• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (ভিডিও)

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৯ জুলাই ২০১৭, ১১:৪০

নন্দিত কথা সাহিত্যিক, বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

প্রতি বছরের মতো এবারো তার পরিবার ও ভক্তরা তাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন। দিবসটি উপলক্ষে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া প্রকাশকরা নুহাশ পল্লীতে স্বপ্নবিলাসী হুমায়ূনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে’ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

হুমায়ূন চলে গেছেন। ফিরবেন না আর এই নশ্বর পৃথিবীতে। কিন্তু তার সৃষ্টি প্রতিক্ষণেই ভক্তদের মনকে করে চাঞ্চল্য। প্রতিদিন হয়তো নয়, কিন্তু বছরের একদিনতো প্রিয় লেখককে কাছে থেকে স্মরণের ব্যকুলতা ভর করে ভক্তদের হৃদয়ে। তাইতো আজ তার কবরের পাশে কিছু সময়ের জন্য হলেও ছুটে চলেছেন অসংখ্য ভক্ত।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। মাঝে কিছু দিনের জন্য দেশের মানুষের কাছে ফিরে আসেন। কিন্তু ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখ হঠাৎই চলে যান লাইফ সাপোর্টে। সে অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই তার মরদেহ দেশে আসে। পরদিন সমাহিত করা হয় তারই গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়।

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোনা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে। বাবা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজের বড় সন্তান তিনি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও (উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার) হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন ফয়জুর রহমান। হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।

ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবন শুরু। এই উপন্যাসটির নাম নন্দিত নরকে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স থেকে প্রথম প্রকাশ করা হয়।

প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত অধ্যাপক আহমদ শরীফ অনেক আগ্রহ নিয়েই এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে সাহিত্যাপ্রেমি মহলে কৌতূহল সৃষ্টি করেন।

জনপ্রিয় শঙ্খনীল কারাগার তার ২য় গ্রন্থ। পরে এই শঙ্খনীল কারাগার নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দু’ শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তার রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো ‘গল্প-সমৃদ্ধি’। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়।

তার গল্প ও উপন্যাস সংলাপ প্রধান। বর্ণনা পরিমিত এবং সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অপূর্ব প্রতিভা তার রয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস ‘মধ্যাহ্ন’ তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। এছাড়া জোছনা ও জননীর গল্প আরেকটি বড় মাপের রচনা, যা কি-না ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে রচিত। তবে সাধারণত তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে লিখে গেছেন। আশির দশকের মাঝামাঝি তার টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা।

১৯৭৩ সালে হুমায়ূন গুলতেকিনকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়। ১৯৯০ সালে মেয়ে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এসব ঘটনার এক পর্যায়ে ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন হুমায়ূন। এ ঘরে তাদের দু’ ছেলে রয়েছে। তবে প্রথমে কন্যা সন্তান জন্ম নিলেও সে মারা যায়। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।

জেবি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh