• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের পথে ঢাকা ওয়াসা

  ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:৫৫
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান

সরকারি-বেসরকারি যে কোনো সংস্থার সফলতা এককভাবে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সংস্থার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছায় অল্প সময়ে সফলতা আনা সম্ভব। যার প্রকৃত উদারহণ ঢাকা ওয়াসা। মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে পুরো ওয়াসার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে। এই দৃশ্যপট পরিবর্তন ও সাফল্য শুধু ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে আসেনি, ২০০৯ সাল থেকে যারাই ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত রয়েছেন তাদের দ্বারায় এই অর্জন এসেছে বলে মনে করছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।

পুরো বিশ্ব আজ প্রযুক্তি নির্ভরের দিকে চলে যাচ্ছে। সেখানে ঢাকা ওয়াসা পিছিয়ে থাকতে পারে না। কালের পরিক্রমায় ওয়াসার পানি সাপ্লাইয়ে যে ধরনের উন্নয়ন হয়েছে ঠিক একইগতিতে প্রযুক্তি নির্ভর ওয়াসা উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা এখন যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান তেমনি প্রযুক্তি নির্ভর ওয়াসা করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা। প্রযুক্তি নির্ভর ওয়াসা করতে পারলে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে গতিশীলতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংস্থাটির এমডি। ঢাকা ওয়াসার অগ্রগতি ও আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে পাঁচ পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক আলম

আরটিভি নিউজ : ডিজিটাল ঢাকা ওয়াসা প্রতিষ্ঠা করতে কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : ঢাকা ওয়াসা একটি জরাজীর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল। অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্য ও নানা রকম জটিলতায় আক্রান্ত ছিল। গ্রাহকসেবার জায়গাটা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির একেকটি বিভাগ ছিল এক ধরনের কাজ না জানা মানুষে ভর্তি। এক কথায় বলতে গেলে একটি অকেজো প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা ওয়াসা সরকারের বোঝা ছিল। ২০০৯ সালে আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসে ধীরে ধীরে ওয়াসাকে আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছি। সব অনিয়ম দূর করেছি। আধুনিক বিশ্বের পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মিল রেখে এগিয়ে নিয়েছি। ঢাকা ওয়াসা এখন ডিজিটালি অপারেট করছে। ই-সেবা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকাবাসী উপকৃত হচ্ছেন। ই-বিলিং, ই-জিপি, পয়ঃসংযোগ, ই-নথি এবং ই-রিক্রুটমেন্ট করে ডিজিটাল ঢাকা ওয়াসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে পানির মিটার রিডিং দেখে আসতে হয়। আগামীতে এমন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চায় ওয়াসা, যেখানে মিটার রিডিং দেখতে বাসায় বাসায় লোক পাঠাতে হবে না। ডিজিটাল মিটার রিডিং পদ্ধতি থাকবে। যেখানে পানির মিটার রিডিংটা ওয়েবের মাধ্যমেই সহজেই জানা যাবে। তাহলে এটাই হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম ডিজিটাল মিটার রিডিং পদ্ধতি। ওয়েবের মাধ্যমে মিটার রিডিং আমাদের আশেপাশে কোনো শহরেই নেই। এটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে এটা হবে আমাদের বড় একটি অর্জন।

আরটিভি নিউজ : ঢাকা ওয়াসা স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বলতে মানুষ ঘরে বসেই ঢাকা ওয়াসার সব ধরনের সেবা পাবেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তি দূর করে সেবা নিশ্চিতে ডিজিটালাইজেশন বা স্মার্ট ওয়াটার সিস্টের দিকে এগোচ্ছে ওয়াসা। পানির পাম্পে এসসিএডিএ স্থাপন করে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ দ্বারা গভীর নলকূপের অপারেশন, কন্ট্রোল ও মনিটরিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাকা ওয়াসা পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদিকে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং বাস্তবায়নের পদেক্ষপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইওটি ও জিআইএস ব্যবহার করে স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রক্রিয়া চলছে। এর মাধ্যমে সব মিটার, বাল্বসহ অন্যান্য সেবাসহ সব কিছুর ডিজিটালাইজেশন সম্পন্ন করবে ঢাকা ওয়াসা। কারণ প্রযুক্তি এখন এতোটাই এগিয়েছে যে সব ধরনের সেবা ডিজিটালি দেওয়া সম্ভব।

আরটিভি নিউজ : ঢাকা ওয়াসা কী গ্রাহক বান্ধব প্রতিষ্ঠান হতে পেরেছে?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের গৃহীত পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে প্রতিটি মডস্/রাজস্ব জোনে গ্রাহক সাধারণের সুবিধার্থে হেলপ ডেস্ক খোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকগণের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত হচ্ছে। প্রতিটি মডস্/রাজস্ব জোনে অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অভিযোগ প্রাপ্তির ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নতুন পানি সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে আবেদনের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে (পূর্বে ৩০ দিন ছিল) সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। মিটার স্থাপনেও পূর্বের দীর্ঘসূত্রিতা রোধ করে মিটার টেস্টিং রিপোর্ট প্রাপ্তির ৩ (তিন) দিনের মধ্যে সংযোগে মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। পানির গুণগত মানের বিষয়ে যে কোন অভিযোগ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করে তা সমাধানের বিষয়ে গ্রাহককে জানানো হচ্ছে।

আরটিভি নিউজ : প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগায় অনিয়ম-দুর্নীতি কমিয়ে ঢাকা ওয়াসায় রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হয়েছে কিনা?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : ঢাকা ওয়াসা প্রযুক্তিবান্ধব হওয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। ঢাকা ওয়াসা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে যেখানে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। আর সম্প্রতি সময়ে ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আয় গত এক যুগে বেড়েছে তিন গুণ। অন্যদিকে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী বস্তি এলাকায় পানি সুবিধা ১০০ ভাগে উন্নীতকরণে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ঢাকা ওয়াসা। এর আলোকে ইতোমধ্যে দেশের বৃহত্তম বস্তি হিসেবে পরিচিত ‘কড়াইল বস্তিতে’ শতভাগ বৈধ পানির সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ প্রদানের কাজ চলমান রেখেছে ওয়াসা।

আরটিভি নিউজ : ওয়াসা ডিজিটালাইজেশনের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিনা?

প্রকৌশলী তাকসিম এ খান : ঢাকা ওয়াসাকে ডিজিটালাইজেশন করার জন্য নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোপ- আলোচনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। কারণ প্রশিক্ষণ একদিনের কোনো বিষয় নয়, নিয়মিত যখন যে প্রযুক্তির ছোঁয়া ওয়াসায় লাগছে, সেই প্রযুক্তি সম্পর্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারণা দেওয়া হচ্ছে। এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহজেই ডিজিটালাইজেশনের বিষয়গুলো বুঝতে পারেন। ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে নিয়মিত তিনটি বিষয় তিনবার করে বলা হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে- অটোমেশন, অটোমেশন, অটোমেশন, দ্বিতীয়টি- কম্পিউটারাইজেশন, কম্পিউটারাইজেশন, কম্পিউটারাইজেশন, তৃতীয়ত- ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটালাইজেশন। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যেই ঢাকা ওয়াসার ডিজিটাল ওয়াসায় রূপান্তর করার সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, ভোগান্তি ও অব্যবস্থাপনা কমাতে চাইলে বক্তৃতা দিয়ে সম্ভব নয়। এজন্য অনিয়মের সিস্টেম বন্ধ করার কৌশল তৈরি করতে হবে।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পানির দাম বাড়ানো নিয়ে যা বললেন ওয়াসার ডিএমডি
X
Fresh