সিনেমার গানের মালিক কে, আইন কী বলে?
ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমার হিট, সুপারহিটের পেছনে গানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনও হয় গানের কারণে সিনেমা হিট হয়ে যায়। বিগত দিনের অনেক সিনেমাতে ১০ থেকে ১২টি গান থাকতো। যদিও গল্প, অভিনয় ও নির্মাণ কোনোটাকেই এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। একটি সিনেমায় সব কিছুর সমন্বয় ঠিক মতো হলেই কেবল সিনেমা দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারে।
আমাদের উপমহাদেশের সিনেমায় গানের প্রচলন বেশিই লক্ষ্য করা যায়। গান ছাড়া সিনেমা ভাবাই যায় না। এমন নয় যে গানবিহীন সিনেমা নির্মাণ হয় না। তবে দর্শকের মনে সেই আফসোস লক্ষ্য করা যায়- আহা এখানে যদি একটা গান থাকতো!
ভারতের বিভিন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দিকে লক্ষ্য করলেও দেখা যায়, অকারণে রোমান্টিক গানে যৌন উত্তেজক দৃশ্যজুড়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যৌন উত্তেজনাপূর্ণ দুষ্ট কথার গানের যে প্রচলন শুরু হয়েছিল। সেই সাথে অশ্লীল সিনেমা এদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে হল বিমুখ করেছে ঠিক সেই সময়েই।
তবে সেই অশ্লীল গান বা সিনেমার আজকের আলোচনায় বিষয় নয়। এদেশের চলচ্চিত্রে গর্ব করার মতো অনেক গুণী ব্যক্তি ছিলেন, আজো আছেন। তেমনি বহুল কালজয়ী গানও বছরের পর বছর ধরে মানুষ শুনছেন। সেসব গান হারানোর নয়। হারাবেও না। কিন্তু সেসব গানের পেছনের মানুষদের অনেকেই শেষ জীবনে নিদারুণ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন। অনেকেই উন্নত চিকিৎসাও পাননি। অর্থ কষ্টে জীবনের শেষ বসন্ত অতিক্রম করেছেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে এই গুণী ব্যক্তিদের যেসব গান সিনেমায় সুপারহিট হয়েছে। সেসব গান দিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অর্থ পাচ্ছেন প্রযোজনা সংস্থা। সেখান থেকে মেধাস্বত্বের বিন্দুমাত্র পেলেও গানগুলোর সংশ্লিষ্টদের জীবন রাজকীয়ভাবে চলতো। এ বিষয়ে আইন কী বলছে? গানের মালিকানা নিয়ে আরটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সংশোধিত) অনুসারে গানের মালিকানা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী।
কপিরাইট অফিসের এই কর্মকর্তা বলেন, সিনেমার গান নিয়ে বেশ জটিলতা রয়েছে। ধরুন ষাটের দশকের একটি সিনেমার গান। ধরি ‘ময়নামতি’ সিনেমার গান। এখন প্রশ্ন হলো ময়নামতি সিনেমার গানের মালিক কে? আমাদের এখানে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- সিনেমার গানের ক্ষেত্রে গীতিকার, সুরকার, শিল্পী বা মিউজিক ডিরেক্টরের যদি কোনো চুক্তি না থাকে। তখন এই চুক্তির অবর্তমানে গানগুলোর মালিক হবেন সিনেমার প্রযোজক।
জাফর রাজা চৌধুরী আরও বলেন, দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের সঙ্গীত ব্যক্তিত্বরা কিংবা সিনেমার প্রযোজক কপিরাইট আইন নিয়ে এখনও উদাসীন। আমার কাছে এমন মামলাও রয়েছে যে একজন প্রযোজিত তার সিনেমা একাধিকবার বিক্রি করেছেন। আবার তারাও কপিরাইট অফিসে এসে সিনেমার মালিক হিসেবে দাবি করছেন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভালো আয় হচ্ছে বলেই কি সিনেমার মালিকানা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব? জবাবে জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে আমার দ্বিমত আছে। আমাদের দেশে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মূলত ইউটিউবই জনপ্রিয়। তবে আমার কাছে অনেক চ্যানেলের (ইউটিউব) আয়ের রেকর্ড রয়েছে। সেখানে আমরা দেখেছি। খুব ভালো সিনেমা হলে বছরে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা সেখান থেকে আয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রেও ওই ইউটিউব চ্যানেলে ভালো ও পর্যাপ্ত কন্টেন্ট থাকতে হবে। সমৃদ্ধ ইউটিউব চ্যানেল না হলে সেখান থেকে খুব বেশি আয়ের সুযোগ নেই।
এম/সি
মন্তব্য করুন