• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ফিল্মে এখনো আমি টপ প্লেব্যাক আর্টিস্ট: আসিফ আকবর

এ এইচ মুরাদ

  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩৪

দেশীয় অডিও ইন্ড্রাস্টিতে তার আগমনটা অনেকটা কালবৈশাখী ঝড়ের মতো! আর এই কথা দিয়েই লেখা শুরুর কারণটা হলো এই সঙ্গীত শিল্পী তার নিজের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশের আগে ৩৬টি সিনেমায় প্লেব্যাক সম্পন্ন করে তবে এসেছিলেন অডিও জগতে। আর এসেই তার প্রথম একক অডিও অ্যালবাম দিয়ে যেমন ঝড় তুলে দিয়েছিলেন সারা দেশের মানুষের মনে, ঠিক তেমনি ওই এক অ্যালবাম দিয়েই তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন অডিও ইন্ডাস্ট্রির সকল রেকর্ড। প্রথম অ্যালবামের পরপরই তার কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে শ্রোতারা তাকে অভিষিক্ত করেন ''বাংলা গানের যুবরাজ'' উপাধি দিয়ে। আর শ্রোতারা যে তাকে এই উপাধি দিয়ে ভুল করেননি তা তিনি প্রমাণ করে চলেছেন গেলো ১৬ বছর ধরে। তিনি আসিফ আকবর। দেশীয় সঙ্গীত জগতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা শিল্পী তিনি। গানে গানে গেলো ১৬ বছর ধরে তিনি রাজত্ব করে চলেছেন লাখো-কোটি ভক্তের হৃদয়ে।

সেই ২০০১ সালে ''ও প্রিয়া তুমি কোথায়'' অ্যালবামের মাধ্যমে সূচনা ''বাংলা গানের যুবরাজ''র জয় যাত্রার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। আর অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব শুরুর আগেই দেশীয় চলচ্চিত্র জগতে প্রমাণ করেছেন নিজের রাজত্বের দাবিদারের যোগ্যতা। মজার কথা কথা হলো ''বাংলা গানের যুবরাজ''র প্লেব্যাকে অভিষেক ''রাজা নাম্বার ওয়ান'' নামের একটি সিনেমার মধ্য দিয়ে। এই সিনেমায় ''আমারই ভাগ্যে তোমারই নাম'' শিরোনামের একটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৯৭ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। সংখ্যার বিচারে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে ১৬ বছর এবং সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ২০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সময়কে পেছনে ফেলে এখনো তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অডিও ও ফিল্মে ইন্ডাস্ট্রি। আর তাইতো তিনি ''যুবরাজ''। গানের যুবরাজ গায়ক আসিফকে নায়ক হবার অফার দিয়েছিলেন অনেক পরিচালক। অবিরত অফার আসছে এখনো। কিন্তু যুবরাজ চলে যুবরাজের মতো। আর তাইতো নায়ক হবার প্রস্তাব সরিয়ে দিয়ে এ বছরেই সিনেমা প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন তিনি। বাংলা গানের এই জনপ্রিয়তম শিল্পী অডিও ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নানান বিষয় নিয়ে সম্প্রতি খোলামেলা আলাপে মেতে উঠেছিলেন আরটিভি অনলাইনের সাথে। চলুন পাঠক তাহলে ঘুরে আসা যাক আসিফ আকবরের আলাপের জগৎ থেকে। আর তার এই আলাপে সাথী হিসেবে ছিলেন এ এইচ মুরাদ

আলাপের প্রথমেই আর দশজনের মতো জানার ইচ্ছে নতুন অ্যালবাম আসবে কবে ?

আমার আর কখনো অ্যালবাম আসবে না। সিডির বাজার আর নেই, সিডি প্লেয়ার হারিয়ে গেছে। এখন শ্রোতারা অনলাইনের মাধ্যমে গান শোনেন। আমিতো শ্রোতাদের জন্যই গাই। তারা যে মাধ্যমে আমার গান শুনতে পছন্দ করবেন সে মাধ্যমেই আমার গান আসবে। এখন শ্রোতারা ডিজিটালি গান শুনতে পছন্দ করেন। তাই আমি তাদের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমেই গান প্রকাশ করছি, আগামীতেও ডিজিটালে গান প্রকাশ করবো।

আসছে ভালোবাসা দিবসের গান

আসছে ভালোবাসা দিবসে দেশের অন্যতম গুণী সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবীর সঙ্গে গাওয়া আমার প্রথম দ্বৈত গান ''অমন করে তাকিওনা ভালোবাসা হয়ে যাবে'' মুক্তি পাবে। গানটির কথা ও সুর তরুণ মুন্সীর। এছাড়া সুদীপ কুমার দীপের কথা, কলকাতার শ্রী প্রীতমের সুর এবং জে কে মজলিশের সঙ্গীতায়োজন ''একটা প্রেম দরকার'' গানটিও মুক্তি পাবে। এবারের ভালোবাসা দিবসে এই দুটি গানই করেছি। দর্শকদের জন্য গানের স্টুডিও ভার্সন আনা হবে।

একটু পেছনে যেতে চাই। ২০১০ সালে গান ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কেনো ?

