• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হাসপাতালে বেডে যে গান গেয়েছিলেন লাকী আখন্দ

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২১ এপ্রিল ২০১৭, ২২:২৩

ফুসফুসে ক্যানসারজনিত রোগে ভুগছিলেন অনেকদিন। সে কারণে হাসপাতালের বেডেও শুয়ে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কতক্ষণ শুয়ে থাকা যায়? তাই সময় পেলে গিটার ছুয়ে নিতেন, বাজাতেন আর গাইতেন।

দিনটি ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তখনই হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে গাইলেন তার সুর করা ‘যেখানেই সীমান্ত তোমার’ গানটি। যা তিনি উৎসর্গ করে গেয়েছিলেন রচিয়তা কাওসার আহমেদ’কে। এসময় তাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। এ গান নিয়ে তিনি বলেছিলেন- সেরকম একটি সৃষ্টি যা হাজার হাজার গানে পাওয়া যায় না।

১৯৬৮ সাল থেকে আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলসহ কয়েক হাজার প্রখ্যাত সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়কসহ বহু শিল্পী তৈরি করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে অনেকে ভালো গায়ক হয়েছেন, অনেকে হয়তো প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হতে পারেননি।

আখন্দের জীবন সংগ্রহ থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রে তার ভাই হ্যাপী আখন্দের গাওয়া ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে হ্যাপী আখন্দের একটি অ্যালবামেও এই গানটি ব্যবহৃত হয় এবং অ্যালবামটির সংগীতায়োজন করেন লাকী। অ্যালবামটির ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ ও ‘কে বাঁশি বাজায়রে’ গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী আখন্দ, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে’ ও ‘পাহাড়ি ঝর্ণা’ গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী ও লাকী দুজনে, এবং লাকী নিজে ‘নীল নীল শাড়ি পরে’ ও ‘হঠাৎ করে বাংলাদেশ’ গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম লাকী আখন্দ প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি সরগমের ব্যানারে প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হল ‘আগে যদি জানতাম’, ‘আমায় ডেকোনা’, ‘মামুনিয়া’, ‘এই নীল মনিহার’, ও ‘হৃদয় আমার’।

আখান্দের সংগীতচর্চা বন্ধ হয়ে তাঁর ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দ ১৯৮৭ সালে মারা যাওয়ার পর। তিনি প্রায় এক যুগ পরে ১৯৯৮ সালে পরিচয় কবে হবে ও বিতৃষ্ণা জীবনে আমার অ্যালবামের সংগীতায়োজনের মাধ্যমে গানের ভুবনে ফিরে আসেন। পরিচয় কবে হবে ছিল তাঁর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম এবং হ্যাপী আখন্দের একক অ্যালবামের রিমেক। বিতৃষ্ণা জীবনে আমার ছিল ব্যান্ড ও আধুনিক গানের মিশ্র অ্যালবাম। এতে সেসময়ের ছয়জন জনপ্রিয় গায়ক, মাহফুজ আনাম জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, ও সামিনা চৌধুরী কণ্ঠ দেন। একই বছর তিনি আনন্দ চোখ নামে একটি দ্বৈত অ্যালবাম প্রকাশ করে। গোলাম মোরশেদের গীতে এবং আখান্দের সংগীতায়োজনে অ্যালবামটি প্রকাশ করে সাউন্ডটেক। পরের বছর আখন্দ সামিনা চৌধুরীর একক অ্যালবাম আমায় ডেকোনার সংগীতায়োজন করেন। এছাড়া তিনি ব্যান্ডদল আর্কের ‘হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা’ গানের সুর করেন। ২০০০ সালের পর তিনি আরেকটি মিশ্র অ্যালবাম তোমার অরণ্যের সুর ও সংগীতায়োজন করে। এতে লাকী আখান্দের কণ্ঠে গাওয়া ৩টি গানসহ বাপ্পা মজুমদার, ফাহমিদা নবী, ও নিপুর কণ্ঠে ১০টি গান ছিল। তিনি এই অ্যালবামে সমকালীন তাল, লোক গানের তাল ও তার প্রিয় স্পেনীয় গানের তাল ব্যবহার করেন।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে লাকী আখন্দের। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল তার। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পর দফায় দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কখনো অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আবার কখনো বা অবনতি হয়।

পরে মাস দুয়েক আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক নেজামুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আরমানীটোলা বাসায় মারা যান এ প্রখ্যাত শিল্পী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর দীর্ঘদিন ফুসফুসে ক্যানসারজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।

এমসি/সি

লাকী আখন্দ আর নেই

গেল সপ্তাহে সুস্থ হয়ে ফেরেন লাকী আখন্দ

লাকী আখন্দের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh