তরুন মুন্সীর করোনাকালের ভাবনা
যুদ্ধ, হিংসা, মিথ্যাচার আর লোভের পাহাড়কে নিমেষেই থমকে দিলেন আল্লাহ
ঘুম ভেঙে গেল কাকের কর্কশ ডাকে। আলসেমি ছেড়ে তাই প্রতিদিনের মতো নামাজটা পড়ে নিলাম। একটা নতুন দিনের শুরু বরকতময় হোক, এই আশায়। এমনিতেই এই ঘর বন্দি সময়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি সৃষ্টিকর্তাকেই স্মরণ করায় ব্যস্ত। এই কোভিড-১৯ মানুষকে আবার নতুন করে ভাবাতে শুরু করেছে। আমরা সবাই যখন ভীষণ নিজমুখি হয়ে গিয়েছিলাম, ঠিক তখনই মহান আল্লাহ্ যেন তীব্র অভিমানে সরিয়ে ফেললেন সবার পায়ের নীচের নরম মাটি।
যুদ্ধ, হিংসা, মিথ্যাচার আর লোভের পাহাড়কে নিমেষেই থমকে দিলেন প্রাণভয়ের প্রার্থনার কাছে। যারা ছিলেন শাসক, তারা হলেন স্বেচ্ছায় কারাবাসী। বনের পশু-পাখি রইলো মুক্ত আর মানুষ হলো ঘরবন্দি। একেই বলে নিয়তির খেলা। সমস্ত উত্তর এখন ঐ দূর আকাশের পানে তাকিয়ে অপেক্ষা করা। এই অচেনা সময়ে আমিও তাই ভাবনায় ডুবে যাই। ভালো-মন্দের যোগফল মিলাই। আমার হারিয়ে যাওয়া মুক্তির দিন আর বেপরোয়া বয়সের এলোমেলো চলার গল্পগুলো স্মৃতিচারণ করি।
কিন্তু কাউকে জানাতে আর শোনাতে ইচ্ছে হয় না। যে জীবন ছিল গতির, স্বপ্নময় আর ভালোবাসার প্রার্থনার, সেখানে আজ যেন শুধু চাল, ডাল আর সবজিওয়ালার গল্প। মুখোশ পরে বাঁচতে গিয়ে সবাই এখন মুখোশধারী।
বাইরে মৃত্যু অপেক্ষা করে। কেউ এসে নতুন একটি নাম যোগ করে যাবে বিয়োগের মিছিলে। তবু আমি লিখি, সুর করার চেষ্টা করি। গান গাইতে চাই স্বাভাবিক থাকার প্রয়াসে। মানুষ বাঁচলে তারা গান শুনবেই। গান তো সুখ দুঃখের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও গানই ছিল এক অদৃশ্য শক্তি। আমরা সেই জাতি, যারা ভাষার জন্য দেশ পেয়েছে, পেয়েছে এক নতুন পতাকা। দেশ আজ শুধু হাত ধুয়ে যায়। হয়তো হাতের নোংরা পাপের ময়লাগুলো থেকে রেহাই পেতে মুখ ঢেকে রাখে লজ্জায়। মৃত্যু যখন একটি সংখ্যা, তখন কে দেবে কাকে বেঁচে থাকার মনের এতো জোর? এই নতুন প্রকৃতিকে কোন কৌশলে মানিয়ে নেব আমরা? সঠিক পথ কি জানা আছে কারও?
ভাবতে ভাবতে বেলা বাড়ে, ঘরের মাথা বাজার করে, অল্প হলেও ভালো খেতে। অন্য দিকে মানুষ মরে। অলিগলি চায়ের স্টলে ঝড় ওঠেনা রোজ বিকেলে। সিগারেটেও ভয় ধরেছে। দামটা কিন্তু সেই বেড়েছে।
এসব ভাবি আবোলতাবোল লকডাউনের অবসরে। গান লিখে যাই, সুর বসেনা। মাথা ঝাঁকাই ক্ষণে ক্ষণে ।
মেয়েটাকে অনেক বেশি সময় দিলাম হলো মনে,
বাবা হয়েও দূরে ছিলাম নিয়ম করে কাজের নামে। এখন ঘুমের আগে গল্প করা চলছে ভীষণ নতুন খেলা –
আমরা কিন্তু করোনাকে করি না একটুও অবহেলা।
ভালোবাসার মায়ার কাছে প্রতিদিনই হারছি আমি,
এই সময়ে কত কিছু প্রথম প্রথম করছি আমি।
এসব কিছু লিখে রাখি গীটারটাকে সাক্ষী রেখে , দিন চলে যায় রাতের কাছে ঘুম আমাকে দেয় না দেখা।
বিছানাতে এপাশ-ওপাশ প্রিয় মুখের বন্ধ চোখে,
স্বপ্ন এঁকে যাচ্ছি আমি রাত যেভাবে সকাল দেখে।
আবারও তাই হাত ধুয়ে যাই ইবাদতের উছিলাতে–
ঘুম ভেঙে যায় নতুন করে কর্কশ সেই কাকের ডাকে।
এম
মন্তব্য করুন