• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘জি বাংলা’ ও ‘স্টার জলসা’র দর্শক ঠকানোর ফন্দি

দুরুল হক

  ২৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:২৭

আমাদের দেশে ভারতীয় চ্যানেলের অবাধ বিচরণ। সেই প্রসার বাড়ছে দিন দিন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন। এতে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ; অন্যদিকে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় চ্যানেল, অভিনয় শিল্পী, কলা-কুশলী ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। অথচ আমাদের দেশের চ্যানেল ভারতে দেখাই যায় না।

বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন ভারতে দেখানো হচ্ছে, এমনটা ভেবে সাধারণ দর্শকরা খুশিই হন। কিন্তু সেটা যে শুভঙ্করের ফাঁকি তারা জানেনই না। আসল বিষয়টি হচ্ছে, একই অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বিরতিতে দু’দেশের লোক দু’রকম বিজ্ঞাপন দেখছে। এছাড়া চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে খরচ কম পেয়ে দেশের বিজ্ঞাপনদাতারাও জোর কদমে সেদিকে ঝুঁকছেন।

এ দেশের দর্শক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের চাহিদার কারণে স্যাটেলাইটে আলাদা ‘বিম’ তৈরি করেছে ভারতের জি ও স্টার গ্রুপের দু’টি চ্যানেল ‘জি বাংলা’ ও ‘স্টার জলসা’। ফলে সেসব চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে দেখা গেলেও ভারতে দেখা যায় না। এতে ভারতে চ্যানেলটির প্রচার সময়ে কোনো ‘মিনিট বিজ্ঞাপন’ নষ্ট হচ্ছে না। এতে একটি চ্যানেল একই সময়ে আয় করছে দু’দেশ থেকেই।

অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেল দেখানো নিষিদ্ধ না হলেও এর ওপর মাত্রাতিরিক্ত মাশুল আরোপ করা আছে। বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল ভারতে প্রচার করতে ৫ কোটি ভারতীয় রুপি মাশুল গুণতে হয়। অথচ বাংলাদেশে মাত্র ৩ লাখ টাকা মাশুল দিয়ে ভারতীয় চ্যানেল ডাউনলিংক করা যাচ্ছে। এতে দেশীয় চ্যানেলের দর্শক কমতে শুরু করেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

আর এ সুযোগে মাত্র কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ‘জি বাংলা’ ও ‘স্টার জলসা’ বাংলাদেশ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি টাকা। অবশ্য সরকারি পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। তাদের হিসাবে এর পরিমাণ মাত্র ১৪ কোটি টাকা।

টেলিভিশন ও বিজ্ঞাপন এজেন্সি মালিকদের মতে, বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলের বিজ্ঞাপন বাজার বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ বিজ্ঞাপনের অভাবে দুই-তৃতীয়াংশ চ্যানেল কোনোরকমে টিকে আছে। লোকসানে চলছে অর্ধেকেরও বেশি চ্যানেল।

এদিকে গেলো বছর বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেয়ার অর্থ বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর ফলে ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেয়া আগের তুলনায় বেড়ে যায় অনেকগুণ। অথচ বাংলাদেশ কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর ১৯ (১৩) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, বিদেশি কোনো টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।

২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাস হওয়া ওই আইনানুযায়ী বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি চ্যানেলে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ না হলে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও নোটিশে বলা হয়।

তথ্য ও বাণিজ্য সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, ন্যাশন ওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিজি জাদু ব্রড ব্যান্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়।

বেশ কিছুদিন ধরেই বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধে জোর দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন ‘মিডিয়া ইউনিটি’। সংগঠনটির নেতাদের মতে, যারা দেশের বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলে নিয়ে যাবার পেছনে ভূমিকা রাখছেন তারা সংস্কৃতির রাজাকার।

৭১’র টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ‘মিডিয়া ইউনিটি’র আহ্বায়ক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘আইনের ফাঁকে বাংলাদেশের টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিতে হবে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে টেলিভিশন শিল্পী, কলা-কুশলী, অনুষ্ঠান নির্মাতা, অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেখানেই শক্তিমান অভিনেতা আজিজুল হাকিমও একই দাবি জানান।

ওই সময় বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলের অনুমতি বাতিলসহ ৫ দফা দাবি জানান ফেডারেল অব টেলিভিশন প্রয়েশনালস্ অরগানাইজেশনের (এফটিপিও) নেতারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘টেলিভিশন শিল্পী ও কলা-কুশলীদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে বিদেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে বিদেশি আগ্রাসন থেকে দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় যেসব নীতিমালা রয়েছে তা পর্যালোচনা করে ঘাটতি পূরণে চেষ্টা করবে সরকার। এরই মধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

এরপরই বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে উদ্যোগ নেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে দু’অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠিয়ে সতর্কও করেছে তারা।

ডিএইচ/ এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৯ মাসে সুদ পরিশোধ ১০০ কোটি ডলারের বেশি
বিদেশি শ্রমিকদের জন্য সুখবর দিল কুয়েত
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে জিপের ধাক্কা, বিদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
শাকিবের বিদেশি নায়িকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ অপু
X
Fresh