বাংলা সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র বুলবুলকে হারানোর দুই বছর
দুই বছর আগে এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা সংগীতের অন্যতম গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি ৬৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আফতাবনগরের বাসায় মারা যান তিনি। আজ শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) গুণী এই শিল্পীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। সংগীতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের চলে যাওয়ার দিনটিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্মৃতিচারণ করছেন অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীরা।
অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের এই স্রষ্টা ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত গান করেছেন। ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে গীত রচনা ও পরিচালনা করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বেলাল আহেমদ পরিচালিত ‘নয়নের আলো’ এই চলচ্চিত্রে তার লেখা ‘আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে।
একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন এই কিংবদন্তি। তাই তো স্বাধীনভাবে তৈরি করেছেন অসংখ্য গানের অ্যালবাম। দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কনক চাঁপা, সৈয়দ আব্দুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, মাহফুজ আনাম জেমস, খালিদ হাসান মিলু, খান আসিফুর রহমান আগুন ও মনির খানসহ প্রায় সকল জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী।
২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রেমের তাজমহল’ চলচ্চিত্রের জন্য প্রথমবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে ২৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে দ্বিতীয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়াও বাংলা সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক অর্জন করেন তিনি। দেশের মানুষের মনে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন সংগীতের এই কিংবদন্তী।
জনপ্রিয় এই শিল্পীর উল্লেখযোগ্য কিছু গানের তালিকা হলো- ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’, ‘একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না’, ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়, হাজার বছর আগেও বুঝি ছিল পরিচয়’, ‘ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ’, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘স্বামী আর স্ত্রী বানায় যে জন মিস্ত্রি’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়’, ‘তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ’, ‘ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী’, ‘আমার হৃদয় একটা আয়না’, ‘বিধি তুমি বলে দাও আমি কার’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন, যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন’, ‘উত্তরে ভয়ঙ্কর জঙ্গল দক্ষিণে না যাওয়াই মঙ্গল’, ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘ওগো সাথি আমার তুমি কেন চলে যাও’, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল নাকি তোমার মন’, ‘নদী চায় চলতে, তারা যায় জ্বলতে’, ‘শেষ ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে আবার কেন পিছু ডাকো’, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার’, ‘আট আনার জীবন’, ‘বুকটা আমার ভাঙা বাড়ি’, ‘আম্মা ভিক্ষা দেন নইলে ভিক্ষা নেন’, ‘মাগো আর নয় চুপি চুপি আসা’, ‘সালাম বাংলাদেশ’, ‘জাগো বাংলাদেশ জাগো’, ‘জীর্ণ দেহের এক বৃদ্ধা নারী’, ‘I am a war child’, ‘পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা’, ‘আমার দুই চোখে দুই নদী’, ‘আমি জায়গা কিনবো।’
এসআর/পি
মন্তব্য করুন