• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শেয়ারবাজারের মোড় ঘুরছে

মিথুন চৌধুরী

  ১১ মার্চ ২০১৭, ১৫:৫৫

শেয়ারবাজারের মোড় ঘুরতে শুরু করছে। বিনিয়োগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে লেনদেন। ফলে বাড়ছে সূচক। বাজার উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে নানামুখী উদ্যোগ। পরিবর্তন এসেছে নেতৃত্বে। ২-৩টি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া শেয়ারবাজারে বড় তেমন কোনো ঘটনা ঘটছে না বললেই চলে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আলো সঞ্চার হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) যর্থাথ মনিটরিং এবং ডিএসই-সিএসই সহযোগীতায় বাজার ঊর্দ্ধমূখী হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

গেলো ৭ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত শেয়ারবাজারে সুবাতাস দেখে জানিয়েছেন, আগে বাজেটের বেশিরভাগ টাকা আসতো বিদেশ থেকে। তবে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগের বড় অংশ আসবে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এরই মধ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আইপিওর বুক বিল্ডিং আইন ফের সংশোধনের পরিকল্পনা করছে বিএসইসি। নতুন পরিকল্পনায় শেয়ারের দর নির্ধারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ২ শতাংশ শেয়ার ক্রয়ের জন্য দরপ্রস্তাব করতে পারবেন। আইপিওর আকার বড় হলে এ হার ১ শতাংশও করা হতে পারে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার কিনতে দরপ্রস্তাব করতে পারে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুবিধার কথা চিন্তা করে বুক বিল্ডিং আইন সংশোধন করার কথা জানান সংস্থার কর্তারা।

আসছে ১৪ মার্চ পুঁজিবাজার উন্নয়নে নানা ইস্যু নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএসইসি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হবে। সভায় ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি আইন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ বাংলাকরণের বিষয়ে আলোচনা হবে।

গেলো ২৪ ফেব্রুয়ারি সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করায় ১৪ প্রতিষ্ঠান এবং ৮ জন শেয়ার ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেছে বিএসইসি।পাশাপাশি ২ সিকিউরিটিজ হাউজকে জরিমানা করা হয়। ফলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝেও দেখা গেছে সতর্কতা।

শেয়ারবাজারের নেতৃত্বেও এসেছে পরিবর্তন। গেলো ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম। আর ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক কূটনীতিক ড. একে আব্দুল মোমেন।

এছাড়া ডিএসই ও সিএসই পরিচালনা পরিষদের জন্য নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক পর্ষদ অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এতে মালিকানা থেকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা আলাদাকরণ পরবর্তী পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, এফবিসিসিআই’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আবুল হাসেম, সাবেক সচিব ওয়ালিউল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মনসুর, আশরাফ খান ও ড. মো. মাসুদুর রহমান।

অপর পুঁজিবাজার সিএসই’র ৭ পরিচালক হলেন ড. একে আব্দুল মোমেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শামীম চৌধুরী, প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম, ড. মইনুল ইসলাম মাহমুদ, প্রফেসর এসএম সালামত উল্লাহ ভূঁইয়া ও প্রদীপ পাল।

গেলো সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৪ দিনই সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ফলে স্বস্তি ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৪ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে ০.২৩ শতাংশ। সাপ্তাহিক ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪.৮৭ পয়েন্ট বা ১.৫২ শতাংশ বেড়েছে।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ’র (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসইএক্স বেড়েছে ১৬০.৯৩ পয়েন্ট বা ১.৫৩ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ৩০৯ কোটি ৮৫ লাখ ১৪ হাজার ৭৩৪ টাকার শেয়ার।

২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবার কথা জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। যা শিগগির বাজারে ছাড়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি এবং সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত উন্নয়ন মেলায় শেয়ারবাজার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়।

২০১৬ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দাবস্থা বিরাজ করলেও শেয়ারবাজার ছিল ইতিবাচক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোতে লেনদেন বৃদ্ধির সঙ্গে টাকার পরিমাণ বেশ বাড়ে। পুরো বছরে ৩৪,৯১২ মিলিয়ন সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়, যার মুল্য টাকায় ১,১৯১,৫৭১ মিলিয়ন৷ বছরে লেনদেন হয় মোট ২৪১ দিন৷ গড়ে সিকিউরিটিজ লেনদেন হয় ১৪৪.৮৬ মিলিয়ন ডলার। আর টাকায় গড়ে লেনদেন হয় ৪,৯৪৪ মিলিয়ন৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জোরদার মনিটরিং করলে শেয়ারবাজার আরো উদ্ভাসিত হবে। আগের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বিনিয়োগকারীদের মাঝে এখন শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা এসেছে। নতুন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হচ্ছে। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • এডিটর'স চয়েস এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh