আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও শিল্পীদের শপথ!

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নব-নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৫টায় বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথমে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগরকে শপথবাক্য পাঠ করান সমিতির নির্বাচন কমিশনার চিত্রপরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্য সদস্যদের শপথ পাঠ করান নতুন সভাপতি মিশা সওদাগর। শপথ অনুষ্ঠানে নির্বাচিত কমিটির ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে শুটিং ও ব্যক্তিগত কাজ থাকায় নির্বাচিত কমিটির সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস, ইমন, সাইমন সাদিক, কমল, জাকির, চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও জেসমিন অনুপস্থিত ছিলেন।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও নির্বাচিত কমিটির শপথ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সমিতির নির্বাচন কমিশনার মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ‘আদালত ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানিয়েছেন বলে মনে হয় না। তাই আমরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান করে দিয়ে আমাদের দায় শেষ করতে চাই।’

শপথ গ্রহণের পর নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে চলচ্চিত্রের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাব। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।’

এ প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির চলতি কমিটির সভাপতি চিত্রনায়ক শাকিব খান বলেন, ‘১০ মে রাতেই আমি আদেশের কপি হাতে পেয়েছি। মামলায় আমাকেও বিবাদী হিসেবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত থেকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশ অমান্য করে কীভাবে শপথ অনুষ্ঠান করা হলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। এমনকি চলতি কমিটির সভাপতি হিসেবে আমাকে শপথ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। মহামান্য আদালত এরপর যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটার প্রতি আনুগত্য থাকব।’

নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘চলচ্চিত্রেরে স্বার্থে আমরা একযোগে কাজ করবো এবং আজ থেকে সেটাই শুরু করছি।’ আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনো আদালতের আদেশের কোনো কপি এসে পৌঁছায়নি। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ার মাধ্যমে এ খবর জেনেছি। বিষয়টি যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সিনিয়রদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আর আদালত যেহেতু ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সেটা আমরা আদালতের মাধ্যমেই গ্রহণ করবো। শপথগ্রহণ করা যাবে না, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আপাতত এর বাইরে কিছু বলতে পারছি না। তবে এটা বলবো যে, চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য নোংরা খেলা চলছে। এটা বন্ধ করতে সবাইকে এক হতে হবে। নইলে অচিরেই আমাদের এ শিল্পী মুখ থুবড়ে পড়বে।’

এদিকে নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ করানোর বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আমিনুর রহমান খান বলেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান করার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজটি করা মানেই আদালত অবমাননার শামিল। আমরা বাদী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

শপথ অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক, শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বিভাগের দুই সদস্য প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু ও শামসুল হক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল।

গেলো ৫ মে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয় ৬ মে সকালে। এরপর পরাজিত সভাপতি প্রার্থী ওমর সানির আপিলের প্রেক্ষিতে পুনরায় ভোট গণনা করে ফের ১০ মে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ ফলাফলে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রমিজ উদ্দিন আদালতে নির্বাচনী ফলাফল স্থগিতের জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার দ্বিতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক ১০ মে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্যে অন্তবর্তীকালীন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের ফল স্থগিত চেয়ে ১০ মে একটি মামলা করা হয় (মামলা নম্বর ১৫০/১৭)। মামলাটি করেছেন সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওমর সানী-অমিত হাসান প্যানেলের প্রার্থী রমিজ উদ্দিন। মামলায় সমিতির নির্বাচনের ফলাফলে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালাত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মনতাজুর রহমান আকবর, আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন দিলু, শিল্পী সমিতির আগের কমিটির সভাপতি শাকিব খান এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

• চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত

এইচএম