অতি দরকারি অক্সিজেন সরবরাহ করছে, তা তারই টাকায় লাগানো। কাজেই এর যত্ম-আত্মি করতে হবে। এ ধরনের একটি মালিকানাবোধ যাতে তাদের মধ্যে তৈরি হয়। এজন্য মূলতঃ অক্সিজেন ব্যাংক ইন্ট্রোডিউস করি এবং এটা বেশ ভালো কাজ করে।

এখন পর্যন্ত শতাধিক স্কুলে অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপনের কথা জানালেন, ব্যতিক্রমী এ উদ্যোক্তা।

মানুষের জন্য তো হাসপাতাল আছে। কিন্তু গাছের জন্য! এ বিষয়ে আহসান রনি জানালেন, যেহেতু গাছের জীবন আছে। এ কারণে গাছের জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল করা হয়েছে। যেখানে গাছের জন্য সেবা নিয়ে আমাদের গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এছাড়াও তৈরি করা হয়েছে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্। এর নাম প্ল্যান্টস্ ডক্টর। এখানে ফোন করে যে কেউ সেবা নিতে পারেন। গাছের সমস্যা হলে দু’ থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্ল্যান্টস্ ডক্টর সেখানে পৌঁছে যান। দরকারি সেবা দেন ঢাকার যে কোনো অংশে। এ প্রকল্পটি মূলতঃ গাছের ডাক্তার হিসেবে কাজ করে।

২০১৫ সাল পর্যন্ত ‘গ্রিন সেভার্স’র ৪৩টি অক্সিজেন ব্যাংক চলমান ছিল। বাংলাদেশ সরকার যখন দেখলো এটি চলমান, টেকসই, যুগোপযোগী এবং খুবই কার্যকরী একটি উদ্যোগ, তখন সরকারের পক্ষ থেকে প্রকল্পটিকে তাদের অর্থায়নে যৌথভাবে বাস্তবায়নে সাহায্য করছে।

রনি বললেন, শিশুরা সে জিনিসটাই ভালোভাবে শেখে যার মধ্যে বিনোদন থাকে। এজন্য আমরা এনভায়রনমেন্টকে একটু আলাদাভাবে ডিজাইন করেছি। যেটাকে বলছি এনভায়রনটেইনমেন্ট। এটি এনভায়রনমেন্ট এবং এন্টারটেইনমেন্টের একটি মিক্সার।

শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি যে, নিজেদের অক্সিজেন নিজেরাই উৎপাদন করুন। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের মধ্যেই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

আমরা প্রকৃতি থেকে ফ্রি অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছি। অন্যদিকে হাসপাতালে ভর্তি একজন রোগিকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে প্রতি ঘণ্টায় বিল গুণতে হয়। যেহেতু প্রকৃতি থেকে আমরা ফ্রি অক্সিজেন নিয়ে থাকি এজন্য দৈনিক এক টাকা আমরা অক্সিজেনের দাম দেই। এই টাকাটা আমরা প্রকৃতিকে দেই। এভাবে আমাদের সদস্যরা প্রতি মাসে ৩০ টাকা করে দেন। এই ফান্ডের টাকা দিয়ে আমরা সবুজের কাজ করি। জানালেন সবুজের বন্ধু রনি।

‘গ্রিন সেভার্স’ উদ্যোক্তা বললেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। আমরা এখন যারা তৃতীয় যুগে বসবাস করছি তারা সবাই হচ্ছেন একজন মুক্তযোদ্ধা। আমাদের কাজ হলো অনেক প্রাণ, রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত দেশটিকে সবুজে সাজানো। আর আমরা দেশটিকে যতো সাজাতে পারবো আগামী বাংলাদেশ হবে ততোটাই সমৃদ্ধ। নতুন প্রজন্ম আমরা একেকজন মুক্তযোদ্ধা।

আমরা এখানে বসেই বিশ্বের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি আমাদের প্রযুক্তি এবং চিন্তা-চেতনা দিয়ে। যখন শুনি বাইরের একজন তরুণ বৃক্ষরোপনে বিশেষ অবদান রাখছেন, তখন আমি নিজে এটা অনুভব করি যে, আমি তাকে অতিক্রম করতে পারবো। আমার মনে হয় এটাই মুক্তযুদ্ধ।

সবুজ নগরায়নের উদ্যমী তরুণ কর্মীদের এখন একটাই কথা। বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সময় এসেছে মুক্তযুদ্ধের।



আরকে/ এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh