• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

গল্পটা আমাদের দুজনের

আতিকা রহমান

  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৪০
গল্পটা আমাদের দুজনের
জুবায়ের-শারমিন

হ্যালো হিরা বলছেন ! না এখানে হিরা নামে কেউ থাকে না।

কী করছেন? পড়াশুনা করছি। কী পড়ছেন? সমাজ।

আচ্ছা আপনার ভয়েসটা এমন হাঁসের মতো কেন? দেখেন শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করবেন না, ওকে খালাম্মা। সামনে আমার পরীক্ষা, রাখি খালাম্মা। এটাই ছিল আমাদের প্রথম কথোপকথন। আমি শারমিন। আজ আমি আপনাদের বলব আমাদের গল্প। শারমিন ও জুবায়েরে গল্প।

গল্পটা শুরু ২০০৬ সালে। মার্চের ৩ তারিখ রাত ১২টায় সিটিসেল কথাবন্ধু অফারের মাধ্যমে অপরিচিত নম্বরে ফোন করে দুষ্টুমি করতে গিয়ে পরিচয় হয় দুজনের। দুজনই তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরু ৯ তারিখ থেকে। পরীক্ষার ৬ দিন আগে রাত জেগে পড়তে গিয়ে বয়সের
দোষেই হোক অথবা ভাগ্যের কারণে হোক দুষ্টুমি করার জন্য সেই রাতে প্রথম ফোন করেছিলাম জুবায়েরকে। সেই থেকে কথা শুরু হলো। প্রতিদিন কথা হতো আমাদের। দেখলাম আমাদের অনেক কিছুই মিলে যাচ্ছে, দুজনই এসএসসি পরীক্ষার্থী। এমনকি দুজনের বাসাও কাছাকাছি। প্রতি পরীক্ষার পর দুজনে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন মিলাতাম। পরের পরীক্ষার জন্য কি কি পড়ব তা আলোচনা করতাম। কথা বলতে বলতেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। ঠিক করলাম পরীক্ষা শেষ হলে দুজন দেখা করব।

এপ্রিল ৮ , ২০০৬। তখন আমাদের প্রথম দেখা। কথা ছিল দুজনেই লাল রঙের ড্রেস পরে যাব। যেন একজন আরেকজনকে চিনতে পারি। জুবায়ের তো বলে আমাকে প্রথম দেখাতেই নাকি ভালোবেসে ফেলেছিল। যাকে বলে Love at first site. যদিও আমার দিক থেকে ভালোবাসার শুরুটা হয়েছিল অনেকদিন পর। আমি যে কলেজে ভর্তি হলাম, জুবায়েরও সেখানেই ভর্তি হলো। খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। আমার দিক থেকে সেটা শুধু বন্ধুত্ব হলেও ওর দিক থেকে ছিল বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক বেশি। মাঝে মাঝে আমাকে সে বোঝানোর চেষ্টা করত। আমি বুঝতাম না, অথবা প্রিয় বন্ধুকে হারানোর ভয়ে বুঝেও না বোঝার ভান করতাম। এইচএসসি পরীক্ষার আগে সে মনের সব সাহস সঞ্চয় করে আমাকে সরাসরি জানালো তার মনের কথাগুলো। যেহেতু আমার দিক থেকে তা তখন শুধুই বন্ধুত্ব ছিল। তাই ওকে মানা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এরপর কোনটিই আর হলো না। না বন্ধুত্ব, না ভালোবাসা। কেমন যেন দূরত্ব হয়ে গেল দুজনের। এইচএসসি পাস করার পর দুজনের বিশ্ববিদ্যালয় দুদিকে। তাই আর দেখাও হতো না।

হঠাৎ দেখা হলো ২০১০ সালে। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় কেমন যেন টান অনুভব করলাম ওর প্রতি, কীভাবে এত ভালো একটা বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই ভেবে নিজেকে দোষারোপ করছিলাম। আবারও যোগাযোগ শুরু হলো, কখনো ও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসত। কখনো আমি যেতাম। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম বন্ধুর চেয়েও বেশি ভাবতে শুরু করেছি ওকে। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। অনেক সাহস সঞ্চয় করে সে আবারও আমাকে বলল- ভালোবাসি। এবার আর আমিও মানা করতে পারলাম না।

২৬ এপ্রিল, ২০১০। পরিচয়ের ৪ বছর পর অবশেষে আমিও ওকে ভালোবেসেই ফেললাম। তারপর ভালোই চলছিল, চুটিয়ে প্রেম করলাম দুজনই। কখনো টিএসসি, কখনো ধানমন্ডি লেক, ফাল্গুন-বৈশাখে হাতে হাত রেখে ঘুরাঘুরি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া অথবা স্টারের বিরিয়ানি সবকিছুই চলছিল নিয়মিতভাবে। বলতে গেলে প্রেম তখন জমে একেবারে ক্ষীর। তবে আমরা খুবই কাচা খেলোয়াড় ছিলাম। প্রেমের শুরুতেই দুজনেই বাসায় ধরা খেলাম। দুই বাসায় দুই ধরনের রিঅ্যাকশন হলো। জুবায়েরের মা বলল-আমি মেয়েটাকে দেখতে চাই, আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবে? আর আমার বাসায় হলো উল্টাটা। মেয়ে বিগড়ে যাচ্ছে, হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ভেবে আমার বাবা-মা তখন বিয়ের পাত্র দেখা শুরু করল।

এক দিন জুবায়ের আমার সঙ্গে দেখা করতে আসার সময় ওর মাকে নিয়ে আসলো। পরিচয় হলো ওর মায়ের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে মায়েরও প্রেমে পড়ে গেলাম। আর তিনিও আমাকে এত পছন্দ করলেন যে, আমাকেই বউ করবেন বলে ঘোষণা করে দিলেন। এত স্মার্ট মা সেই যুগে আমি দ্বিতীয়টা দেখিনি, ছেলের ভালোবাসার মানুষকে চোখের পলকে নিজের মেয়ে বানিয়ে ফেলল। স্বপ্নের মতো কাটছিল দিনগুলো, ভালোই যাচ্ছিল সব। কিন্তু আমার বাসা থেকে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগল। কিছুতেই তারা সমবয়সী ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দেবে না। তার ওপর আমার বংশে কেউ প্রেম করে বিয়ে করেনি। প্রেমের বিয়ে মেনে নেওয়া, সে তো অসম্ভব। আবার ছেলে এত অল্পবয়সী এখনও কোনো কাজ করছে না। সব মিলিয়ে বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেবের মতো ভিলেন হয়ে গেল আমার পরিবার।

জুবায়ের তখন মাত্র বিএসসি পাস করে বের হয়েছে। চোখের সামনে যা পেল একটা চাকরিতে ঢুকে গেল। আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। জুবায়েরর মা তো কিছুতেই আমাকে হাতছাড়া করবে না। অবশেষে ওদিক থেকে মা-ছেলের চেষ্টা আর এদিকে আমি। আমাদের দলেরই জয় হলো। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার আমাদের ভালোবাসার কাছে হার মানতে বাধ্য হলো। বিয়েতে রাজি হলো।

২০ ডিসেম্বর , ২০১৩। আমাদের শুভ পরিণয় হলো। আলহামদুলিল্লাহ, বিয়ের ৮ বছর শেষ হলো। এখন আমাদের একটা ফুটফুটে কন্যা আছে। গত ৮ বছর আমাদের পথ সহজ ছিল না। কারণ, আমরা দুজনই ২৩ বছর বয়সি। জীবনে কোনো কিছু না করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছি। কিন্তু এই ৮ বছরের এক দিনের জন্যও আমার মনে হয়নি আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে পজিটিভ মানুষটাকে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। জীবনের অনেক অপূর্ণতার মাঝেই ক্লান্ত একটা দিনের পর ঘুমের ঘোরে পাশে হাত দিয়ে যখন ভালোবাসার মানুষটার শরীরের ছোয়া পাই, তখন মনে হয় জীবনে সব পেয়ে গেলাম। এমন জীবনই তো চেয়েছিলাম আমি।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি নিলেই ব্যবস্থা
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু
শুরু হচ্ছে এইচএসসির ফরম পূরণ, জেনে নিন ফি কতো
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
X
Fresh