আমার ওই ঘোষণা ছিল সেই সময় সঙ্গীতাঙ্গনে চলা নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে একটা সিস্টেম ডেভলপ করার প্রচেষ্টা। তাছাড়া তখন আমি এত কাজ করেছি যে আমি হাপিয়ে ওঠেছিলাম। নিজের কাছেই মনে হয়েছিল তখন- এখন থামা দরকার। তাই তিন বছর গান থেকে দূরে ছিলাম। অবসর কিংবা অবকাশই বলবো ওই সময়টাকে। তবে আমার ওই ভূমিকার কারণে কিন্তু সত্যিই একটা সিস্টেম দাড় হয়েছে। যার পেছনে আমার ২০০ ভাগ অবদান রয়েছে। পরবর্তীতে অনেক শিল্পী তাদের প্রাপ্য পেয়েছেন। অন্যদিকে এখন তো ওপেন মার্কেট। তাই শ্রোতারা নিজে থেকে যার গান নেবেন সেই টিকে থাকবে। আর আমি তো কখনো বলিনি গান ছেড়ে দিয়েছি। আমি অবসর নিয়েছিলাম।

শুনলাম সিনেমা প্রযোজনা করছেন ?

হ্যা। ''বাপের দোয়া কি কম দামি'' শিরোনামের একটি সিনেমা আমি প্রযোজনা করছি। সিনেমাটি এ বছরের মাঝামাঝি অথবা বছরের শেষে কাজ শুরু করবো। সবই আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করছে। বর্ষা মৌসুম এড়িয়ে যেতে চাই। কারণ বর্ষার সময় শুটিং করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

কাজটি কি যৌথ প্রযোজনায় হবে?

না। সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযোজনায় নির্মিত হবে। এখানে আমরা নায়ক হিসেবে থাকছেন মিশা সওদাগর (ভাই)। তার সঙ্গে শাবনূরের কাজ করার সম্ভাবনা আছে। আরো কিছু প্ল্যান আছে এখন সেগুলো বলতে চাই না। কারণ এতে করে আইডিয়া চুরির সম্ভাবনা আছে।

সিনেমা প্রযোজনায় আসছেন, ঝুঁকি তো থাকছেই

আসলে ঝুঁকিতো সবকিছুতেই থাকে। আমরা বুঝে শুনেই প্রযোজনায় এসেছি। আমাদের গল্পটা অনেক রিচ। সিনেমায় ভালো গল্প দরকার। ভালো গল্পের সিনেমা নির্মাণ করতে পারলে দর্শক অবশ্যই দেখবেন। আর সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের সিনেমায় এখন গল্পের অভাব। আর প্রযোজনার কথা বললে, এই ফিল্মেই আমার জন্ম। প্লেব্যাক দিয়েই আমি আসিফ হয়েছি। ৩৬টা ফিল্মে গান গাওয়ার পর আমি অ্যালবামে গান করেছি। ফিল্মের যেকোনো জায়গায় ঘোরার অধিকার আমার আছে। আর ফিল্মের কোনো কিছুই আমার অজানা না।

সিনেমা প্রসঙ্গেই আরেকটি প্রশ্ন। এখন সিনেমার গানের অবস্থা অনেকটাই কোনঠাসা। কেনো এই অবস্থা ?

দেখেন আমাদের বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য কিন্তু অনেক পুরোনো। অনেক অসাধারণ গান এই সিনেমা থেকেই এসেছে, শ্রোতাদের মনজয় করেছে। কিন্তু এখনকার অনেক সিনেমা দেখলে মনে হয় বাংলাদেশে আগে কোনোদিন কোনো সিনেমা হয়নি! যারা পরিচালক তারা সবাই গানের ব্যাপারে ভারতের দিকে চলে গেছে। ওই দেশের শিল্পী ও সুরকারদের প্রভাব বেড়েছে। অতীত ইতিহাসে দেখা যায় ভারতের শিল্পী ও সুরকাররা এদেশের সিনেমায় গানের ক্ষেত্রে কোনো সুবিধা করতে পারেনি। কারণ শব্দ ও উচ্চারণে সমস্যা বাংলাদেশে এক ধরনের ও পশ্চিমবঙ্গের আবার ভিন্ন। যেমন কদিন আগেই একটা সিনেমার গান দেখলাম 'ও ছেরি তোর বিয়ে হবে ছাদনা তলায় বিয়ে হবে' ছাদনা তলা কিন্তু এদেশের শব্দ না এটা কলকাতার শব্দ। জানিনা মানুষ কেনো এসব গুলিয়ে ফেলে। যারা ফিল্মের জেনুইন প্লেব্যাক শিল্পী তাদের অনুপস্থিতিতে এমনটা হচ্ছে। যদি জেনুইনরা থাকতো তাহলে এমনটা হতো না। শওকত আলী ইমন ও আলী আকবর শুভদের অনেক কাজ বের হয়ে আসছে। নতুনদের মধ্যে অনেকেই ভালো কাজ করছেন। কিন্তু তাদের ধারাবাহিকতা খুব কম। আর প্লেব্যাকে গান গাওয়া সহজ না। পর্দায় নায়ক-নায়িকার ওই ফিল শিল্পীর মধ্যে আনতে হয়।

প্রযোজকতো হলেন। কিন্তু নায়ক হবারও তো সুযোগ এসেছিল

নায়ক হবার জন্য প্রচুর অফার পেয়েছি। এখনো অনেকেই বলেন। কিন্তু অভিনয় করাটা অনেক কঠিন একটি কাজ। আমাকে দিয়ে অভিনয় হবে না।

আপনার মধ্যে নায়ক নায়ক ব্যাপার আছে। নেপথ্যে কোনো কারণ আছে কী ?

না, সেরকম বিশেষ কোনো কারণ নাই। আমি সবসময় বুক চেতিয়ে চলি। আমার কোনো ভয় নাই। কোনো ধরনের টেনশনও নাই। এজন্য সরাসরি চলি। হাটা-চলা দেখলেও কেউ কেউ বেয়াদব কিংবা মাস্তান মনে করতে পারেন!

আবার ফিরি গানের জগতে। আপনার গাওয়া 'বেশ বেশ বেশ সাবাশ বাংলাদেশ' আর বাজানো হয়না খুব একটা। এটা নিয়ে কোনো কষ্ট আছে কী ?

আমার থিম সংটি করা হয়েছিল ২০০৫ সালে। নতুন থিম সং হয়ে গেলে আগেরটা বাদ পড়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। নতুন গানটি এখন বাজানো হয়। আমারটা বাদ পড়ে গেছে আগে গ্যালারিতে বাজতো। এখন আর বাজেনা। যদি নতুন আরেকটা গান হয়। তাহলে এখনকার গানটি বাদ দিয়ে নতুন গান বাজানো হবে।

সঙ্গীত অঙ্গনে টিকে থাকতে তরুণদের জন্য কি বলবেন

গানে টিকে থাকাটা আসলে কয়েকভাবে হয়। সুন্দরী বা সুন্দর, কেউ গায়ক বা গায়িকা, কেউবা আবার বুদ্ধিমান গায়ক-গায়িকা। আমার কাছে মনে হয় নিজের পছন্দ মতো গান না করে বাংলাদেশের মানুষ কি ধরনের গান পছন্দ করেন তেমন গান করতে হবে। মানুষের জন্য গান গাইতে হবে। যেমন সালমার 'বানিয়া বন্ধু রে একটা তাবিজ বানায়ে দে' ঠিকই মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। গানের গভীরতা থাকলে অবশ্যই সে গান টিকে থাকবে। আমার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আজ ১৬ বছর হচ্ছে। এখনো ফিল্মে আমি টপ প্লেব্যাক আর্টিস্ট। মনে হতে পারে এটা কীভাবে সম্ভব! আমি সবসময় মূলধারার শ্রোতাদের জন্য যেমন গান করি তেমনি নিজের মনের মতো গানও করি। মানুষ যেটা গ্রহণ করে। সবকিছু মেনেই গান করতে হবে। তাহলেই সে গান মানুষের হৃদয়ে স্থান করতে পারবে।

এত ব্যস্ততা অনেক নতুন মিশনে এগিয়ে যাচ্ছেন। সামনে আর কি পরিকল্পনা আছে?

একটা বিয়ে করতে চাই! আর মেজর আর কোনো পরিকল্পনা নাই! বিয়ের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি! হাহাহাহাহাহা....

অনেক ধন্যবাদ আরটিভি অনলাইন এবং এর পাঠকদের পক্ষ থেকে।

আপনাকে ও আরটিভি অনলাইনকেও শুভেচ্ছা। পাঠকদের জন্য রইলো ভালোবাসা। ভালোবাসা অবিরাম।

এইচএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh