• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

ভিউ দিয়ে শিল্পীর মান বিচার করা যায় না: স্বীকৃতি

  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:৩৬
শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি

দেশীয় সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে একজন শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি। দীর্ঘ ২২ বছরের সংগীত ক্যারিয়ারে ৮টি একক অ্যালবাম ও ৫০টির বেশি মিশ্র অ্যালবামে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও প্রায় সাড়ে পাঁচশর বেশি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। সংগীতের দীর্ঘ দিনের পথ চলায় জীবন নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে মরণব্যধি ক্যানসারের সঙ্গে। এই সময়ে সংগীত থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর পুরোদমে কাজ শুরুর আগেই হানা দেয় করোনাভাইরাস। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে ফেরায় ধীরে ধীরে আবার নিয়মিত হতে দেখা যাচ্ছে কোকিলা সুরের এই গায়িকাকে। সম্প্রতি আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় তার-

দীর্ঘদিন পর সংগীতে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে আপনাকে...

১৯৮৮ সাল থেকে সংগীতে যাত্রা শুরু করি। বেশ ভালোই সময় যাচ্ছিলো। ২০১৫ এর আগস্টে ক্যানসার ধরা পরায় প্রায় তিন বছর নিজের চিকিৎসা নিতে হয়। এই সময় গানে নিয়মিত থাকতে পারিনি। তবে আল্লাহর কাছে চাওয়া ছিল সুস্থ হয়ে যেন আবার গানে ফিরতে পারি। ২০১৮ সালে যখন ডাক্তার বলল এখন থেকে ঝুঁকিমুক্ত আপনি, তারপর আবার ধীরে ধীরে গানে ফিরতে থাকি। সে বছরের শেষ দিকে এবং ২০১৯ সালের শুরুতে ইপি অ্যালবামের কাজ শুরু করি। কয়েকটা গান প্রকাশ হয়। এরপর ২০২০ সালে কাজ দিয়ে নতুন বছর শুরু করলেও করোনাভাইরাসের জন্য সবই আটকে যায়। তারপরও ওই বছর বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সাত আটটি গান প্রকাশ হয়। আবার কয়েকটি গানের রেকর্ডিংও হয়েছে। আর এখন তো করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, বাইরে বের হচ্ছি কাজ করছি।

লকডাউনে কিভাবে সময় কেটেছে?

করোনাভাইরাসের সময় সবাইকে ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে। সেদিক থেকে সবার মতো আমারও ঘরবন্দি সময় কেটেছে। এই সময়ে সংগীত সম্পৃক্ত বিভিন্ন কাজে অনলাইনে যুক্ত হয়ে কাজ করেছি। লাইভে গান করেছি, গান নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছি। গানের চর্চা তো ছিলোই। এর বাইরে ভালো লাগা থেকে লেখালেখি ও বরাবরের মতো সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ততা পার করেছি। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিকে ফেরার মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরান ঢাকায় গানের মিউজিক ভিডিও’র শুটিং করেছি, যা পরবর্তীতে সংগীতা থেকে প্রকাশ হয়েছে। সব মিলিয়ে লকডাউনে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

ক্যারিয়ারের শুরুর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

আমার শুরুটা ছিল সংগ্রামের। তবে সেই সংগ্রাম খুব উপভোগ করেছি। কখনো কষ্ট হিসেবে নেইনি। ইয়াং মেয়ে, কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা অনেক কষ্টের হলেও বেশ ভালো লাগত। কাজের জন্য ঘোরাঘুরি করার সুযোগ পেতাম। সেই সময়ের সঙ্গে যদি বর্তমান সময় তুলনা করি তাহলে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকটা এখন আমার কাছে সোনালী অতীত বলে মনে হয়। তখন অনেক কষ্ট করলেও সেই সময়ের ভালো লাগা ছিল নির্মূল আনন্দ।

তিন বছরের অনুপস্থিতি নিয়ে কখনো কিছু ভাবেন?

২০১৫-এর আগস্ট থেকে প্রায় তিন বছর কাজ করা হয়নি আমার। এই সময়ের মধ্যে দু-একটা রেকর্ডিং ছাড়া কিছুই করিনি। ছটকু আহমেদ পরিচালিত একটি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছি আর মাঝে মাঝে টেলিভিশনে গান করেছি। অসুস্থতার জন্য মাঝের এই বিরতিকে কখনো বিরতি মনে হয়না আমার। কিছু হারিয়েছি বলেও মনে হয় না। আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেছেন, এখনো সুস্থ আছি সে জন্য লাখো লাখো শুকরিয়া জানাই আল্লাহর কাছে। দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পরও আমার কণ্ঠ ঠিক আছে। একজন সংগীত শিল্পীর কাছে তার কণ্ঠই প্রথম অলংকার, আল্লাহ আমার সুর ভালো রেখেছেন। এটাই যথেষ্ট।

অনেকে এখন ইউটিউবমুখি হচ্ছে...

