• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

'লজিস্টিক ব্যবসায় প্রবেশের জন্য ই-কমার্স বিশাল দরজা খুলে দিয়েছে'

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৩ মার্চ ২০২০, ২০:০৪

লজিস্টিক হাজার বছরের পুরনো একটি শিল্প। উৎপাদনশীল ব্যবসা থেকে শুরু করে ই – কমার্স ও প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এই সেবার প্রসার পৃথিবীব্যাপী বাড়ছে। পেপারফ্লাই বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ওয়ান স্টপ লজিস্টিক সলিউশন সরবরাহকারী সংস্থা। ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে অপারেশন শুরু করার পর, থার্ড পার্টি লজিস্টিক সাপোর্ট হিসেবে ই-কমার্স সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। লজিস্টিক সার্ভিসে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) রাহাত আহমেদ।


আরটিভি অনলাইন: কোন কোন ব্যবসায় লজিস্টিক সাপোর্টের প্রয়োজন পড়ে?

যে কোন উৎপাদনশীল ব্যবসার ক্ষেত্রে, যেখানে পণ্য সামগ্রী সংযুক্ত রয়েছে, সরবরাহ প্রক্রিয়া সেক্ষেত্রে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে। উৎপাদন কারখানা থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউটর এবং খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌছানো পর্যন্ত পণ্য সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, মোবাইল হ্যন্ডসেট, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে যাই হোক না কেন, বাজারজাতকরণে সরবরাহ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বিশাল ভূমিকা পালণ করে থাকে।

ই-কমার্সের সূচনালগ্ন থেকে সরবরাহ প্রক্রিয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেহেতু গ্রাহকরা আশা করেন যে, তাদের অর্ডারগুলো বাড়ীতে পৌছে দেয়া হবে। ই – কমার্স ব্যবসায় সবচেয়ে ক্রিটিকাল বা গুরুতর বিষয় হচ্ছে সাপ্লাই চেইন ও লজিস্টিকস, কারণ ওয়েবসাইট বা মার্কেট প্লেসে একটি অর্ডার দেয়ার পর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এসে পরে লজিস্টিক বা সরবরাহকারীর উপর, যার ভেতর রয়েছে পিকআপ, ফুলফিমেন্ট, হোম ডেলিভারি, ক্যাশ কালেকশন ও মার্চেন্টকে পণ্যের বিক্রয়মূল্য পৌছে দেয়া। একটি অর্ডার পাবার পরই কেবল সেবাটি সম্পন্ন হয়ে ওঠেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত পণ্যটি গ্রহকের হাতে না পৌছে দেয়া হয়।

আরটিভি অনলাইন: বাংলাদেশে এ ধরণের ব্যবসা করতে কি কি চ্যালেঞ্জ নিতে হয় বা সম্মুখীন হতে হয়?

লজিস্টিকস হাজার বছরের পুরানো শিল্প, প্রযুক্তি এবং ইকমার্সের উত্থানের সাথে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে। গ্রাহকরা এবং পণ্য বিক্রেতারা উভয়ই সুলভ মূল্যে পণ্য সামগ্রীর দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে চান এবং একটি দক্ষ ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে তাদের সরবরাহকৃত পণ্যের আপডেট পেতে চান। বাংলাদেশে আমাদের প্রতিবেশী দেশ চীন, ভারত বা ভিয়েতনামের তুলনায় প্রচলিত লজিস্টিক সিস্টেম এতটা বিকশিত হয়নি। এটার কারণ মূলত অটোমেশন, পেশাদারিত্ব এবং নতুনত্বের অভাব, যা উন্নতকরণের মাধ্যমে সরবরাহ সেবার ব্যয় সংকোচন করে ই-কমার্সে গ্রাহকদের আরও ভালো অভিজ্ঞতা দিতে পারবে। মূলত, বিনিয়োগ এবং দক্ষ মানবসম্পদ এই ব্যবসায়ের মূল চ্যালেঞ্জ। ব্যাংকগুলো যদি আরও সহজ সর্তে লজিস্টিক সেবা খাতে ঋন প্রদান করে, তবে সেবার মান আরও উন্নতিকরনের মাধ্যমে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরটিভি অনলাইন: তরুণরা কেন এ ব্যবসায় আসবে?

লজিস্টিক ব্যবসায় প্রবেশের জন্য ই-কমার্স একটি বিশাল দরজা খুলে দিয়েছে। সাধারণত উন্নত দেশগুলিতে ই-কমার্স খুচরা বাজারের প্রায় ২০% শেয়ার রাখে। বাংলাদেশে যা মাত্র ১%, আমাদের দেশের মত একটি জনবহুল দেশে যা অত্যন্ত কম ও এই ব্যবসার একটি অনন্য সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, অল্প পুঁজি ও বিদ্যমান অবকাঠামো যেমন পেপারফ্লাইয়ের সহায়তা নিয়েই তরুণ উদ্যোক্তারা ছোট ছোট লজিস্টিক ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে একটি সফল জীবিকা অর্জনের পথ খুঁজে নিতে পারে।

আরটিভি অনলাইন: কতটা সম্ভাবনাময় এ ব্যবসা?

