চেয়ারে বসেছিলেন, সেভাবেই চলে গেলেন ইনামুল হক
একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক, লেখক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক আর নেই। আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) বেইলি রোডের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতার মেয়ে জামাই লিটু আনাম গণমাধ্যমকে জানান, 'দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে চেয়ারে বসে ছিলেন উনি (ড. ইনামুল হক)। সে অবস্থায়ই তিনি চলে যান। তার কোনো ধরনের অসুস্থতা ছিল না। খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি, কিছুই হয়নি তার।'
-
আরও পড়ুন... চলে গেলেন নাট্যজন ড: ইনামুল হক
চেয়ারে বসে থাকা স্বামীকে ডাকছিলেন স্ত্রী লাকী ইনাম। তখনও তিনি বোঝেননি প্রিয় মানুষটি আর নেই। সে বিষয়ে লিটু আনাম জানান, 'ওনার স্ত্রী (লাকী ইনাম) গিয়ে ডাকছিলেন, কিন্তু উনি সাড়া দিচ্ছিলেন না। এরপর দ্রুত নিকটস্থ একজন চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়, তখনো পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর দ্রুত ইসলামিয়া হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ডাক্তাররা জানান, উনি নেই।'
দাফনের প্রসঙ্গে তিনি জানান, 'তার দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'
ড. এনামুল হক একটি অধ্যায়ের নাম। এই দেশের নাট্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তার এমন চলে যাওয়ায় ব্যথিত দেশের নাট্যজগৎ, ব্যথিত সাধারণ দর্শক, সাধারণ মানুষ- এমনটাই মনে করছেন এই সময়ের নাট্যচর্চায় যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের সবাই।
-
আরও পড়ুন... ‘তাহসান-ফারিয়াকেও আইনের আওতায় আনা হতে পারে’
ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায়। তার বাবা ওবায়দুল হক ও মা রাজিয়া খাতুন। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর মানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি লাভ করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নটরডেম কলেজে পড়াশোনার সময়ই তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসেই ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। এরপর এই দলের হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবনসহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। এই দলের হয়ে তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন ‘জনতার রঙ্গশালা’,‘সরমাসহ আরও বেশ কয়েকটি নাটকে। ২০০০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ইনামুল হক অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মোস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। তার লেখা প্রথম নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ নির্মাণ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিটিভির প্রথম নাটক ‘বাংলা আমার’ এবং একুশের প্রথম নাটক ‘মালা একশত মালঞ্চের’ তারই লেখা ছিল।
এনএস
মন্তব্য করুন