ইউটিউবমুখি হওয়ায় খারাপ কিছু দেখছি না। এতে সহজেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানো যায়। শ্রোতাদের ভালোবাসা পাওয়া যায়। কেউ ব্যক্তিগত চ্যানেলের মাধ্যমে ইউটিউবে গান প্রকাশ করছে আবার কেউ সংগীত কোম্পানির চ্যানেলের মাধ্যমে গান প্রকাশ করছে। এখন তো আর সেই আগের টেপ রেকর্ডার বা সিডির যুগ নেই তাই শ্রোতাদের ও ভক্ত-অনুরাগীদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে ইউটিউব ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। আবার নতুনদের মধ্যে অনেকে এখান থেকে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।

ভিউ দিয়ে আলোচনায় উঠে আসা, কিভাবে দেখছেন?

আমি সবসময় মনে করি শ্রোতা এবং ভিউয়ার্সের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। শ্রোতা গান শুনে গানের কথা ও শিল্পীকে বিচার করেন। একজন ভিউয়ার্স তো শিল্পীর গানের কথার অর্থ বা শিল্পীকে সঠিকভাবে বিচার করতে পারে না। তিনি কেবল ফেসবুক-ইউটিউবে গানের ভিডিও দেখছেন। রুচি অনুযায়ী ভিডিও পেল আর দেখা শুরু করল। তিনি কিন্তু গানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না, গানে কী বলা হচ্ছে বা বোঝানো হচ্ছে এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই তার। গানের ভিডিওর দৃশ্য ভালো লেগেছে তাই বারবার দেখছেন। ভিউ বেড়ে যাচ্ছে। অনেক গুণী শিল্পীদের গানের ভিডিওতে ভিউ খুব সামান্য দেখা যায়, অথচ তাদের গান শ্রোতাদের মুখে মুখে। আবার এমন কিছু গান রয়েছে যার ভিউ লাখ লাখ, সেসব গান বাইরে কারও মুখে খুব একটা শোনা যায়না। তাহলে কি ভিউ দিয়ে শিল্পীর মান বিচার করা যায়; যায় না?

তাদের ভবিষ্যৎ?

খুব সহজ করে বলা যেতে পারে ভিউ দিয়ে কথিত শিল্পী বনে যাওয়া ব্যক্তিদের অস্তিত্ব শুধু সোশ্যাল মিডিয়া আর ইউটিউবে। তাদের লাইভ প্রোগ্রামে দেখা যায় না। তারা সাময়িক সময়ের জন্য আলোচনায় থাকেন। এদিকে যারা আসলেই শিল্পী তাদের ভিউয়ার্সের প্রয়োজন হয় না। রেকর্ডিং বা লাইভ প্রোগ্রাম সবখানেই তারা ভালো করেন। তারা ভালো অবস্থানে জায়গা করে নেন।

বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলেন...

কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে। কাজকে সবসময় ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন গানে ভয়েস দিচ্ছি, বাসা থেকে স্টুডিও, কখনো শুটিংয়ের জন্য বাইরে যাওয়া- এসব নিয়েই ব্যস্ততা। এছাড়া টেলিভিশনে গান করার পাশাপাশি প্লেব্যাকেও কণ্ঠ দিচ্ছি।

নবীন প্রজন্মের জন্য কোনো পরামর্শ?

প্রথমেই বলব গানের সাধারণ বিষয়গুলো জেনে তারপর এ জগতে আসুন। এখনো আমরা শিখছি। শেখার শেষ নেই। গান করতে হলে গুরুর (শিক্ষক) কাছ থেকে গান শিখতে হবে। নিয়মিত চর্চা তো আছেই। এছাড়াও বিভিন্ন রিয়েলিটি শো-এ নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। এতে করে অন্তত নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো জানা সহজ হবে। রিয়েলিটি শো-এ গুণী সংগীতজ্ঞরা বিচারিক কাজ করে থাকেন। এর থেকে আর বড় কোনো সুযোগ হয় না।

এসআর/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে সোহেল রানা
গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ : মৃত্যু বেড়ে ১২
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ
X
Fresh