ই-কমার্স বাংলাদেশে আগামী ৫ বছরে একটি বিশাল শিল্পে পরিণত হবে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ই-কমার্স ব্রান্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে, কয়েকটি ব্রান্ড নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের বাজার পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাংলাদেশের বাজারে তাদের প্রবেশ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেহেতু ই-কমার্স পণ্যের দামের সুবিধা এবং পণ্য ক্রয়ে সময়ের সুবিধা উভয়ই দিয়ে থাকে, সেহেতু গ্রাহকরা এই সেবার প্রতি ব্যাপকভাবে আগ্রহী হচ্ছেন এবং প্রতিদিনই ই-কমার্সের মাধ্যমে ক্রয় – বিক্রয় বাড়ছে। এই লেনদেন গুলো সম্পন্ন করতে আরও বেশি লজিস্টিক সহায়তার প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ১% দৈনিক অর্ডার দিলে, প্রতিদিন অর্ডারের সংখ্যা ৯ লক্ষ এর কাছাকাছি হবে (উল্লেখ যে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৯০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে), যা আমাদের সরবরাহ বাজারের জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনা।

আরটিভি অনলাইন: পেপার ফ্লাই কেন অন্য কোম্পানী থেকে আলাদা?

ই-কমার্স লজিস্টিকস সলিউশন সরবরাহকারী হিসাবে ২০১৬ সালে পেপারফ্লাই তার যাত্রা শুরু করে এবং কভারেজ, অর্ডার হ্যান্ডলিং এবং টেক অটোমেশনের ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় ইকমার্স লজিস্টিকস ও পরিপূরণ সংস্থা। পেপারফ্লাইয়ের এখন পর্যন্ত সর্বাধিক হোম ডেলিভারি কভারেজ রয়েছে যা প্রায় ৬৪ টি জেলা, ৪৫৫৪ টি ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল জুড়ে রয়েছে যা বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র জনসংখ্যাকে কভার করে। এর ১০০০ এর বেশি স্থায়ী কর্মচারী পেপারফ্লাইকে গ্রামীণ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে এবং ই-কমার্স অভিজ্ঞতার আওতায় এনে সরাসরি বাংলাদেশের ই-কমার্স বৃদ্ধিতে সক্ষম করছে।

২০১৯ সালে পেপারফ্লাই দেশজুড়ে ৮০ টি ডেলিভারি পয়েন্ট অফিস স্থাপন করেছে এবং ২০২০ এর মধ্যে মোট ২০০ পয়েন্ট স্থাপন করবে। বর্তমানে সংস্থাটি দেশব্যাপী প্রায় ১০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

পেপারফ্লাই একটি স্বয়ংক্রিয়, প্রযুক্তি সক্ষম এবং এন্ড-টু-এন্ড লজিস্টিকস পরিকাঠামো যা একটি ক্লিন স্টেট অফ ইনহাউজ ট্র্যাকিং সিস্টেম “পেপারফ্লাই উইংস” এর সহায়তায় স্বল্প ব্যয় এবং দ্রুত ডেলিভারি প্রদানের মাধ্যমে বিক্রেতাদের একটি উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে। যা সম্পূর্ণ কার্যক্রমের জন্য একটি একক পয়েন্ট ইন্টারফেস হিসাবে কাজ করে।

বর্তমানে পেপারফ্লাই দেশের শীর্ষস্থানীয় সমস্ত ইকমার্স ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ দারাজ (Daraz), বিক্রয়.কম (bikroy.com), বাগডুম, আজকের ডিল, রবি, সাজগোজ, বাংলাশপার্স, স্টাইলাইন এর পিক-আপ, ফুল-ফিলমেন্ট, গুদামজাতকরণ, দেশব্যাপী হোম ডেলিভারি, নগদ সংগ্রহ, রিটার্ন / রিপ্লেসমেন্ট / রিফান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং ডোরস্টেপ মার্কেটিং সয়ংক্রিয় এর মতো পরিষেবা সরবরাহ করে।

আরটিভি অনলাইন: আপনার সামগ্রিক ক্যারিয়ার বিবেচনায় তরুণদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?

লজিস্টিকস-এ কাজ করা তরুণদের জন্য সত্যিই আকর্ষণীয় হতে পারে কারন এ খাতে কাজ করা একজন তরুণকে অনেক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। যারা পার্ট টাইম বা ফুলটাইম হিসাবে কাজ করে তারা বেশ ভালই বেতন অর্জন করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেশজুড়ে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুবিধা দিয়ে থাকি। যেহেতু আমাদের প্রত্যেক জেলায় লোকের প্রয়োজন হয় তাই আমরা তাদের স্থানীয়ভাবে নিয়োগ করে থাকি। পেপারফ্লাইয়ে চাকরী পাওয়ার জন্য কাউকেই তার নিজ জেলা থেকে স্থানান্তরিত হতে হয় না। পড়াশুনার পাশাপাশি কেউ সহজেই পার্টটাইম বা ফুলটাইম ডেলিভারি চাকরিতে জড়িত হতে পারে যা বিশ্বজুড়ে খুব সাধারণ হয়ে উঠছে ই-কমার্সের উত্থানের কারণে।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • সংবাদ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh